Tuesday, March 23, 2010

বনের রাজা হতে গিয়ে... ম ঈ ন উ দ্দী ন

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৩১
বন্ধুরা, আজ তোমাদের একটা বনের গল্প বলব। এ বনে কোন সিংহ ছিলনা। তাই এ বনে কোন রাজাও ছিলনা। কিন্তু ভেবে দেখ, রাজা ছাড়া কি কোন বন হয়? হয়না, তাই ঐ বনেও রাজা চাই। বনের সবাই চেয়ে আছে কবে তাদের একজন রাজা হবে। রাজা নির্বাচনের হাওয়া বইছে বনের প্রতিটি কোনে।

কে হবে রাজা? যে কাউকে রাজা বানিয়ে দিলেই আর হলোনা, রাজা হতে চাই রাজার মতো ব্যক্তিত্ব, রাজার মতো চরিত্র, রাজার মত বুদ্ধি। রাজা হবার এ প্রতিযোগীতায় নেমেছে একই গোত্রের কয়েকটা প্রানী। এরা হলো বনের সবচেয়ে ক্ষীপ্র চিতাবাঘ, রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের মোড়ল এবং তুলতুলে সুন্দরতম বিড়াল।

চিতাবাঘটা খুবই ক্ষিপ্র এবং অপরিনামদর্শী। কোন কিছু মাথায় এলে তা দিগ্বিদিক না ভেবেই ঘটিয়ে ফেলতে ওস্তাদ চিতাবাঘটা। ভাল কিংবা খারাপ তা নিয়ে তার কোন চিন্তা নাই, রাজ্যক্ষমতা তার চাইই চাই।

রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের মোড়লের ব্যক্তিত্বে কেমন যেন একটা গাম্ভীর্য রয়েছে। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে যে কোন সমস্যা সমাধানে তার জুড়ি নেই। শক্তিমত্তা আর বুদ্ধির সংমিশ্রন তাকে রাজ্যের যোগ্য দাবিদারে পরিণত করেছে। তবে তার আবার সম্পদ ও আভিজাত্যের প্রতি লোভেরও কমতি নেই।

বিড়ালটা দেখতে খুবই সুন্দর। দেহটা তুলতুলে নরম। বিড়ালটা দেখতে যেমন সুন্দর, তার আচার-আচরনও সুন্দর। চরিত্র আর রূপের সংমিশ্রন দুর্বল এ প্রানীটাকে বনের অন্য সব প্রানীর কাছেই নয়নমনিতে পরিণত করেছে। বনরাজ্যের রাজা নির্বাচনে সেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি।

নির্বাচনটা হয়ে গেল, রাজা হয়েছে চিতাবাঘ। বনের জনপ্রিয়তা দিয়ে নয়, শক্তির জোরেই সে আজ রাজা। চিতাবাঘের দোসর ছিল আবার বনের শিয়াল আর কুকুরের দল। শিয়াল কিন্তু জানত চিতাবাঘের রাজা নির্বাচিত হওয়াটাই শেষ নয়, ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে সরিয়ে দিতে হবে। ধনী বাঘকে নিয়ে তেমন চিন্তা নেই, ওকে ওর মত থাকতে দিলে, প্রয়োজন গুলো পুরন করলেই চলবে। সমস্যাতো ঐ দরিদ্র বিড়ালটাকে নিয়ে। সম্পদের প্রতি ওর কোন লোভ নাই, রাজা হওয়ার প্রতিও কোন লোভ নাই, লোভ শুধু বনের প্রানিদের সেবা করার আকাংখা। ও নিশ্চয়ই বনে চিতাবাঘের কিংবা তার শিয়াল কুকুর বাহিনীর কোন অত্যাচার সহ্য করবেনা। ওকে যে করেই হোক সরিয়ে দিতে হবে বন থেকে।

কি করা যায়, কি করা যায় ভাবতে ভাবতেই শিয়ালের মাথায় একটা বুদ্ধি এল। এমনি এমনি একে তাড়িয়ে দিলে সবাই ওর প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়বে, সবাই সহমর্মিতা দেখাবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে সবাই বিড়ালকে ঘৃনা করে।

চিতাবাঘ রাজা হবার পরপরই তার কুকুরবাহিনী দিয়ে পুরো বনে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করল। অবাধে চলল দখল আর গুন্ডামী। আর শিয়ালেরা বিভিন্ন বুদ্ধি পাকাতে লাগল। প্রথমেই শিয়ালের দল বনের প্রত্যেক পাড়ায় পাড়ায় সকল নিরীহ প্রানীকে বলতে লাগল যে, "বিড়ালটা হল একটা চোর। ও তোমাদের খাবার চুরি করে খায়।" কেউ কেউ বিশ্বাস করল তাদের কথা, আবার অনেকেই বিশ্বাস করলনা। শিয়ালরা প্রত্যেক প্রানীদের মধ্যেকার একজন করে বিশ্বাসঘাতককে ভাড়া করল যাতে তারা তাদের প্রজাতির মধ্যে বিড়ালের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা রটাতে থাকে। মিথ্যা রটানোর প্রক্রিয়া চলতে লাগল ধুমধাম করে, এখন অনেকে একসাথে বিড়ালকে চোর বলায় আরো অনেকেই বিড়ালকে চোর ভাবতে লাগল। যদিও কেউ কোনদিন তাকে চুরি তো দুরে থাক,ভাল কাজ ছাড়া মন্দ কাজ করতে দেখেনি।

বিড়াল কিন্তু অবাক হলেও এ ধরনের প্রচারনাকে আমল দিলনা। সে কুকুরবাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন করতে লাগল। সবার অধিকারের ব্যপারে সাবধান করে দিতে লাগল। এতে করে সবাই তাকে চোর বলে বিশ্বাস করতে শুরু করলেও তার প্রতি সম্মানবোধ ফিরে আসতে লাগল। এ দেখে শিয়ালদেরতো খুব রাগ হল। শিয়ালেরা চিতাবাঘের কাছে ওর ব্যপারে এটা ওটা নালিশ দিয়ে ক্ষেপিয়ে দিতে লাগল। শেষে চিতাবাঘও তার কুকুর বাহিনীকে বিড়ালের ক্ষতি করতে হুকুম দিল। কোনদিন কুকুরের দল বিড়ালের ঘর ভেঙে দিয়ে আসেতো, কোনদিন তার খাবার কেড়ে নিয়ে আসে। আশপাশের অনেকে বিড়ালের পক্ষ নিয়ে কুকুরের বিরুদ্ধে লাগতে গিয়ে আহত হল। একইসাথে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারনা আর আক্রমনের পরিমান বাড়তে লাগল দিনকে দিন।

একদিন কুকুরের দল কয়েকটা বড় বড় হাড্ডি কেড়ে আনল। সেই হাড় কেড়ে আনার প্রতিবাদ করার জন্য বিড়াল তার সঙ্গী সাথিদের নিয়ে জড়ো হল। কিন্তু আদবহীন কুকুরেরা ঘেউ ঘেউ করে সবাইকে তাড়িয়ে দিল। এর কিছুক্ষন পরই কুকুরদের মধ্যে শুরু হল কোন্দল। কোন্দলের কারন হল চুরি করে আনা হাড়গুলোর ভাগাভাগি। ঘেউঘেউ আর কামড়া কামড়িতে রাত হয়ে গেল। ঝগড়া খানিকটা স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় একে একে এরা স্থান ত্যাগ করতে লাগলেও হঠাতই এক কুকুরকে সামনে পেয়ে বিপরীত পক্ষের কয়েকটা কুকুর একে মেরে ফেলল। এ হত্যার খবর শেয়ালদের কানে চলে গেল। খবর পেয়েই তারা নতুন বুদ্ধি আঁটল। তারা পুরো ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে নতুন নাটক অবতারনা করল। নিহত কুকুরের হত্যার পুরো দোষ তারা বিড়ালের উপর চাপাল, আহত সবাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বিড়ালের বিরুদ্ধে দোষ চাপাতে নির্দেশ দিল। বিশ্বাষঘাতক প্রচারক প্রানীগুলোও তাদের নিজেদের জাতির মধ্যে বিড়ালের বিরুদ্ধে হত্যার দায় চাপাতে লাগল। সেই সাথে আরেকদল কুকুরকে চিতাবাঘ বিড়াল ও তার সঙ্গী সাথিদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিল। সারা বনে যেখানে তাদেরকে খুজে পেল, সেখান থেকেই তাদেরকে ধরে খাঁচায় আটকে রাখা হল। বিড়ালকে মেরে ফেলার জন্য চেষ্টা হল। বিড়ালের অনেক সঙ্গী সাথিকে হত্যা করা হল। আবার সেই হত্যার জন্যেও বিড়ালকেই দায়ি করা হল।


জানিনা, চিতাবাঘ তার রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল কিন আজীবন। তবে, মজলুম যে চিরকাল মজলুমই থাকবে তাতো হতে পারেনা। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই সবকিছু খেয়াল করছেন। তিনি সঠিক বিচারই নিশ্চয় করবেন ঐ শেয়াল- কুকুরসহ চিতাবাঘের প্রতি। আর মজলুম রক্ষা পাবে জুলুম হতে।

সবার প্রতি শুভকামনা।

No comments: