Sunday, February 22, 2009

আমাদের ভাষার উপর ভারতীয় আগ্রাসন

আমাদের ভাষার উপর ভারতীয় আগ্রাসন

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:০২

শেয়ার করুন: Facebook

ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। তারা অর্থনৈতিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালি। আর তাই তাদের প্রচন্ড শক্তির কিছুটা প্রভাব আমাদের দেশের উপর পড়বেই। তার মধ্যে আছে কিছু ভাল এবং কিছু মন্দ প্রভাব। আমরা ঐতিহ্যগত ভাবেই ভারতের আগ্রাসনের শিকার। আর এসব আগ্রাসন আমরা হাসিমুখে বরণ করেই আমরা খুশি থাকি। ভারতের একটা প্রাচীন আগ্রাসনের কথা উল্লেখ করি।

একসময় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকদের লেখ্য ভাষা ছিল সাধু ভাষা এবং কথ্য ভাষা ছিল চলিত আন্চলিক ভাষাসমূহ। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্র কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু সাহিত্যিক তাঁদের নিজেদের আন্চলিক ভাষায় সাহিত্যচর্চা করতে লাগলেন। আর তার দেখাদেখি আমরাও শুধু তাদের আন্চলিক ভাষায় সাহিত্যচর্চা করতে লাগলাম। আর আমাদের দেশের আন্চলিক ভাষা সমূহ কেবল ব্যাঙ্গা ও কৌতুক তৈরির জন্য সাহিত্য অঙ্গনে অবশিষ্ট রাখলাম। আমাদের প্রাত্যহিক কথাবার্তায় ও লেখালেখিতে পশ্চিম বঙ্গের আন্চলিক ভাষাটুকু ছাড়া আর সব আন্চলিক ভাষাগুলোকে রহিত করে দিলাম। আমাদের দেশীয় আন্চলিক ভাষায় কথা বলা লোকগুলোকে আনকালচার্ড ও আধামূর্খ খেতাব দিলাম।

শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গীয় ভাষার ব্যবহারের প্রতি জোর দেবার কারনে বাংলা সাহিত্য এখন অনেকটা ইট কাঠের মত লাগে। আর ভাষার গভীর থেকে সাহিত্যের প্রসব হওয়া বন্ধাত্বের অভিশাপে অভিশপ্ত হয়েছে। আগের কাব্যগুলোর সেই মাধূর্য কি এখনকার কাব্যে পাওয়া যায়, একটু দেখুনতো

মাইকেল মধূসুধনের কবিতা:

হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;---
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি।
অনিদ্রায়, নিরাহারে সঁপি কায়, মনঃ,
মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;---
কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল-কানন!
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে---
``ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,
এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!''
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে
মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে॥

(একই সাথে আইডি ফোরামে প্রকাশিত হল)

No comments: