Saturday, October 4, 2008

এক ভিক্ষুকের কাছে ভিক্ষা করা লজ্জার, দুর্নীতিবাজের কাছে দুর্নীতি কি হওয়া উচিত?


ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোর মধ্যে গুলশান অন্যতম। সেখানে গেলে দেশের ধনী সমাজের মধ্য আকৃতির অভিজাত বাড়িগুলো কারো নজর এড়ায় না। সারাদিনই এখানে এক অভিজাত সুনসান নিরবতা বিরাজ করে। আর কিছু নিরাপত্তা কর্মী ও মাঝেমাঝে শ্রমজীবী মানুষের দ্রুত পথচলাও চোখে পড়ে।

এরি মাঝে হঠাৎই চোখে পড়ে গেল একটি অমানানসই Human Being। প্রাণীটি যখন চোখে পড়ল তখন এর গায়ে লজ্জা নিবারনে ব্যস্ত একটি গামছা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। বুঝতেই পারছেন এটি আপনাদের মত না হলেও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে একটি মানুষ।

মানুষটির বয়স আনুমানিক আশি। চোখে হাই পাওয়ারের লেন্সওলা চশমা। চশমার ফ্রেমের একপাশে একটা লেন্স আছে বটে তবে অপরটি নেই। ফ্রেমের দুইপাশে কালো সুতা দিয়ে কানের সাথে লাগিয়ে রাখা হয়েছে।লোকটি গুলশান লেকের পাশে ফুটপাতে বসে সরিষার তেল মাখছিল। দেখে খুব সহজেই অনুমান করা গেল লোক কিছুক্ষন আগেই লেকের বহুল আলোচিত দূষিত পানিতে গোছল করে উঠেছে। এখন নোংরা পানির কামড় থেকে বাঁচতে দুর্মুল্যের এই সময়ে অতি কষ্টে আয় করা সামান্য টাকা দিয়ে কেনা তেল শরীরে ভাল কে শরীরে লেপে নিচ্ছে।
নাম জানা গেল মোহাম্মদ সাহেব আলি। বর্তমান পেশা ভিক্ষা। গ্রামের বাড়ি শেরপুর। গ্রামের বাড়িতে জমিজমা বলতে তেমন কিছুই নেই। থাকার মাঝে শুধু একটা ভিটা আছে যদিও কিন্তু তা নিয়েও চলছে গ্রামের জঘন্য রাজনীতি তথা মোকদ্দমা। ছেলে দুইজনই শ্বশুর বাড়িতে থাকে।

বছর দুই আগে পেট চালানো আর জমির মোকদ্দমা চালানোর জন্য ঢাকায় আসা হয়েছে তার। মহাখালীর আমতলী মসজিদে থাকে আর আশপাশের এলাকায় ভিক্ষা করে। মসজিদের কাজ চলছে বলে গোছল করার জন্যে এই লেকে নামতে হয়েছে।

বার্ধক্যজনিত কারনে সাহেব আলী কানে বেশী শোনে না। চোখে একটা লেন্স দিয়ে কোনমতে দেখতে পায়। কম বয়সেই এতিম সাহেব আলী বড় ভাইয়ের চক্রান্তে হারিয়েছে পাওনা সম্পত্তি আর ছোট্ট ভিটাটিও এখন আত্নিয়দের বদনজরে পড়ে যওয়ায় সে হারাতে বসেছে। তার পেশা ছিল Seasonal গাছের দালালী। যা আয় হতো তাতে কোনমতে তার ও তার পরিবারের চলে যেত। কাল হয়ে দাড়ালো এক দূর্ঘটনা। ত্রিশ বছর আগে হঠাৎ গাছের নিচে পড়ে তার মেরুদন্ডে আর বুকের ডায়াফ্রামে মারাত্নক আঘাত পায় সাহেব আলী। এরপর থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে ও কাজ করার ক্ষমতা হারায়। ছেলেরা হয়ে যায় পর। ভিক্ষা হয় পেশা।

তবে ভিক্ষা করতে চায় না সে। "ভিক্ষা তো জায়েজ না, দায়ে পইরা করতাছি", ভিক্ষার প্রতি তার এই ক্ষোভ অজান্তেই বেরিয়ে আসে মুখ দিয়ে।
সে মনেপ্রানে এই পেশার লজ্জা থেকে বেরিয়ে যেতে চায়। তার শেষ কথা ছিল "নামাজ পইরাও আল্লার কাছে কান্দকাডি করি আমি য্যান ভিক্ষা না করি।"

আমরাও চাই সে এই জিন্জর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। ভিক্ষুক সত্যিই সমাজের অপ্রিয় অংশ। তার লজ্জা পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যারা আমাদের সমাজে সামান্য বেতনে চাকরি করে ঠিকই কিন্তু বহুতল বাড়ি তৈরী করে সমাজে দম্ভিকতার সাথে বাস করছেন, তারা কি ভাবেন সমাজ তাদের আয়ের উৎস সম্বন্ধে সামান্যও আন্দাজ করতে পারে না? তাদের কি এভাবে দিনের পর দিন দুর্নীতি করতে এই ভিক্ষুকের মত সামান্যও লজ্জা হয় না? আসলেই হয়না, হলে কখনোই আমাদেরকে বাংলাদেশকে দরিদ্র দেশ বলতে হত না। একজন ভিক্ষুক না একজন দুর্নীতিবাজ সমাজের শত্রু ও অশ্রদ্ধার পাত্র হওয়া উচিত?

No comments: