Sunday, February 22, 2009

সামান্য সময় বাঁচানোর জন্য জীবন খোয়ানোর কোন মানে হয়না


কয়েকদিন আগে হঠাৎই পরিচিত কয়েকজন লোককে খুব দৌড়াদ্যড়ি করতে দেখলাম। ঝামেলা শেষ করে ধীর হওয়ার পর তাদের কাছ থেকে যা জানলাম তা খুবই মর্মান্তিক। তাঁরা এত দিন একটা লাশের সন্ধানে খোজাখোজি করছিলেন। লাশটি যার তিনি প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ ছিলেন। পরে চাঁদপুরে মেঘনা নদীর পাড়ে তাঁর লাশ পাওয়া যায়।

এই মর্মান্তিক মৃত্যুর কারন ছিল একটা নৌ দুর্ঘটনা। ভদ্রলোক কোন এক বিশেষ কাজে দুপুরবেলা তাঁর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। তারপর পরেরদিন যাতে অফিসে উপস্থিত হতে পারেন সে জন্যে সেদিন সন্ধ্যায় আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মেঘনা নদী দ্রুত পার হওয়ার জন্য অন্যান্য নিরাপদ নৌযান ব্যবহার না করে, সন্ধ্যায় চলাচলে নিষিদ্ধ এবং দ্রুতগামী স্পীডবোট ব্যবহার করেন। সন্ধ্যার পর নৌ দুর্ঘটনা থামাতেই স্পীডবোট চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাহোক, অত:পর যা ঘটার কথা তাই ঘটল। অর্থাৎ দুর্ঘটনা। সাথে সাথেই সকল যাত্রীই নিহত হয়। তবে স্রৌতস্বিনী মেঘনা নদীর স্রোতের টানে আলোচ্য ব্যক্তির লাশটি হারিয়ে যায়। পরে সপ্তাহ খানেক নিখোঁজ থাকার পর তাঁকে খোজাখুজি শুরু করলে তার লাশ বিক্ষত অবস্থায় চাঁদপুরে পাওয়া যায়।

ভদ্রলোকের ইচ্ছে ছিল কিছু মূল্যবান সময়কে বাচানো। অথচ তাঁকে এজন্যে তাঁর জীবনটাই মূল্য হিসেবে দিতে হল। সময় বাচানো গিয়েছে কিনা তা পাঠক নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন।

আবার আরেকজনকে জানি, তিনি ঝুকিপূর্ন ভাবে রাস্তা পার হতে গিয়ে তাঁর পা হারিয়েছিলেন। সামান্য সময় বাচানোর জন্য এবং সামান্য পরিশ্রমের ভয়ে ফুটওভার ব্রীজে চড়েননি। অথচ এখন তিনি চাইলেও আর এই পরিশ্রমটুকু কারো সাহায্য ছাড়া করতে পারেননা।

এভাবে আমরা প্রায়ই সময় বাচানোর জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ন ব্যবস্থা গ্রহন করি। যেমন, রাস্তা পার হওয়ার সময় ফুট ওভার ব্রীজ ব্যবহার না করা, হাঁটার সময় ফুটপাত ব্যবহার না করা, ঝুলে ঝুলে বাসে ভ্রমণ করা, লন্চের ছাদে করে নদী ভ্রমণ করা, ইত্যাদি। আর একারনে দুর্ঘটনার পরিমান কম হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনায় নিহতের ও আহতের ঘটনা বেড়ে চলেছে।

আসুন আমরা সামান্য সময় বাচানোর জন্য এ দুর্ঘটনা থেকে বাচার চেষ্টা করি। আর আমাদের বন্ধু বান্ধব এবং শিশুদেরকে এ ব্যাপারে সচেতন করার চেষ্টা করি।

একটি জীবনের মূল্য কয়েক মিনিট সময়ের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

No comments: