Sunday, February 22, 2009

সমাধান চাই!!

সমাধান চাই!! (১ম পর্ব)

০৮ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৩২

শেয়ার করুন: Facebook

মনে করুন চট্টগ্রাম থেকে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ঢাকা পৌছেছেন। সাথে আপনার মা, দুটা বড় ব্যাগ । বাসা হয়তো মোহাম্মদপুরে। ভ্রমণজনিত কারনে দুজনেই ক্লান্ত, তারওপর মা হয়তো বার্ধক্য জনিত কারনে অথবা অসুস্থতার কারনে অনেকটাই দুর্বল। তবে এখন বাসায় পৌছানোর জন্য আপনি কোন ব্যবস্থা গ্রহন করবেন?

যদি নিজস্ব গাড়ি না থাকে তবে উপায় দুটো হতে পারে। প্রথমত বাসে যাওয়া আর অপরটি হলো ট্যাক্সি অথবা সি এন জি অটোরিক্সা ভাড়া করে যাওয়া। বাসে যাওয়ার কথা প্রথমেই আপনাকে বাতিল করতে হবে কেননা আপনার সাথে আপনার মা আছেন এবং কয়েকটা ব্যাগ আছে যা নিয়ে বাসে যাওয়া অনেকটাই দুরূহ ব্যাপার তাছাড়াও বাসের সহজ কোন রুটও নেই মোহাম্মদপুর যেতে। তো এখন আপনার সামনে একটাই উপায় তা হলো ট্যাক্সি অথবা সি এন জি অটোরিক্সা ভাড়া করা।

মাকে দাড় করিয়ে রেখে ট্যাক্সি খুজতে গেলেন। সূর্যের অবস্থান ঠিক মাথার উপর। স্টেশনের সামনে বেশ কয়েকটা ট্যাক্সি দাড়িয়ে আছে। আর ট্যাক্সি খোজার জন্য যাত্রিরও অভাব নেই। দৌড়ে যাচ্ছেন ট্যাক্সিগুলোর কাছে, আর মোহাম্মদপুর যাবে কিনা জিজ্ঞেস করছেন। কিন্তু কেউই রাজী হলোনা। দাড়িয়ে রইলেন। যেই কোন ট্যাক্সি এসে দাড়াচ্ছে আপনি ওমনিই ছুটে যাচ্ছেন কিন্তু তারাও মোহাম্মদপুরে যেতে রাজী হচ্ছে না। বরং সে তার পছন্দমত জায়গার যাত্রী নিয়ে আপনার সামনে দিয়েই চলে যাচ্ছে। কি করবেন বুঝতে পারছেননা এখনো। ওদিকে মা ব্যাগগুলো নিয়ে কষ্ট করে দাড়িয়ে আছেন। অথচ ইতিমধ্যে আধঘন্টা পার করে ফেলেছেন। মাথায় ধীরে ধীরে হতাশা ভর করতে শুরু করেছে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। স্টেশনের আশপাশ সব ঘুরে এলেন। সেখানেও প্রায় পণ্চাশটার মত ট্যাক্সিওলাকে অনুরোধ করেছেন মোহাম্মদপুর যাওয়ার জন্য। এখানেও সেই একই অবস্থা। ট্যাক্সিওলা নির্বিকারচিত্তে জবাব দিচ্ছেন "ওদিকে যাব না।" এদিকে সময়ও আরো খানিকটা পেরিয়ে গেল।

তারপর হঠাৎই একজন যেতে রাজী হয়ে গেল। তবে শর্ত দুটো। আড়াইশো টাকা দিতে হবে। এবং অবশ্যই মেইনরোডে নেমে যেতে হবে। এখন আর আপনার দরাদরি করার মত দৈহিক শক্তি এবং মনোবল থাকার কথা নয়। অগত্যা এককথায় রাজি হয়ে গেলেন।

এটা বর্তমান সময়ের প্রায় প্রতিদিনকার একটা সাধারণ ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। দুই স্ট্রোকের বেবি ট্যাক্সি বন্ধ করে দেয়ার পর থেকেই ট্যাক্সি ক্যাব আর সি এন জি অটোরিক্মার সাথে আমাদের সম্পর্ক নিবিড় হয়ে দাড়িয়েছে। এদের যখন প্রথম আবির্ভাব হয় তখন গ্যাস ছিল অনেকটাই দুস্প্রাপ‌্য। আর তাই ট্যাক্মিওলাদেরকে অনেক সময় দীর্ঘসময় লাইন ধরে গ্যাস নিতে হতো। আর তার ভার এসে চাপত আমাদের সাধারন যাত্রীদের ঘাড়ে। মিটারে আসা ভাড়ার সাথে পাঁচ থেকে বিশ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া লাগত। তারপর গ্যাস সহজলভ্য হওয়ার পর এই সমস্যা সাময়িকভাবে কমলেও পরে আবারও শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে তখন তারা যে কোন গন্তব্যে যেতে সাধারণত রাজী হয়ে যেত। তারপর শুরু হলো মিটার কারচুপি। আর গত দু তিন বছর থেকে শুরু হলো নতুন অত্যাচার। ট্যাক্মিওয়ালাদের এখন মিটারে যাওয়ার প্রতি অভক্তি এতটাই বেড়ে গেছে এখন এদের মিটারের কথা জিজ্ঞেস করলেই একটাই উত্তর "মিটার নষ্ট"।

এখনকার প্রায় সব ট্যাক্সিওয়ালাই দরাদরি করে কন্ট্রাক্টে যাত্রী গাড়িতে তোলেন। আর তারা সব জায়গায় যেতেও চাননা। তারা নিজেদের পছন্দমত জায়গা পেলেই তবে যাত্রী নেন। কিন্তু এটা কি ঠিক?

এ ব্যাপারে অতি শিঘ্রই কোন ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আমাদের মহামান্য সরকার কত বড় বড় কথা বলে গদিতে ভুতের মত চড়ে বসে আছেন। নানারকম সংস্কার আর কত কথাই বললেন। কিন্তু কতখানি কি করলেন? তাদের গৌরব করার মত দু একটা অবদানও নেই। তাই তাদের কাছে আমি এ ব্যাপারে কোন দাবী করতে চাইনা। কারন এতে এই সরকার আবার গুলিয়ে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য পরবর্তি নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে। তবে আপাতত সবার কাছে আমার আহবান, আসুন আমরাই এর কোন সমাধান বের করি। সবাইকে তাঁর নিজস্ব মত ব্যক্ত করার অনুরোধ করছি।

No comments: