Wednesday, October 28, 2015

মালেশিয়া ভ্রমন - ৬: লাংকাবিতে ঘোরাঘুরি, কেবল কার আর সীফুড ডীনার ( চতুর্থ দিন )

গতরাতে লাংকাবীতে পৌছে অনেক রাত পর্যন্ত সাগরপাড় আর রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি করা হয়েছে। এজন্যে ঘুমাতে দেরী হয়েছে, তাই আজকে ঘুম থেকে উঠতেও দেরী হয়ে গেলো। হাতমুখ ধুয়ে সবাই মিলে নাস্তা খেতে বেরুলাম। আমি ছাড়া সবাইই অনেকদিন বর্নিও তে থাকে, তারা অনেকদিন পর কুয়ালালামপুরে এসে দেশী খাবার খেতে পেয়ে মজা পেয়ে গেছে, তাই ওরা এখানেও বাংলাদেশী কিংবা ভারতীয় খাবারের সন্ধানই করতে চাইলো। অনেক খুজে একটা ভারতীয় রেস্টুরেন্ট পেলাম, তার সার্ভিং বন্ধ হয়ে গেছে। পরে মালেশিয়ান ট্রেডিশনাল একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডাল-পরাটা টাইপের কি যেন খেলাম, খুব বেশি সুবিধে লাগলো না।

লাংকাবির একটি থাই রেস্টুরেন্ট, রাস্তার পাশে এরকম অসংখ্য রেস্টুরেন্ট রয়েছে

আগের দিনের ভাড়া করা গাড়িটা আছে, শাহিদ সেটায় করে নিয়ে পুরো লাংকাবি চক্কর দেয়ালো আমাদেরকে। দ্বীপের এ মাথা থেকে ওমাথা পুরোটা কয়েকবার দেখে ফেললাম, চমতকার ও আধুনিক একটা দ্বীপ। পুরো দ্বীপে অনেক রিসোর্ট রয়েছে এবং সেগুলোকে এমনভাবে জায়গা দেয়া হয়েছে যে এখানকার সাধারন মানুষদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যাতে খুব একটা প্রভাবিত না হয়। ন্যাটিভদের আবাসিক এলাকাগুলোতে এখনো দ্বীপসূলভ গ্রাম গ্রাম একটা ভাব রয়েছে।

শাহিদ ভাই আমাদেরকে চমতকার একটা জেটিতে নিয়ে গেলো। প্রাইভেট বোটে করে যারা মালেশিয়ায় আসতে চান তারা এখানে ল্যান্ড করতে পারেন। বোটে আসা শখের নাবিক পর্যটকদের জন্যে এখানে ইমিগ্রেশন অফিসও রয়েছে।

নাবিক পর্যটক ও ফিশিং বোটের জেটি

বোটে আসা পর্যটকদের জন্যে ইমিগ্রেশন অফিস
জেটি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে চড়ে এবার চলে এলাম একটা কুমিরের খামারে। জায়গাটা খুবই সুন্দর পুরো এলাাকাটা একটা বাগানের মতন। ভেতরে অনেকগুলো ছোট, বড় জলজ খাঁচায় বিভিন্ন সাইজের কুমির পালা হয়। ভয়ংকর সুন্দর একটা জায়গা‍‍‍।

কুমির খামারের প্রধান ফটক

বাচ্চা কুমিরের গন-খাচা

একটা পুকুরে ভেসে থাকা কুমির
কুমিরের খামার থেকে বেরিয়ে খামার এলাকার ভেতরেই দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়া হলো। এর পরের গন্তব্য কেবল কার। এখানকার কেবল কারটা গেন্টিং এর টার চাইতেও বেশি খাড়া আর ভয়ংকর। একটা পাহাড়ের চুড়ায় গিয়ে থেমেছে যেখানে হিন্দি মুভি "ডন" এর শুটিং হয়েছিলো।

লাংকাবি কেবল কার

কেবল কারের উপরের স্টেষন থেকে ভিউ
কেবল কারের ল্যান্ডিং স্টেষনের ভেতরে একটা থ্রিডি মুভি হল আছে। সেখানে ভয়ংকর একটা রোলার কোস্টার এক্সপেরিয়েন্স এর মুভি দেখানো হয়, কিন্তু মুভিটা খুব বেশি ভালো লাগেনি, অযথা এর জন্যে টিকেট কাটার কোন মানে হয় না। সাথে থাকা একশন ক্যাম দিয়ে কেবল কারের এক্সপেরিয়েন্সটা ক্যাপচার করতে চেয়ে্ছিলেম, নিচের ভিডিওতে চাইলে দেখে নিতে পারেন:


এরপর আর তেমন বিশেষ কোন ঘোরাঘুরি নেই। কিছুক্ষন সৈকতে সময় কাটিয়ে দিনের আলোটা নিভে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হলো। এই সুযোগে কেউ কেউ আবার সাগরে গা ভিজিয়ে নেয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করলোনা। এখানকার সীবিচ কক্সবাজারের মত উত্তাল না, অনেকটা নোনতা পানির নদীর মতই এর আচরন। আশপাশে অনেকগুলো দ্বীপ নিয়ে লাংকাবি দ্বীপপূঞ্জ, এজন্যে মূল দ্বীপটা পর্যন্ত ঢেউ এসে পৌছাতে পারেনা, ছোট দ্বীপগুলোতে ধাক্কা খেয়ে ঢেউগুলো মরে যায়।
লাংকাবি'র সমুদ্র সৈকত
হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হলাম, তারপর কিছুক্ষন জিরিয়ে নিলাম, কম্পিউটারে টুকটাক কাজকর্মও সেরে নিলাম। রাতে সী-ফুড দিয়ে ডিনার হবে, ভালো একটা টার্কি রেস্টুরেন্ট দেখেছিলাম, সেখানেই হয়তো যাওয়া হবে।


লাংকাবি'র পর্যটন পাড়া "পান্তাই চেনাং" এর রাস্তাঘাট
প্রথমেই বেরিয়ে একটা ট্রাভেল কোম্পানির সাথে পরের দিনে "আইল্যান্ড হপিং" অ্যাডভেঞ্চারের জন্যে প্যাকেজ কেনা হলো। প্রত্যেকের জন্যে দশ রিংগিত করে খরচ পড়লো, ওরা সকালে এসে গাড়িতে করে নিয়ে যাবে, দুতিন ঘন্টায় আশপাশের অনেকগুলো দ্বীপে ঘুরিয়ে নিয়ে আবার হোটেলে পৌছে দেবে। চমতকার জিনিস কিন্তু খুবই সস্তায় পাওয়া গেলো।

রাস্তার পাশে সীফুড রেস্টুরেন্টের বাইরে সাজিয়ে রাখা জীবন্ত লবস্টার
 ডিনারের জন্যে হাটতে শুরু করলাম। রাস্তার পাশে অনেক ধরনের রেস্টুরেন্ট আর ক্যাফে রয়েছে। সারাদিন পুরো এলাকা প্রায় নিস্তব্ধ থাকলেও রাতে কেন জানি সবকিছু জেগে উঠেছে। আমাদের লক্ষ্য সীফুড রেস্টুরেন্ট, অনেকগুলো আছে এখানে এবং সব রেস্টুরেন্টের বাইরেই তাদের সার্ভিং মাছের একটা করে শোকেস রাখা আছে।


সী-ফিস শোকেস

লবস্টারের একটা খাবার আইটেম

এইটা কি মাছ মনে নাই
একটা চমতকার রেস্টুরেন্টে চমতকার সব খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি, তারপর হোটেলে গিয়ে ঘুম।

No comments: