Sunday, February 22, 2009

সমুদ্রাধিনায়ক

November-2008

নরওয়েজিয়ান সমুদ্র দস্যুরা যেভাবে দিকনির্ণয় যন্ত্র এবং মানচিত্র ছাড়াই আটলান্টিক পেরুল


মাস্তুল আর পালের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া শক্তিশালি বায়ুপ্রবাহ দেবীয় বায়ু না হয়ে যায়ই না। এটা ছিল ভয়ংকর, তবু এরিক দ্যা রেড তার জাহাজকে আরো পশ্চিমে বইয়ে নিয়ে নির্বাসন যাত্রার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। গ্রীনল্যান্ডের ক্ষীন ভুমির সরু রেখা দূর দিগন্তে তার চোখে ধরা পড়ার বেশ কিছুদিন আগেই সে এই অচেনা সমুদ্রে তীর পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিল।

দশম শতাব্দির এই আইসল্যান্ডীয় গল্পটি ঝড়ো সমুদ্রে এক বীরের হাতে গড়া পরবর্তি ঔপনিবেশের লোকজ স্মৃতি। প্রতিবেশীয় নেভিগেশনের মাধ্যমে বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোতকে তাড়া করে যাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির বাস্তবায়নই হল নরওয়ের সমুদ্র দস্যুদের সত্যিকারের বীরত্ব- যা সূর্য, তারকামন্ডলী, বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের সামগ্রিক পর্যবেক্ষনের দ্বারা গতিপথ নির্ণয়ের মাধ্যমে সম্ভব হতো। তারা যখন সমুদ্রের নিকটবর্তি ভূমির কাছাকাছি পৌছত তখন তারা মেঘমালা এবং নীড়ফেরা পাখিদের অনুসরণ করত যেভাবে পৌরাণিক আবিষ্কারকগন নবম শতাব্দিতে আইসল্যান্ড আবিষ্কার করেছিল।

ওক কাঠ আর লোহায় নির্মিত জাহাজ


উত্তরাধিকারসূত্রে এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান নিয়ে লিফ এরিকসন, এরিক দ্যা গ্রেটের সন্তান একাদশ শতাব্দির শুরুতে একদল অভিবাসীকে নিয়ে নতুন ভূমির দিকে জাহাজ ভাসায়। অভিবাসনের যাত্রীদের জাহাজটি হানাদার জলদস্যুদের ব্যবহৃত চুপিসারে যাওয়া "ভূজঙ্গ জাহাজ" ছিল না, এটি দীপ্তিমান মাস্তুলের হিংস্র গতিসম্পন্ন স্বর্ণমুখী জাহাজও ছিল না, বরং এটি ছিল ১৯৬২ সালে ডেনমার্কের স্কুডেলেভে প্রত্নতত্ববিদগনের মাটিখুঁড়ে পাওয়া প্রশস্ত ও গভীর জাহাজগুলোর মত।

এই জাহাজগুলো ছিল ৫০ ফুট (১৫ মিটার) লম্বা এবং ১৫ ফুট (৪.৫ মিটার) প্রশস্ত। একটার প্রান্তদেশে আরেকটা পাইনের তক্তা অথবা ওক বা এশ এর তক্তাকে পেরেক ঠুকে আটকিয়ে, তারপর পানি নিরোধক করার জন্য পশুর লোম গলিয়ে পাইনের আলকাতরার সাথে মিশ্রিত করে তক্তাগুলোর উপর লেপে দেয়া হতো। নৌযানগুলোর তলা, গলুই এবং পার্শ্বদেশ ওক গাছের তক্তাকে উইলো গাছের তৈরী কাষ্ঠল নখর দিয়ে জোড়া লাগিয়ে তৈরী করা হতো।

প্রধান মাস্তুলে বায়ু প্রবাহ অনুসরনে দক্ষ উলের তৈরী একটি বর্গাকার পাল জুড়ে দেয়া হতো। জাহাজের পশ্চাদদেশের দক্ষিন পার্শ্বে স্থাপিত হাল এবং সামনে স্থাপিত তিন থেকে চারটি দাঁড়ের সাহায্যে খুবই সংকীর্ণ জায়গার মধ্য দিয়ে জাহাজ সুনিপুনভাবে চালনা করা সম্ভব হতো। তদুপরি জাহাজের সামনের ও পেছনের ভাগে পাটাতন এবং মাঝমাঝি স্থানে জাহাজের মালপত্র ও গৃহপালিত পশু রাখার উপযোগী করে পেছনদিকে আকাশের দিকে উন্মুক্ত একটি ছাউনি থাকত।

এ ধরনের জাহাজের যাত্রীগন লবন দ্বারা সংরক্ষিত খাবার সামগ্রী, তেতো দুধ এবং তেতো মদকে চামড়া এবং পিপায় করে ঠাসাঠাসি করে জাহাজের মধ্যখানে সংরক্ষন করতেন। এ খাবার শুকনো রাখা প্রায় অসাধ্য ছিল। জাহাজে রান্না করা যেতনা, তবে জাহাজে প্রয়োজনীয় পশু-চর্বি বহন করা হতো যেন সুযোগ পেলে সমুদ্রতীরে নেমে কিছু খাবার রান্না করা যায়।

অপরিচিত ঘন বরফাচ্ছাদিত এই অন্চলে কোন রকম যন্ত্রপাতি ছাড়া নরওয়েজিয়ান জলদস্যুদের এ অভিযানগুলো পাঠকের কাছে অস্বাভাবিক ঝুঁকির কাজ বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে তাদের এ ঝুঁকি গ্রহনের পেছনে কিছু কারন খুঁজে পাওয়া যায়। নরওয়ের ১২৪০ সালের কিছু বইয়ের ভাষ্যমতে একটি কারন হলো বিখ্যাত হওয়ার প্রতি বাসনা, অপরটি প্রবল আগ্রহ এবং সর্বোপরি সম্পদের লোভ।

উৎস: হাউ ওয়াজ ইট ডান (রিডার্স ডাইজেস্ট- ১৯৯৫)

No comments: