Saturday, October 4, 2008

হরলিক্সে ভাইরাস!! সাবধান.....

ভয় পেয়েছেন? ভয় পাওয়ারই বিষয়। তবে নিশ্চিত থাকুন এ ভাইরাস হরলিক্সের বোতলে নয়। টেলিভিশনে হরলিক্সের অ্যাডে। ইদানিং হরলিক্সের ভারতীয় এডের বাংলা ভার্সন বাংলাদেশের সব চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে। এখানেই আমার অত্যাধুনিক ভাইরাস স্ক্যানার "সততার আলো ১.০ B" একটা ভাইরাস পেয়েছে।

অ্যাডভারটাইজের কনটেন্ট:
" প্রথমেই একটা ছোট্ট মেয়েকে তার মা বলছে,"তুমি কি জান দুধ কোথায় গেল?" মেয়েটি খুবই সুন্দর করে ভালমানুষিভাবে উত্তর দিল" আমি তো দেখিনি।"
------আসলে মেয়েটিই দুধগুলো সরিয়েছে আর এখন সে মিথ্যা দিয়ে তা ঢাকার চেষ্টা করছে।

পরে দেখাল যে অনেকগুলো ছোট্ট ছেলেমেয়ে যেখান থেকে পারছে সেখান থেকে দুধ চুরি করে আনছে। শেষে দেখাল একটা ছেলে তাদের গরুটা হাত দিয়ে ধরে তার মাকে বলছে" ইদানিং গরুর দুধ কম পড়ছে, তাই না মা?"
----এখানেও নিজে দুধ চুরি করে মাকে মিথ্যা বুঝানো হচ্ছে।

আর এ অ্যাডের মুল গানই হল, যেখানে দুধ পাও যেভাবে হোক নিয়ে এস, আর হরলিক্সের মন মাতানো মিল্কশেক বানিয়ে খাও।

পাঠককুল নিশ্চয় অ্যাডটা দেখেছেন, আর নিশ্চয় বুঝতে পারছেন ভাইরাসটি কি? তা হল মিথ্যা। এ অ্যাডভারটাইজে মিথ্যার ব্যাবহারকে কে ছোটদের মাঝে উৎসাহিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভাইরাসটির কার্যকারীতা:
১. শিশুরা সহজেই যে কোন শিক্ষা গ্রহন করে। আজ আমরা যদি তাকে সত্য বলার শিক্ষা দেই তবে সে সারাজীবন সত্য বলবে আর যদি মিথ্যা বলা শিখাই তাও সারাজীবন প্র্যাকটিস করে যাবে যদি না সে খুব কনফিডেন্ট না হয়।

২. শিশুরা টিভি দেখে খুব প্রভাবিত হয়। তারা এই অ্যাড দেখে একবার হলেও নিজেরা প্রাকটিস করতে চেষ্টা করবেই। যেমনটি আমি করতাম। আমি একবার তো ম্যাকগাইভার হতে গিয়ে হাত ভেঙেছলাম।

৩. সবচাইতে বড় কথা অ্যাডটা খুবই দৃষ্টিনন্দন। যার প্রভাব অবশ্যই পড়বে। তাছাড়া এটা প্রায় সারাদিনই প্রচারিত হচ্ছে দেশি বিদেশি সব চ্যানেলে এমনকি শিশুদের প্রিয় চ্যানেল কার্টুন নেটওয়ার্কেও।


শিশুদের প্রতি এই অ্যাডের শিক্ষা:
১. মিল্কশেক খাওয়া খুবই মজার। তাই তোমরা এটি খেতে থাক।
২. মিল্কশেক খাওয়ার জন্য দুধ চুরি কর।
৩. চুরি করে বাচার জন্য মিথ্যা বল।
৪. নিজের প্রয়োজন মেটাও যে করে হোক।
৫. শিশুদের স্বার্থপর হতে বলছে।
৬. চুরিতে অনেক অ্যাডভেন্চার রয়েছে।
৭. মিথ্যা বলার অনেক আর্ট আছে।

ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের লক্ষন:
১. রান্নাঘরে বারবার আসা যাওয়া।
২. বাবা মাকে হরলিক্স কিনে দেবার জন্য বায়না ধরা।
৩. ফ্রিজ থেকে দুধ গায়েব হওয়া।
ইত্যাদি।

আক্রান্তদের সমস্যা:
১. আজ সে চুরি করে মিথ্যা বলে জিহ্বার সুখের জন্য মিল্কশেক খাচ্ছে।
২. পরে ভাল রেজাল্ট করার আশায় পরীক্ষায় নকল করবে।
৩. আগামীতে টাকার লোভে দুর্ণীতি করবে।
৪. বাংলাদেশ ৬ষ্ঠবারের মত দুর্ণিতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করবে।

এ ভাইরাসের প্রভাবে সমাজের কি ক্ষতি হতে পারে?
১. আগামী প্রজন্ম এক মিথ্যুক জাতিতে পরিণত হওয়া।
২. দুর্ণীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সাফল্য অর্জনের আশংকা।
৩. সত্য কথা ইতিহাসে পরিণত হওয়া।
৪. সম্পুর্ন এক বিশৃংখল সমাজ প্রতিষ্ঠা। ইত্যাদি।

আমাদের প্রাপ্তি:
"একটি হরলিক্সের সাথে একটি মিল্কশেক ফ্রি, ফ্রি,ফ্রি।"

সব কিছু নিয়ে, ভাইরাসটি আমাদের কি দিবে বুঝতে পেরেছেন?

আপনাদের মত কি? এ ব্যাপারে?

No comments: