টিভিতে একটি অনুষ্ঠান দেখছিলাম। এক সুদর্শনা নারী অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছিল। তার পোষাকটা অনেকটা ওয়েস্টার্ন ঢঙের। কথা বলছিল বাংলার সাথে খুব বেশি করে ইংরেজী মিশিয়ে। অনুষ্ঠানটি একটা রক মিউজিকের অনুষ্ঠান। এ ধরনের অনুষ্ঠানে ইদানিং এ ধরনের উপস্থাপনাই হয়ে থাকে। টিভি সেটের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন একটু গভীরে ঢুকে পড়লাম। 'কেবল অপারেটর' (Cable Operator) কতই না যত্ন করে এলাকার অলিগলির খাম্বাগুলোর সাথে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে দারুন এক নেটওয়ার্ক তৈরী করেছে, যার ফলে আমার বাসার নিচের খাম্বা হতে একটা তার এসে আমার টিভি সেটের পিকচার টিউবের ফসফর দানাগুলো এ অনুষ্ঠানটা আমার চোখের সামনে দৃশ্যমান করে তুলেছে। এই কেবল আমাকে শখানেক টিভি চ্যানেল রিমোট দিয়ে পরিবর্তন করে করে বিভিন্ন স্বাদের হাজারো অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এজন্যে কেবল অপারেটরও আমার এবং হাজারো সার্ভিস গ্রহীতার কাছ থেকে কড়কড়ে তিনশ করে টাকা নিয়ে নেয়।
আবার প্রত্যেকটা চ্যানেলের ব্রডকাস্টের জন্য নিয়োজিত আছেন ঝানু সব ইন্জিনিয়ারগন। তারাও মনোযোগ দিয়ে ব্রডকাস্ট করে যাচ্ছে হাজারো অনুষ্ঠান। তাদের কাছে অনুষ্ঠানটা বড় নয়, সফলভাবে ব্রডকাস্টই হল প্রধান লক্ষ্য। টিভি চ্যানেল কর্তপক্ষের কাছ হতে এ ইন্জিনিয়ারগন তাদের দক্ষতার পারিশ্রমিকও আদায় করে নেন।
অনুষ্ঠানের দৃশ্যগ্রাহকদের প্রতি কেমন একটা শ্রদ্ধাবোধ জেগে উঠল মনে। কতই না মনোযোগ দিয়ে তারা প্রত্যেকটা কোণ হতে অনুষ্ঠানটা ফ্রেমে বন্দী করে নিয়েছেন, আর এডিটরগনও বিভিন্ন কোণের বিভিন্ন ফ্রেমের গুচ্ছগুলোকে সাজিয়ে পুরো অনুষ্ঠানটা অর্থবহ করে সম্প্রচারের উপযোগী করে তুলছেন। প্রতিদিনই তাঁরা নতুন নতুন কাজ যত্ন সহকারে করে যাচ্ছেন, নিজেদেরকে করে তুলছেন আরো যোগ্য হতে যোগ্যতর, আর চ্যানেল কর্তপক্ষও যথাসাধ্য তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে যাচ্ছে।
প্রডিউসাররাও প্রতিদিন নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে নতুন নতুন অনুষ্ঠানের জন্য অর্থলগ্নি করে যাচ্ছেন এবং সংস্কৃতির ধারা বজায় রেখে যাচ্ছেন, সে ধারাটা উপর কিংবা নিচের দিকেই হোকনা কেন।
সাধারন ব্যবসায়ীগনের সাধারনত সহজ মুনাফার ব্যবসার প্রতি বেশি ঝোঁক থাকে। কত দ্রুত কত বেশি মুনাফা অর্জন করা যায় তার জন্যেই তাদের জান-প্রাণ উজাড় হয়। সমাজ বা দেশ কিংবা এর সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কিছুই তাদের মাথায় কাজ করে না। তারা বুঝে মুনাফা, আর সুখ। ধরা যাক, আজমল সাহেব একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি যে ব্যবসাতে হাত দেন, তাতেই পুরো সফল। ইনভেস্টররাও তার উপর নির্ভর করে কোটি কোটি টাকা তাঁর হাতে তুলে দেন, আর তিনি ব্যবসা করে তাদেরকে মুনাফার ন্যায্য ভাগ দিয়ে দেন, আর নিজের জন্যেও যথেষ্ট পরিমান বরাদ্দ রাখেন। বিভিন্ন ব্যবসায় সাফল্যের পর, গতানুগতিক ব্যবসার একঘেয়েমী দুর করতে নতুন ব্যবসার প্রতি ঝুঁকে পড়তে চাইছেন। তিনি ভালই জানেন, এ ব্যবসায় দেশী ইনভেস্টরের দেখা মিলবেনা, বিদেশীদের কাছেই যেতে হবে। তিনি চেনেনও এদের কিছু পার্টিকে, যারা এ খাতে বিনিয়োগ করতে সদাপ্রস্তুত।
যথারীতি আজমল নেটওয়ার্ক ধরে এগিয়ে গিয়ে ধরে ফেললেন লন্ডনভিত্তিক এক মাল্টিন্যাশনাল ইনভেস্টিং গ্রুপকে। তবে এই গ্রুপ ক্ষানিক সময়ক্ষেপন করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে একখানি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য বিনিয়োগ করতে রাজী হল। তবে তারা দেশি ও বিদেশী দশজন বিশেষজ্ঞের নামের একটা তালিকা দিয়ে এদেরকে এই প্রজেক্টে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিতে বলে দিল। আজমল সাহেব বেশ বড় অংকের বেতনের ব্যবস্থা করলেন এই আঁতেল টাইপের পাঞ্জাবী পরা পেট মোটা দশটি লোককে। এরা নিয়মিত অফিসে আসছেন, কথা বলছেন নিজেরা নিজেরা। মিটিং এর পর মিটিং হচ্ছে, অনলাইনে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা হচ্ছে। আবার সেই অনলাইন মিটিং এর জন্যও আজমল সাহেব বেশ বড় অংকের সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বিদেশী টেকনিকাল টিম এসে ঘুরে গেল। পুরো এক বছরে এই খাজনা গুনেই যাচ্ছেন আজমল সাহেব। অনেকটা অধৈর্য হয়েই পেটী দশ উপদেষ্টাকে তাগাদা দিলেন। তাঁরাও জানালেন তাঁদের ইন্ট্রোডাকটরি কাজ শেষের দিকে, সফলতা খুব কাছেই।
আজমল সাহেব এবং দশ উপদেষ্টা বিরাট ফাইল নিয়ে হাজির হলেন লন্ডন।
No comments:
Post a Comment