Sunday, February 22, 2009

জাফর ও জয়নাল হত্যাকান্ড: খুনি হাসিনা আসলেই এরশাদের ছোট বোন

জাফর ও জয়নাল হত্যাকান্ড: খুনি হাসিনা আসলেই এরশাদের ছোট বোন

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:১৫

শেয়ার করুন: Facebook

৮৩ সাল। এরশাদ চাচ্চু ক্ষমতায়। হাসিনা আন্টি রাজনীতির মাঠকে তা দিয়ে গরম করতে আগ্রহী। ছাত্র আন্দোলন চাই। কিন্তু কি করে? ছাত্ররা আজকাল এত সহজে ক্ষেপে না। তাই লাশ দরকার। অন্তত একটা। তা অবশ্যই কোন ছাত্রের হতে হবে। তাও আবার লাশ পড়তে হবে এরশাদ সরকারের কোন বাহিনীর হাতে। নেতাদের আদেশ দেয়া হলো গোপন বৈঠকের মাধ্যমে। সিদ্ধান্ত হলো লাশ ফেলার জন্য পুলিশ ভাড়া করা হবে। যথাসময়ে এরশাদ সরকারের বিরাগভাজন আর্ম পুলিশের কমান্ডার হাফিজুর রহমানকে কেনা গেল। এখন একটা মিছিল হলেই হয়। পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করে ফেলবে পরম আনুগত্যের সাথে।

মিছিল করার দায়িত্ব পাওয়া নিরন্জন সরকার বাচ্চু, সাধন সরকার, যাদব, বিদ্যুৎ শ্যমল প্রমুখ ছাত্রলীগের নেতৃস্থানীয় ছাত্রদেরকে এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপাতে শুরু করল। ছাত্রনেতা ফজলুর রহমান চুন্নু, ডা: মোস্তাফা মহিউদ্দিন জালাল, খ ম জাহাঙ্গীর, ডাকসুর ভিপি আক্তারুজ্জামান, জি এস জিয়াউদ্দিন বাবলু, ফারুক, আনোয়ার, মিলন, জালাল প্রমুখকে মিছিল করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হলো। ঠিক হলো ফেব্রুয়ারীর ২য় সপ্তাহেই মিছিল করা হবে।

সিদ্ধান্ত মোতাবেক মিছিল শুরু হল। পরিকল্পনা অনুযায়ি মিছিল শিক্ষা ভবন পর্যন্ত যাবে, আর পথিমধ্যে শিশু একাডেমীর কাছেই পুলিশ ছাত্রহত্যা করার জন্য পূর্ন প্রস্তুত থাকবে। কিন্তু ছাত্রদের কাউকেই কলাভবনের বাইরে যাওয়ার জন্যও রাজী করানো গেলনা। পরিকল্পনা গেল ভেস্তে। হত্যা পরিকল্পনার সাথে যুক্ত ছাত্রনেতারা ক্ষুদ্ধ হয়ে অন্য ছাত্রনেতাদেরকে দোষারোপ করতে লাগল এবং বাজে আচরন করতে লাগল এমনকি শারীরিক অত্যাচারও করা হলো তৎক্ষনাত।

একবার হেরে গেলেও হাসিনা আন্টি হারতে রাজী নন। তাঁর একটাই দাবী "লাশ চাইই চাই।" আবারও মিছিলের পরিকল্পনা করা হলো। দিন ঠিক হলো ১লা ফাল্গুন। এদিন অবশ্যই কোন না কোন ছাত্রের বাবা মার কোল খালি করতেই হবে। পুলিশ কমান্ডার লস্করকে চুড়ান্ত পরিকল্পনা সম্বন্ধে অবহিত করা হলো। তাঁকে নগদ অর্থও বুঝিয়ে দেয়া হলো। সেও সম্পুর্ন প্রস্তুত বলে জানিয়ে দিল।

১লা ফাল্গুন, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। রোকেয়া হল আর শামসুন্নাহার হলের ছাত্রিরা সকাল হতে না হতেই বাসন্তি রঙ শাড়ি পড়ে পহেলা ফাল্গুনকে বরণ করে নেয়ার আয়োজন শুরু করল। চারদিকে তাদের কন্ঠ থেকে ভেসে আসতে লাগল "আজি এ বসন্ত " গানের সুর। আর ওদিকে ছাত্ররা মিছিলের আয়োজন করতে লাগল আর নেপথ্যে জীবন কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র। সমস্ত খবর ও নির্দেশ পুলিশ, মিছিল এবং শেখ হাসিনার ৩২ নম্বরের বাসায় আবর্তন করতে লাগল এক মোটর সাইকেল আরোহীর মাধ্যমে। বেলা দশটার দিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মিছিলের উদ্দেশ্যে ছাত্ররা জমায়েত হতে লাগল। এগারটা নাগাদ শুরু হল মিছিল। আগে থেকেই নেতৃস্থানীয় ছাত্রদেরকে জানিয়ে দেয়া হল যাতে তারা আনবিক শক্তি কমিশনের কাছে পৌছার আগেই মিছিল থেকে সরে পড়ে।

সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা অনুযায়ী মিছিল এগিয়ে যেতে থাকল এবং আনবিক কমিশনের কাছে পৌছানোর আগেই কিছু ছাত্রনেতা ও প্রধান কর্মীরা মিছিলের পেছনের দিকে সরে যায়। মিছিল এগিয়ে এল বাংলা একাডেমী পেরিয় দোয়েল চত্বরের দিকে। একেবারে দোয়েল চত্বরের কাছে এবং মিছিল যেই দোয়েল চত্বর পিছনে ফেলে পূর্বদিকে ঘুরে দাড়াল সঙ্গে সঙ্গে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা লস্করের আর্ম পুলিশ বাহিনী গুলি চালালো। মুহুর্তের মধ্যে লুটিয়ে পড়ল বেশ কিছু ছাত্র। ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে নিতে না নিতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল জয়নাল ও জাফর নামে দুই ছাত্র। ছাত্র হত্যার সফলতা সঙ্গে সঙ্গেই শেখ হাসিনার কাছে পৌছে গেল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে।

বিকাল ৩টায় ছাত্রদের আয়োজিত শোকসভায় শেখের বেটি হাসিনা জয়নাল ও জাফরের লাশ দেখে রুমাল দিয়ে চোখ মুছার অভিনয় করে, ছাত্রদের কোনরকম আন্দোলনের আভাস না দিয়েই স্থান ত্যাগ করলেন।

তিনি রাতেই যোগাযোগ করলেন জেনারেল এরশাদের সাথে। এরশাদকে তিনি ছাত্র আন্দোলন না করার আশ্বাস দিয়ে আদায় করে নিলেন ব্যক্তিগত কিছু দাবী। তারপর সবকিছু মিটমাট। পরদিন ছাত্রনেতার তাঁর সাথে দেখা করতে গেলে তাঁর কর্মচারীরা জানিয়ে দিল যে, শেখ হাসিনা খুব ভোরে একটা প্রাইভেট কার এ চড়ে কাউকে কিছু না বলেই কোথায় যেন গিয়েছেন।

শেখ হাসিনা সত্যিই এরশাদের ছোটবোন। তবে ছোট হলেও বড়ভাইকে ডিঙিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তিনি দেখিয়ে ছেড়েছেন।

তথ্যসূত্র:
"আমার ফাসী চাই"- মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ুর রহমান রেন্টু (শেখ হাসিনা কর্তৃক সস্ত্রীক অবান্চিত ঘোষিত।)

No comments: