Friday, October 15, 2010

Internet Marketing ইন্টারনেট মার্কেটিং

The earth became smaller, not physically but virtually. Everyone who accustomed with the name "Internet" and its uses he will support me. Now-a-days anyone can make a tour to whole world within few hours using through Internet. There are opportunities of buying own products sitting in my house to the people around the world and earn a lots of money. Anyone can easily be a great Internet marketer by starting an ad-agency.

This period is called the time of e-commerce. In this period, there is a great field of Internet marketing for shiny career. Anyone can build a his career as Internet marketer independently. He may appoint some people to work in his team after gathering some experiences and start Internet marketing in greater volume. As Bangladesh is a developing country, if young people come to this sector hugely, then we can hope that this sector will be the most foreign currency earning sector.

What is duty of a Internet marketer? His duty is to make known a product to its actual customer. It is done using marketer's web site, blog or social networking account etc. For being a good Internet marketer one should have his service known to the world. It's seemed to be a hard job but not impossible. Because, if anyone starts an useful service then it will be known to people shortly as we experienced.

“পৃথিবীটা এখন সবার হাতের মুঠোয়”, ইন্টারনেট নামটি ও তার ব্যবহারের সাথে পরিচিতদের কাছে একথাটি কখনোই অমূলক মনে হবেনা। আজ চাইলেই ঘরে বসে ঘুরে আসা যায় পুরো পৃথিবীটা। চাইলেই বন্ধুত্ব করা যায় পৃথিবীর অপর প্রান্তের মানুষের সাথে। বিদেশের কোন দোকান থেকে কিনে নেয়া যায় প্রয়োজনীয় জিনিসটি, সেই সাথে ঘরে বসেই বিক্রি করে দেয়া যায় নিজের ঘরে উৎপাদিত কোন জিনিস। সেই সাথে দামী ব্রান্ডের প্রোডাক্ট মার্কেটিং করে আয় করা যায় ঘরে বসে। ঘরে বসেই চালু করা যায় একটা অ্যাড এজেন্সি আর হয়ে যাওয়া যায় পৃথিবীর সেরা মার্কেটার।

ই-কমার্সের যূগে ইন্টারনেট মার্কেটিং ক্যারিয়ার গঠনের একটি বিশাল ক্ষেত্র। যে কেউ চাইলেই স্বাধীনভাবে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন ইন্টারনেট মার্কেটার হিসেবে। অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর শুধুমাত্র একলা কাজ না করে বরং আরো অনেককে এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিজের নের্তৃত্বে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে বৃহৎ ইন্টারনেট মার্কেটিং সার্ভিস চালু করা যেতে পারে। চাকরীর আকালের যূগে তরুনদের উচিত এ ধরনের কাজকে অন্তত: পার্টটাইম চাকরী হিসেবে হলেও গ্রহন করা। ইন্টারনেট মার্কেটিং সেক্টরে তরুনদের ব্যপক উপস্থিতি হয়ত এ সেক্টরকে একদিন দেশের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পরিণত করবে।

ইন্টারনেট মার্কেটিং এ সাধারনত যে কাজটি করা হয় তা হল, কোন একটি প্রোডাক্ট তা কারো ব্যক্তিগত কিংবা কোন ব্রান্ডেরই হোক না কেন তাকে উপযুক্ত ভোক্তার কাছে পৌছে দেয়া। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের যূগে আশা করা যায় যে, সকল ধরনের ভোক্তাই বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের উপর কোন না কোন ভাবে নির্ভরশীল। তারা তাদের দরকারি কাজেই ইন্টারনেট এর শরনাপন্ন হয় নিয়মিত। ওয়েব সাইট কিংবা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক একাউন্ট, ব্লগ কিংবা যে কোন সার্ভিস যা কিনা ইন্টারনেটে প্রকাশ্য তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রোডাক্টকে এর জন্য উপযোগী ভোক্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়াই হচ্ছে মূলত: ইন্টারনেট মার্কেটিং। উপযুক্ত ভোক্তাকে আপনার সার্ভিসের কাছে নিয়ে আসতে সবচে যে জিনিসটি প্রয়োজন আপনার তা হচ্ছে আপনার সার্ভিসের পরিচিতি। প্রশ্ন থাকতে পারে, আপনার সার্ভিসটি পরিচিতি লাভ করবে কি করে? এত বিশাল ইন্টারনেট সম্রাজ্য, এই বিশালতাকে জয় করা নিশ্চয়ই সহজ নয়। কিন্তু এও সত্য আজকে যদি কেউ কোন প্রয়োজনীয় সার্ভিস চালু করে তা অবশ্যই কোন না কোন ভাবে পরিচিতি লাভ করবে।

Monday, September 27, 2010

এটি বাংলাদেশের সংবিধানের একটি সাময়িক অলিখিত অংশ…

প্রথমে একটা ছোট্ট বানোয়াট গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। অনেকদিন আগে এক দুশ্চরিত্র জমিদার বাস করত। সে প্রচন্ড গালীবাজ, ধোঁকাবাজ এবং চরিত্রহীন ছিল। তার মুখের প্রত্যেকটি কথার মধ্যে এত পরিমান গালি-গালাজ মিশে থাকত যে, তা পুরোই অশ্রাব্য ছিল। প্রতি রাতেই তার বিছানায় এলাকার কোন নিরীহ লোকের কন্যা সন্তান কিংবা সুন্দরী স্ত্রীকে চাই-ই চাই। সে জনগনকে বিভিন্ন রকমের ধোঁকা দিয়ে বেশি বেশি কর আদায় করে নিত। জমিদারী দেখাশোনার জন্য একদিন সে ঘোড়ার গাড়িতে করে, অসংখ্য পাইক-পেয়াদার পাহারায় বের হল। এক গাঁয়ে গিয়ে দেখে তার পেয়াদারা সেখানে এক লোককে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছে। জমিদার এর অপরাধ জানতে চাইলেন। পেয়াদা তাঁকে জানালেন, “হুজুর, এ বদমায়েশ আমাদের মধ্যেকার এক পেয়াদাকে গালি দিয়েছে।“ শুনে জমিদার মহাশয় প্রচন্ড রাগ করলেন। এই প্রজার সাথে সাথে সকল প্রজার গুষ্ঠি গালাগালী করে উদ্ধার করার পর আদেশ দিলেন, “একশ বেত্রাঘাত কর একে। এটাই হল তার উপযুক্ত শাস্তি।“ তারপর জমিদার মহাশয় আবার যাত্রা শুরু করল। কিছুদুর যেতেই দেখল, আরেকটা গাঁয়ে তার আরেক প্রজাকে পাইক-পেয়াদারা গাছের সাথে বেঁধে রেখেছে। এর অপরাধ এই প্রজা একটা মেয়ের দিকে ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে ছিল, পেয়াদারা ঘটনাস্থল থেকে একে বন্দী করে এনেছে। জমিদার এর জন্যেও শাস্তির ব্যবস্থা করলেন। এবার শাস্তি দুইশ বেত্রাঘাত। সেই সাথে আদেশ দিলেন, “কে সেই সুন্দরী যার দিকে এই প্রজা এমন করে তাকিয়ে ছিল? তাকে আজ রাতে আমার বিছানায় চাই।“ পেয়াদার জমিদারের হুকুম তামিল করতে ছুটে গেল। জমিদার আবার এগোতে লাগল। আরো কিছুদুর যেতেই দেখল আরেক প্রজা কোন এক অজানা অপরাধে গাছের সাথে আটকে আছে। এর অপরাধ ধোঁকাবাজির। এই প্রজা তার স্ত্রীর সম্ভ্রম জমিদারের হাত থেকে বাচানোর জন্য বাড়িতে উঁচু দেয়াল বানিয়েছে যাতে তার স্ত্রী কোন পাইক পেয়াদা কিংবা দুশ্চরিত্র জমিদারের চোখে না পড়ে। জমিদারের সাথে এত বড় ধোঁকাবাজির অপরাধে তাকেও বেধে রাখা হয়েছে গাছের সাথে। জমিদার একেও শাস্তি দিলেন, তিনশ ঘা বেত্রাঘাত।

কোন দিন যদি প্রজারা সব একত্র হয়ে এই জমিদারকে ঠিক জমিদারের প্রজাদেরকে দেয়া শাস্তির মত করে শাস্তি দেয় তবে জমিদার ব্যাটা সারাজীবন ধরে বেত্রাঘাত খেয়েই যেত। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “চোরের মায়ের বড় গলা” এ প্রবাদটা সকল চোরের জন্যই সত্য। তারাই আইনের প্রয়োগটা সবচেয়ে বেশি করে, যারা আইন বেশি করে ভাঙে। অপরাধীদের ক্ষমতায় আরোহন তাদেরকে নিজেদের অপরাধ ঢেকে রাখতে সহায়তা করে এবং আর আরোহনকারীগন সাধারনত আইনের যত্রতত্র ব্যবহার করে নিজেদের আসনকে পাকাপোক্ত রাখতে চেষ্টা করে। (চলবে)

Friday, September 10, 2010

খোঁজ- ঈদ

ঈদটা বোধহয় এবার কষ্ট করে খুঁজেই নিতে হবে। ঈদ মানেই তো আনন্দ, আর আনন্দ না হলেতো আর ঈদ জমেনা। তাই, আনন্দ দরকার, আনন্দ। বয়সটা বাড়তে বাড়তে এমন বেখাপ্পা অবস্থায় পৌছেছে যে, ঈদের আনন্দটা কেমন ঘুমিয়ে গেছে। যারা পিচ্চি তারা তো এমনিতেই সারাদিন আনন্দে থাকে, ঈদের মৌসুমে পড়াশুনার বেঢপ চাপটা একদমই থাকেনা, তাই আনন্দ্টাও তাদের আর ধরে না। যারা অসীম আনন্দের খনিগুলোর কাছে থাকে মানে বাচ্চাগুলোর বাপ-মা এদের আনন্দ দেখেই অনেক বেশি আনন্দিত থাকে। ঈদ তাদের জন্যই। পিচ্চিদের দাদা-দাদু আর নানা-নানীও ঈদের আনন্দ পুরোটাই পায় দুষ্টুগুলোকে আদর করে। কিন্তু আমি, কি হতভাগা! প্রথমত, আমি নিজেও আর পিচ্চি নই, পিচ্চি ভাইবোন-পুলাপাইনও নাই, তার উপর বেকার। বুঝতেই পারছেন, ঈদের আনন্দটা খুঁজেই নিতে হবে।

চলুন খোঁজাখুজির শুরু করা যাক। শুরুটা কোথা থেকে শুরু করা যায়, বলুনতো! যারা অনেক কেনাকাটা করে তারাই হয়তো ঈদের আনন্দ সবচে বেশি ভোগ করে। চলুন যাওয়া যাক বসুন্ধরা সিটিতে, যেখানে সবচে দামী জামাকাপড়-মোবাইল ফোন বিক্রি হয়। বেশ, বেশ, দারুন কেনাকাটা চলছে। অনেক দামী আর দারুন সব জিনিসের বেচাকেনা চলছে। সব দোকানই খদ্দেরে ভরা। সেই দোকানগুলো থেকে ব্যাগ ভরে জিনিসপত্র নিয়ে বেরুচ্ছে কেউ কেউ, আবার কেউ কেউ দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার সবচে বড় মার্কেটে এসে কিছুই পছন্দ করতে পারছেনা বা ইচ্ছে করেই পছন্দ করছেনা। তিন ধরনের খদ্দেরের দেখা মিলল এখানে। প্রথম দল কিছু্ই কেনেনা, কেনাকাটা দেখতে কিংবা ঈদের ছুটির রমজানের অংশটা কাটানোর জন্যে এখানে এসেছে। এরা এখানকার বেয়াড়া মূল্যের কোন কিছু কেনার সাধ্য রাখেনা। দ্বিতীয় দল কোন বিশেষ পণ্য কিনবার জন্যই শুধু এই জায়গাটা পছন্দ করে, কিন্তু সবকিছু কিনতে কখনই আগ্রহী নয়। তাদের পছন্দের পণ্যগুলো হলো মোবাইল ফোন সেট কিংবা সিডি-ডিভিডি। তৃতীয় দল হল দরিদ্র বাংলাদেশের সংখ্যালঘু টাকাওয়ালা শ্রেনী যাদের পয়সার কোন অভাব নেই, দামী জিনিস বেশি দামে কেনার জন্যে এ জায়গাটা তাদের সবসময়ই পছন্দ। তৃতীয় শ্রেনীর লোকজনই এখানকার এবং বাংলাদেশের ভেতর সবচে বেশি টাকার কেনাকাটা করে, আনন্দ ওরাই সব ভোগ করে, তাই হয়তো ঈদটা তাদেরই। এরকম একটা পরিবারের পিছু নেয়া যাক। ওদের কেনাকাটা সকাল ১২টায় শুরু হয়ে দুপুর ৩টায় বিরতী দিয়ে আরো হয়তো অনেকক্ষন চলল। কিন্তু ঐ বিরতির সময়ই আমি তাদের অনুসরন করা ত্যাগ করলাম। না না, অনুসরন করতে করতে হয়রান হয়ে যাইনি, বরং তাদের কাছ থেকে ঈদের আনন্দের ভাগ নেয়া সম্ভব নয় বুঝেই রণে ক্ষান্ত দিয়েছি। উনারা বিরতির সময়টা যে স্থানটায় কাটিয়েছেন সে স্থানটা ছিল নয়তলার একটা ফাস্ট ফুডের দোকান। সেখানটাতে তারা চুটিয়ে খাওয়া দাওয়া আর ড্রিংক করলেন। বুঝলাম এরা রোজা রাখেনা। যারা রোজা রাখেনা, তাদের আবার ঈদ কিসের। এদের কাছ থেকে ঈদ সব সময়ই তিরিশ দিন দুরে থাকে। তো, এদের পিছু নিয়ে ঈদের দেখাই মেলা অসম্ভব, সেখানে ঈদের আনন্দই বা কই পাবো?

বসুন্ধরা সিটি ত্যাগ করেছি, সময়টা দুপুর চারটা, জায়গাটা কাওরান বাজার। ঈদের আনন্দ খুঁজছি, আজই পেতে হবে, কালকে ঈদ। অফিস পাড়া পুরো নির্জন হয়ে গেছে। তবে টিভি চ্যানেলের অফিসগুলো আগের চেয়েও বেশি ব্যস্ত। আর পেছনে কাওরান বাজার যে কারনে নামকরন করা হয়েছে অর্থাত বাজারটাও বেশ ব্যস্ত। সবাই শেষ সময়ের দরকারী জিনিসপত্রের কেনাকাটার জন্য বড় বড় ব্যাগ হাতে বেরিয়েছে। গরুর গোশতের দোকানের দিকে অ্যানথ্রাক্সের ভয়ে পা বাড়ালাম না। তবে মুরগীর দোকানটা গরুর গোশতে দোকানের কাছাকাছি হওয়ায় অপর্যাপ্ত সরবরাহকৃত গোশতের বাড়তি দামের হাওয়াটা গায়ে একটু যেন লেগেই গেল। মুরগীর দামও বেড়েছে। দামের বাড়াবাড়ি দেখলে অনেক আনন্দে ভরা মানুষের মুখও গোমড়া হয়ে যায়, আর আমিতো আনন্দের খোঁজে বেড়িয়েছি, তাই ওদিকটা থেকে পালিয়ে এলাম।

মগবাজারে রেলের ওপর দিয়ে হাঁটছি। দুপাশে সারি সারি বস্তি, তার বাইরে ছেড়া মলিন জামা কাপড় পরা মানুষের ভীড়। অত্যন্ত আশ্চর্য হলাম, এই বস্তিবাসীরাও কালকের ঈদের আনন্দের দেখা পেয়ে গেছে। যদিও এদের সন্তানদের জন্য আহামরি কোন কেনাকাটা হয়নি, ঈদের দিন খাবার জন্যে এক প্যাকেট সেমাইই হয়তো শুধু কেনা হয়েছে, তবু কতই না সুখি এরা! রমজানের তিরিশটা রোযাই শুধু এদেরকে রাখতে হয়না, সারা বছরই একবেলা আধপেটা খেয়ে যাদের দিন কাটে ঈদটা যেন ঠিক তাদের কাছেই সত্যিকারের আনন্দ হয়ে ধরা দেয়। এদের দেখে অনেকদিন আগের একটা কোরবানির ঈদের দিনের কথা মনে পড়ে গেল। গ্রামে মসজিদের মুয়াজ্জিনের পেছন পেছন দৌড়াচ্ছিলাম। তিনি একে একে এবাড়ি ওবাড়ি গরু জবাই দিচ্ছিলেন, গত কিছুদিন যে গরুগুলো কোরবানীর হাট থেকে কেনা হয়েছে সেগুলোর জবাই করার দৃশ্য দেখছি পাড়ার সবগুলো ছেলে মিলে। হঠাতই দুটো দরিদ্র ছেলের মধ্যে কথোপকথন শুনতে পেলাম। এদের একজনকে এর বাবা একটা স্যান্ডো গেন্জি কিনে দিয়েছেন ঈদ উপলক্ষ্যে আর আরেকজনের বাবা ওকে দিয়েছে স্যান্ডো গেন্জির সাথে সাথে একটা লুঙ্গী। তা-ই তারা একজন আরেকজনকে খুব গর্ব আর আনন্দ সহকারে দেখাচ্ছিল। ঈদের আনন্দ আসলে ধনী-গরিব ভেদ করে আসেনা, বরং যারা ঈদের আনন্দের সত্যিকারের দাবীদার তারা তা পেয়েই থাকে।

মালিবাগ পৌছে তুরাগ বাসে চড়ে সোজা বাড্ডা চলে এলাম। মাগরিব নামাজের সময় পেছনে শিশুদের চেচামেচি শুনলাম। বাচ্চারা ঈদের চাঁদ দেখেই কলরব শুরু করেছে। নামাজ শেষ করে বের হতেই সবগুলো পিচ্চি ধরে নিয়ে গেল চাঁদ দেখাতে। তাদের ভাইয়া ডাক আর চাঁদ দেখাতে যে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিল তাতে আমি আশ্চার্যান্বিত হলাম। ওদের সাথে একসাথে চাঁদ দেখাটাই হল এবারের ঈদের মধুরতম স্মৃতি। শেষ পর্যন্ত আমি ঈদের আনন্দ খুঁজে পেয়েছি। আগামী কাল সকালে ঈদের নামাজের পর এ শিশুগুলোর সাথে কোলাকুলি করতে পারলে সত্যি ঈদটা জমবে বেশ।

Friday, August 20, 2010

গাধারাই দেশ চালায়...

বহু বছর আগে এক রাজ্যের এক বুদ্ধিমান(!) রাজা ছিল। তাঁর রাজ্যে জ্যোতিষীরা বেশ সমাদর পেত। সত্যি বলতে রাজ্যের সব সিদ্ধান্তই নেয়া হত জ্যোতিষীদের সমর্থন পেলে তবেই। কিন্তু জ্যোতিষীরাও কিন্তু সেই সমর্থন নিজ থেকে দিত না। তারা এ সিদ্ধান্তকে যাচাই করে নিত একটা বিশেষ প্রানীর মাধ্যমে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য (!!) এই যে, সেই প্রানীটাকে আমরা একনামে গাধা বলে চিনি। রাজ্যের যে কোন নতুন সমস্যার সমাধান নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার আগে জ্যোতিষীরা তা গাধা দিয়ে যাচাই করে নিত। একটা প্রাঙ্গনে চার দিকে চারটা পাত্রকে চারটে সিদ্ধান্ত হিসেবে চিহ্নিত করে মাঝ খান বরাবর ছেড়ে দেয়া হত একটা গাধাকে। সেই গাধা যে পাত্র থেকে খাবার খেত তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত বাছাই করা হত। ভাগ্যিস সে রাজ্যে সংবাদপত্র ছিলনা, যার ফলে এসব সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের ফলাফলের সমালোচনা শুনতে কিংবা পড়তে পাওয়া যেত না।

সেই দেশের এক বড় ব্যবসায়ী ছিল। সেই ব্যবসায়ী তার মালপত্র গাধার ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেও একটা গাধার ঘাড়ে চেপে ঘুমিয়ে পড়ত। আর গাধা তাকে যেদিকে চালিয়ে নিয়ে যেত সেখানেই সে তার বানিজ্যকর্ম সম্পাদন করে নিত। লাভ কম হত কি বেশি হত তা নিয়ে ঐ ব্যাটা একটুও ভাবত না বরং রাজ্যের গুরুত্বপূর্ন প্রানীকে গুরুত্ব দিতে পেরে সে আনন্দিত হত।

উপরোক্ত কাল্পনিক রাজ্যের গাধার নিয়ম আমাদের দেশেও প্রচলিত আছে। সেদিন কে যেন বলছিল, "যারা দেশ চালায় তাদের মধ্যে কয়েকটা গাধা আছে, তাই দেশের এই দুরবস্থা।" তার উত্তরে আরেকজন বলেছিল, "কয়েকটা মানে, সবগুলোইতো গাধা।" আজ আমার দ্বিতীয় জনের কথাটা সমর্থন করতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রনের জন্য যে জরিমানা অভিযান চলছে তার পদ্ধতি দেখে বোঝাই যায়, গাধাদের দিয়েই অভিযান চালানো হচ্ছে, কিংবা এদেরকে কোন গাধারাই চালায়।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের খুচরা বিক্রেতাদেরকে জরিমানা করলে কেমন করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রিত হবে তা কারো বোধগম্য হবার কথা নয়। একজন খুচরা বিক্রেতা বিশেষ করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের খুচরা বিক্রেতা তাঁর জিনিসপত্র পাইকারী মূল্য থেকে মাত্র দুয়েক টাকা লাভ রেখে বিক্রয় করে থাকে। আজ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব যখন এক দোকানীকে চিনির দাম জিজ্ঞেস করলেন তখন দোকানী ভয়ে পড়ে পাইকারী মূল্যটাই খুচরা মূল্য বলে জানিয়ে দিলেন। আর এই মূল্য শুনেও ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব সন্তুষ্ট হতে পারলেননা, দিলেন পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে। এই দোকানী কি তবে পাইকারী মূল্যের চেয়েও দাম কমিয়ে চিনি বিক্রি করবে? জরিমানার ভয়ে এই দোকানীরা কি দাম কমিয়ে চিনি বেচতে পারবে? যদি না পারে, তবে একে কেন জরিমানা করা হল?

এ প্রশ্নের একটা উত্তর আছে। ক্ষুধার্ত গাধাকে যদি কোন ফাঁকা মাঠে ছেড়ে দেয়া হয়, তবে সে ঘাসের দিকেই ছুটবে। যেহেতু খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারী ব্যবসায়ীদের মত চেক দিয়ে টাকা আদান প্রদান না করে নগদে আদান প্রদান করে বলে তাদের কাছ থেকে সহজেই জরিমানা আদায় করা যায়। আর সেই কারনেই ম্যাজিস্ট্রেটরাও হয়ত গাধার ভূমিকায় অবতীর্ন হয়। যাই হোক না কেন, এদের ক্যাশ থেকে নগদ টাকা পেতে কোন সমস্যা হবে না, খালি হাতে ফেরার সম্ভাবনা নেই। আর যে যত বড় ব্যবসায়ী তার হাতও তত বড়, খুচরা ব্যবসায়ীরা ছোট ব্যবসায়ী বলে এদের হাতও কম চওড়া, এদের কষে কয়েকটা দিলেও কারো এদের পক্ষে কিছু বলার সম্ভাবনা নেই।

গাধারা জুলুম করছে, গাধাগিরির মাধ্যমে জুলুম করছে। জুলুমে জুলুমে ভরে গেছে সারা দেশ। সুবিচার এদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কিংবা হয়ে্ই গেছে। আর যে দেশে জুলুমে ভরে যায়, সেই দেশ আল্লাহর কোপে পড়ে থাকে। আল্লাহ ছাড়া আর কেউই আমাদের উপর নির্ধারিত গযব থেকে রক্ষা করতে পারবেনা। সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।

Tuesday, August 3, 2010

৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া? নাকি, ঠান্ডা গৃহযুদ্ধের সূচনা?

৭২ এর সংবিধান কার্যকর হতে যাচ্ছে। ব্যপারটা কি বেশ চিন্তার বিষয় মনে হচ্ছে না? আমি তো রীতিমত ঠান্ডা যুদ্ধের গন্ধ শুঁকতে পারছি। পুরনো-পঁচা বাতিল ঐ সংবিধান দেশের নীতিতে একই সাথে গনতন্ত্র আর সমাজতন্ত্রকে একসাথে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এ দুই পরস্পর বিরোধী নীতিকে একসাথে রেখে, তার ওপর আল্লাহর উপর থেকে আস্থা ছেড়ে দিয়ে দেশকে কোথায় যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা নিয়ে অবশ্যই চিন্তার অবকাশ রয়েছে।

সমাজতন্ত্র, শুনলেই মনে পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা যা ভেঙে-চুরে আজ সুপ্ত পরাশক্তি রাশিয়াতে পরিণত হয়েছে। সমাজতন্ত্রে সকল সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানাকে নিষিদ্ধ। রাষ্ট্র সেখানে সকল সম্পদের মালিক এবং সম্পদের বণ্টন সমানভাবে সবার মাঝে বণ্টন করার নিয়ম এখানে।

অপরদিকে গনতন্ত্র চর্চায় সবার সামনের অবস্থানে রয়েছে আমেরিকা নামক পরাশক্তি। গনতন্ত্র স্বীকৃতি দেয় পুঁজিবাদকে। আর পুঁজিবাদ হল এমন নীতি যেখানে রাষ্ট্র কোন সম্পদের মালিক নয়, জনগন প্রত্যেকে আলাদা আলাদা ভাবে তাদের নিজেদের দখলে থাকা সম্পদের মালিক।

সমাজতন্ত্র এবং পূঁজিবাদী গনতন্ত্র হল দুটি পরস্পর বিরোধী নীতি। এ দুই নীতি কেমন করে একই সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত হতে পারে তা কৌতুহল উদ্দীপক। দেখা যাক, কেমন করে এ দুটি নীতি একসাথে বসবাস করে, কিছুদিন গেলেই নিশ্চয়ই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই ঠান্ডা যুদ্ধ না আবার লেগে যায় এই ভয় হচ্ছে। একই ঘাটে বাঘ আর ছাগে পানি খেতে গেলে, ছাগের কপালে বাঘের পানিগ্রহনপূর্ব হালকা নাস্তায় পরিণত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যেমন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন আজ রাশিয়াতে পরিণত হয়েছে, তেমনি পূঁজিবাদ কিংবা সমাজতন্ত্রের যে কোন একটা অপরটার হাতে নিহত হবে এটা পুরোপুরি নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। তবে কোনটা টিকে থাকবে তা বলা কঠিন। ৭২ এর পর রক্ষীবাহিনীর হাতে যেমন করে নিহত হয়েছে অজস্র সমাজতান্ত্রকামী তেমনি আরেকটা হলোকাস্টের পূর্বাভাস অনেকের হৃদয়কেই হয়তো শংকিত করে তুলছে।

Wednesday, July 21, 2010

Sample Business Plan

Business Plan of
Adventure Technologies, Inc
For the course: Industrial Management
Course Code: MGT-301



Submitted by:
Moin Uddin, 0715CSE00149
Saiful Islam Bhuiyan, 0715CSE00145
Azharul Islam, 0715CSE00144
Md. Abdullah Al Musabbir, 0817CSE00156


Under the Supervision of:
Russel Ahmed Chowdhury
Lecturer in DBA
Manarat International University


Date of Submission: 21st July, 2010

Adventure Technologies, Inc.
22/A, North Badda,
Gulshan-1212
016-719-466-49


Moin Uddin, President
Cha-22/A, North Badda
Gulshan, Dhaka-1212
+88-01671-946649

Saiful Islam Bhuiyan, Vice-President
Cha-89/8, North Badda
Gulshan, Dhaka-1212
+88-0192-5551106

Azharul Islam, Treasurer
420, Tezkuni Para
Farmgate, Dhaka-1213
+88-01190-816782

Md. Abdullah Al Musabbir, Secretary
31, Merul Badda
Rampura, Dhaka-1218
+88-01911978040




Adventure Technologies, Inc.
Executive Summary
Adventure Technologies, Inc. is a one-year-old outsourcing and technical support providing company, established in April 01 of 2009. The company is located at 22/A North Badda, Gulshan, Dhaka. Adventure technologies started to provide technological support to other organizations from September 2009. Projections for 2008 show that it is reasonable to expect expansion of its customer base to new markets and
territories. Cash Flow projections support the assumption that the company will have sufficient funds to
purchase equipment and hire additional employees to support implementation of the marketing programs.




Management: Adventure Technologies is managed by Saiful Islam Bhuiyan. He has three prior years of experience in the Freelance programming and providing technology support to different organization as a volunteer. Saiful has established a strong team of very dedicated people who love to work with nature. As manager his role is to identify new business, develop and implement marketing activities, and to negotiate and close new contracts.



Current Market: Today the business services 100 small business accounts, 12 medium business accounts and currently no large corporate accounts. The services include: networking, system development and maintenance, bug and problem solving of programs written in different language, web application development and outsourcing and server maintenance. The success of the company has been a direct result of our ability to provide personal service at a competitive rate, thus creating a dedicated customer base. Currently, the average cost for system maintenance of a small business is TK.125-130 per hour, medium or large corporate accounts are negotiated on a per contract basis. Cost of web application development or system implementation including networking is also negotiable on per contract basis.


Projected Market: The projected growth rate for the IT industry, based the previous years is 28%. We will be expanding our business with new equipment, marketing, and additional employees to meet and exceed that demand. We are expecting to grow our customer base by 50% based on our first year’s track record, our unique offering, and planned marketing activities.



Adventure Technologies, Inc.
I. The Organizational Plan
Summary Description of the Business
Adventure Technologies, Inc., established in April 2009 as a corporation, handles networking, system development and maintenance and application development and testing, of different types of businesses in all over the world. It began with 2 small business accounts. As of April 2010, the company
has grown to 90 small business accounts and 10 medium businesses, totaling TK.750,000 in revenue, a
growth of 520%.

Mission
Adventure ’s mission is to be perceived as the most valued provider of System engineering and
maintenance services of small network and internet. The company has been very successful due to the high standard of service and care provided to the customer and because of its reputation for quick response real time development.

Business Model
The company also offers a service of most secured system design with 24 hours online support. Today that service is offered in Dhaka only. Twenty-five of the 100
accounts have contracted for these highly secured systems. Our plan is to open markets in Chittagong
and Sylhet over the next 2 years. It is important to note that these systems are a not only
highly secured; they are also our premium high ticket service and provide a larger profit margin,
directly impacting the company’s bottom line.

Strategy
The company’s growth strategy is to start new branches of our company as we expand the
business in to Chittagong and Sylhet and increase our Large Corporate accounts for
system development.

Facility
The company currently leases a 20,000 sq. ft. area, which includes a 4,000 sq. ft. building for the
main office, a large attached garage for trucks, maintenance equipment and supplies, two large
lots, one fenced in for storing equipment, swithces, servers, hubs and storage of wires and connectors, wirelesss devices, and PCs.


Products and Services
Adventure Technologies offers three categories of technical services to three varieties of customers. The
customers consist of individuals, small businesses, and large corporations. Each group has the
option of purchasing the same types of services. First type of service is to develop desktop or web application ordered by individual. System designing includes networking, software developing, service automation, data control, and software and system maintenance. Customized system design can be purchased on a contract basis, including specialties in secured servers, customized OS, and complete system design. We also have an arrangement to provide software testing and securing existing system as a consultant when there is a need for it.


Customer Profiles
The following are descriptions of the three types of customer and the services that are typically
purchased by each.

1. Individuals who has a great interest in online marketing or freelance service providing through internet demand some useful tools for making easy their tasks. These tools consists of social bookmarking or SEO tools to promote their blogs and freelance products as ebooks or tutorials. Customization of their own web sites and adding easy plug-ins to the web site is one of the great field of our service. Some part time employees who are studying in IT fields work in this section of our company under supervision of SEO expert team consists of Raju and Muntasir Rashid.

2. Small or medium business account or office system implementation is the second type of customer. They typically consist of banks, or small office buildings and require small LAN network with terminals served by a common server and system software. The authority comes to us with a contract to implement the system. The system maintenance service is also provided by our company until the system contract is expired. The maintenance is required about four hours by one of our engineer under the supervision of chief system engineer.

3. Large corporate account are the third type of customer. They require customized and strictly secured system with whole work hours maintenance. Our company provides secured Unix based system with the OS that the company needs. Development of the system needs about three to six months and the system is highly secured and easy to use as all terminals use same OS and stay in a single network with multiple servers and distributed processing environment. This service is provided by 24 hours online maintenance by expert system engineers and one system administrator for work hours of the serviced organization.

////////////////////////////////////
Administrative Plan

Legal Structure
Adventure Technologies, Inc. is a corporation filed under the same name. The legal and financial advisors
recommended a corporation as the most efficient structure based on the plan to start new branches in same city and other cities of the country. There have been 300 shares of stock applied for, and 100 issued to the sole shareholder (President) at the time of incorporation

Corporate Officers: Moin Uddin, President
Saiful Islam Bhuiyan, Vice President and Accountant
(see resumes in Azharul Islam, Treasurer
Supporting Documents) Md. Abdullah Al Musabbir, Secretary and Legal Counsel

The officers of the company determine the direction of the corporation through its board meetings.
Additionally, there is an incentive plan for board members to acquire company stock based on set
profit goals. It should be noted that the President is the only officer working in the day-to-day business. All other officers interact at the monthly board meetings as well as on an “as needed” basis. This allows the company to have access to expertise and advice at large cost savings, which has a direct impact on the
bottom line and growth of the company.

Management & Personnel
Management
At present, Moin Uddin, is the President and sole shareholder in Adventure Technologiesg, Inc. Moin has five prior years of experience in the software outsourcing business, working as a freelance worker. Previously he worked in a variety of service industries developing and maintaining system and servers.
Adventure Technologies, Inc. has been incorporated for almost one year, realizing a 520% growth
rate between April to March. The growth rate is attributed to high standards set for customer service. Many customers shifted from the prior company because of their loyalty to Moin Uddin. He has set up an incentive plan for her employees that rewards them for outstanding customer service based on year-end survey results, or when contracts are renewed or new business is closed. Under Mr. Habib’s management, a strong team of very dedicated people who love to work with nature has been formed. As manager his role is to identify new business, develop and implement marketing activities, and to negotiate and close new contracts. The four supervisors manage the accounts and part-time workers. They also determine staffing and equipment needed to maintain the account. There are also two system specialists, one of which is specifically trained in system engineering and security management.

Personnel
There are three full-time office employees - one office manager and two administrative assistants. Four supervisors and two design specialists work in the field. The remainder are parttime workers, numbering from four to twenty-five or more, depending on the time of the year and work load.

1. Owner-President: 2007 Guaranteed Salary TK.65,000 with yearly increases justified by profitability.
2. System Specialists: 2 in 2008; Salaries @ TK.25,000 + 5% commission on new business contracts.
3. Four Supervisors: Salaries @ TK.15,000 + 3% bonus per contract for excellent year-end customer surveys.
4. Office Manager: Salary @ TK.22,000 per year
5. Administrative Assistants (1 in 2007, 2 in 2008): Salaries @ TK.15,000 per year.
6. Part-time workers: 5-25 @ TK.7 per hour; (more added as volume increases).

Training
All employees receive training from the President and the Supervisor in the following areas:
Given by the President
a. Company policies and procedures regarding the customers and company standards
b. System and software orientation at the time they are hired
c. Liability and safety procedures
d. Equipment care and theft policies

Given by the Supervisors
a. Overview of each account assignment
b. Equipment assignment and training - operation of server or system maintenance and supplies
c. Security threat precautions

Personnel Duties
1. President/Owner
a. Sets company policies and trains all new employees
b. Solicits, interviews and hires new employees
c. Assigns accounts to Supervisors
d. Negotiates new and large contracts
e. Approves the purchases of equipment and supplies
f. Handles customer service issues that can not be satisfied by Supervisor
g. Reviews and signs all checks
h. Follows up on Supervisor sales leads

2. Four Supervisors - report to President
a. Manages on average 25 individual accounts and 4 small business accounts
b. Will be managing 1-2 Large Corporate accounts
c. Responsible for training part-time help on account profiles and equipment
d. Forecasts supplies needed for each account
e. Forecasts and manages work schedules
f. Conducts second round of interviews of part-timers and approves
g. Handles account problems related to service and quality issues
h. Solicits new business leads to President.
i. Responsibility for inventory and equipment assigned to their team

3. Office Manager - reports to president
a. Manages account scheduling
b. Supports Supervisors - back-up supplies misc.
c. Takes account calls and passes to supervisors
d. Performs yearly customer survey
e. Answers phone
f. Dispatches and is in “beeper” contact with supervisors
g. Assigns and maintains equipment for supervisors

4. Administrative Assistant - reports to president
a. Responsible for Bookkeeping functions of:
Daily sales reconciliation
Accounts receivable and accounts payable
Payroll
General Ledger
b. Computer Typing - 60 WPM, with software knowledge - WP/Excel/D-Base
c. 10- key adding machine
d. Access to safe
e. Tracks orders placed for equipment and supplies

5. Part-time Employees - report to supervisor
a. Assigned to work specific accounts
b. Application development, web design and manual server managements
c. Identifies any problems
d. Follows instructions from supervisor
e. Manages inventory of supplies

Employee Profile
All employees must be:
a. Hard working, having knowledge of UNIX system and neat in appearance
b. Like working outdoors
c. Good communicators
d. Team workers
e. Educated for full-time work with a minimum CSE degree
f. Able to follow directives and be a quick learner
g. Dedicated to doing an outstanding job
h. Responsible, regarding safety

Accounting and Legal
Accounting
All bookkeeping is kept on computer, on a regular basis, by the Administrative Assistant on the
software “SystemInfo” developed ourselves. At the end of the year the files are printed and passed to
the accountant Abdul Karim, CPA who has been a personal friend for many years and has 35
years experience as a CPA. His fees are reasonable and there is a high level of trust in his input
to the business as he is the Vice President for the corporation as well.

The customer base and prospect database is kept on the software “ACT” from Contact Software
International that allows us to keep precise timelines of our scheduling and mange our accounts
accurately. We have our own developed WP and spreadsheet software.

Legal
All contracts and other legal matters are handled by Jamal Uddin, corporate officer and
board member. Jamal is the senior partner of a 20-year old law firm specializing in business
contracting.
Insurance
Carrier: Far East Agent: Kofil Uddin
111 Elephant Road, Dhaka
Type of Insurance:
Business/personal 600,000
Deductible 4,000
Liability 1,000,000
Equipment 40,000
Deductible 500
Liability 2,000,000
Vehicles 150,000
Deductible 1,000
Liability 1,000,000
Annual Premium TK.8,000
Monthly Premium 670
Workers Comp. 1.43 per/1k gross Payroll
Security
Problems situations to be considered and protective measures to be taken:
1. Internal theft - Employee Dishonesty
a. Shoplifting - of supplies - (4) closed circuit cameras in garage recording 24 hours
b. Cash Theft - petty cash limit of TK.600. Daily receipt drop-off to bank of all receivable
c. Falsifying signatures - all checks signed by President at the end of the day
d. Employee orientation - to reduce theft and stress security procedures
e. Monthly Inventory - responsibility of the Supervisors
2. External Theft
d. Walk-in theft Cameras at each doorway exits (2)
e. Cameras in garage and on parking area, and fenced in plant lot
f. Break-in theft/robbery - Alarms set nightly and connected directly to local Police station

Adventure Technologies, Inc.
II. Marketing Plan
Author Note: The Marketing Plan for Adventure Technologies, Inc. focuses on three
of the basic elements presented in our marketing chapter for a smaller business—
Market Analysis (Target Markets and Competition), Sales Strategy, and
Advertising. This marketing plan has a special strength in the target marketing
area in that the company planned its strategy for each of its market segments by
evaluating the target in terms of who they are, what the company will do to
approach the target, when the campaign will take place, and where the campaign
will be positioned. Also, the Target Market Worksheet for Target #1 at the end of
this section is a great tool for analyzing and planning your own target marketing.
It is my suggestion that the marketing plan for your company should address the
components in a way that more closely follows the marketing plan outline in
Chapter 5. However, I think this marketing plan may provide you with an
organized means for developing your strategy for individual market segments.
Target Markets with Sales Strategies
Target #1
Large Corporate Facilities and Condominiums
Who: Corporations that are “outsourcing” the system and server maintenance of their facilities to
outside vendors, and condominium complexes. There are approximately 75 accounts that are
potential customers within a 50 mile radius. Our goal is to secure 5 in 2011.
What: Tele-market for background information, and send a direct mail with telemarketing
follow-up. Describe system engineering, server maintenance, security threat control and all other software development services, such as tree web design and software development. Provide a guarantee for the
services and show competitive comparison pricing from local companies.

When: Begin April to determine the bidding process and RFP schedule to determine the
timing of proposals. Call each account to determine the timing and arrange for an on-site
inspection, to determine the amount of work needed and special needs to develop an estimate.
If possible inquire what the previous years costs were and if the customer was satisfied with
the work of their current system engineering companies.
Where: Position joint services with local computer stores for promotions and advertising.

Target #2
Small Businesses
Who: All small businesses and offices that have networking for several computers that want to save
money, or are unhappy with their present networking company. In the 50 mile radius there are
approximately 125 accounts that are potential customers. Our goal is to add 15 new contracts
in this category in 2010.
What: Tele-market for background information and send a direct mail with telemarketing
follow-up. Describe all the same outsourcing and snow plowing services, referencing existing
satisfied customers. Provide a guarantee for services rendered, show the cost savings using
Adventure Technologies, Inc., and develop a plan for continued snow and system maintenance.
Offer the company’s quality guarantee, and comparison chart of competitive pricing.
When: Begin January to determine when existing contracts expire and provide information on
the company and services. Request an on-site evaluation to determine costs and uncover any
problem areas needing work.
Where: Position joint services with local computers stores for promotions and advertising.
Advertise in the local papers, Yellow Pages and Business to Business Directory.

Target #3
Individuals
Who: Target individuals who are located anywhere of the world interested in online marketing and outsourcing or freelancing. Contact all existing customers with satisfaction survey, and solicit at the
same time for:
a. Additional business - renew contracts for next project
b. New customers - referrals
What: Develop and send company brochure that targets the individuals electronic mailing them
with information on all services offered by Adventure Technologies, Inc. with price comparisons.
When: Develop brochure of web application and desktop assistant software for individual interest and sent email to the targeted contracts.
Where: Position joint services with online forums and e-commerce web sites for promotions and advertising

Competition
Adventure technologies, Inc is in a high competitive field. There are a lots of companies running business in same field in local and international areas.

Methods of Distribution
Adventure Technologiesg sells directly to the customer, is primarily a service business, with the exception
of selling the outsourcing application comes by internet workplaces and forums.

Training:
Employees in the field - will be given an overview of the entire promotion to prepare
them for customers asking questions, while on the job.
Office staff - will receive training and instructions on how to answer to phone and track the
responses from the #800 and mailer. They will also be assisting on the pre and post
telemarketing activities.
Expenses: Will not exceed TK.3000. for the entire promotion.

Assumptions:
* Average value per contract = 100K
* Response rate = 2.0 % on the Direct mail and 15-20% on the telemarketing or 1.5 responses
on the direct mail, and 10-14 on the telemarketing.
* “Hot” lead rate = 0.5% on the direct mail and 5%- 7% on the telemarketing or 3.5 leads on
the direct mail and 3.5-5 leads on the telemarketing
Lead tracking Process:
* All Direct mail responses will be tracked
* All Phone calls will be logged when responding on the # 800.
* All regular calls will be screened “are you calling regarding our direct mail promotion?”
Program review: 30 days after last tell-marketing follow-up call.

I. Adventure Technologiesg, Inc. is seeking a loan to increase its equity capital through real
estate investment:
A. By purchasing the buildings currently being leased by the company.
B. By purchasing the parcel of land on which the buildings now stand.
II. Adventure Technologiesg, Inc. has TK.100,000 in cash to invest. An additional amount of
TK.275,000 in loan funds is needed to complete the purchase.
Loan Fund Dispersal Statement
1. Dispersal of Loan Funds
Adventure Technologiesg, Inc. will utilize the anticipated loan in the amount of TK.275,000 to
purchase the facility (land and buildings) that it currently leases. The full purchase price is
TK.375,000. The present owner of the premises is John S. Strykker. The parcel and
accompanying buildings, located at 22 San Carlos Drive in Nashua, New Hampshire, are
currently owned by John S. Strykker.

2. Back-Up Statement
a. The land is currently appraised at TK.200,000. Attached buildings appraise at TK.175,000. The
owner, Mr. John S. Strykker is agreeable to close of escrow on or about April 15, 2008.
b. Adventure Technologiesg, Inc. has appropriated TK.100,000 in retained earnings to be used as a
capital investment in the facility. The additional TK.275,000 in loan funds will make up the full
purchase amount of TK.375,000.
c. The buildings sit on a 20,000 square foot parcel of land, centrally located in Nashua, New
Hampshire. The land is currently appraised at TK.200,000 and the buildings at TK.175,000. There
are two large lots. One is fenced in for parking equipment and also serves as a storage area for
trees, shrubs and plants. There is a 4,000 square foot building that serves as the main office
and a large attached garage to house trucks, maintenance equipment and supplies.
d. The TK.275,000 in loan funds are needed by April 1 in order to proceed with escrow. Loan
repayment can begin promptly on May 1st for a 15-year period. The company has a strong
cash flow and a rapidly-growing market. Early payoff is anticipated.
e. Adventure Technologiesg is currently paying TK.2850 in monthly rental expense. Payments on the
anticipated TK.275,000, 15-year loan @ 9% would amount to TK.2,789. Purchase of the land and
buildings will enable Adventure Technologiesg, with no additional expense, to repay the loan +
interest and to divert the current rental expense into equity growth.

2009 Cash Flow Statement
One-Year Cash Flow Projection and Cash Flow History
Adventure Technologiesg, Inc.
For the Year 2007 Projected for: Historical for:
2009
BEGINNING CASH BALANCE (March 1, 2010)
CASH RECEIPTS
A. Sales/Revenues TK.573,000 TK.777,864
1. Outsourcing - Individual 185,000 216,000
2. Outsourcing - Small Business 65,000 160,700
3. Outsourcing - Customized 174,000 199,374
4. Snow Removal - Individual 15,000 18,250
5. Snow Removal - Small Business 125,000 167,100
6. 5% Snow Removal contracts 5,000 8,500
7. Sale of Miscellaneous Accessories 4,000 7,940

C. Interest Income 1,250 1,250

TOTAL CASH AVAILABLE TK.779,114
CASH PAYMENTS
A. Cost of goods to be sold
1. Fertilizer 20,000 19,000
2. Pesticide 10,000 11,000
3. Plants/Shrubs 18,000 23,000
4. Salt/Sand 5,000 8,030
5. Seed 45,000 45,000
Total Cost of Goods TK.98,000 TK.106,030
B. Variable Expenses (Selling)
1. Design Specialist Salary/Payroll Taxes 20,000 20,000
2. Machinery, Tools, Equipment 11,500 11,000
3. Marketing 5,411 5,400
4. Part-time Worker Salaries/Payroll Taxes 150,000 182,000
5. Sales Bonuses 1,500 2,000
6. Sales Commissions 8,000 10,800
7. Supervisor Salaries/Payroll Taxes 60,000 60,000
8. Travel Expense 9,500 10,400
9. Miscellaneous Selling Expense 1,000 1,200
Total Variable Expenses TK.266,911 TK.302,800
C. Fixed Expenses (Administrative)
1. Administrative Fees (Legal/Accounting) 3,050 3,050
2. Insurance (Liability, Casualty, Fire, Theft) 11,600 11,600
3. Licenses and Permits 4,200 4,200
4. Office Equipment 5,700 7,700
5. Office Salaries/Payroll Taxes 42,000 42,000
6. Owner's Guaranteed Payment 57,000 65,000
7. Rent Expense + Security Deposit 39,900 39,900
8. Utilities 4,320 4,320
9. Miscellaneous Administrative Expense 200 500
Total Fixed Expenses TK.167,970 TK.178,270
D. Interest Expense 1,386 5,535
E. Federal and State Income Tax 7,196 65,220
F. Other Uses 0 0
G. Long-term Asset Payments 17,334 15,081
H. Loan Payments 0 0
I. Capital Distributions 0 0
TOTAL CASH PAID OUT TK.558,797 TK.672,936
CASH BALANCE/DEFICIENCY 15,453 106,178
LOANS TO BE RECEIVED 0 0
CAPITAL CONTRIBUTION 25,000 25,000
ENDING CASH BALANCE (December 31, 2001) TK.40,453 TK.131,178


2009 Profit & Loss (Income) Statement
Adventure Technologiesg, Inc.
For the Year: 2009 6-MONTH % of Total 12-MONTH % of Total
TOTALS Revenues TOTALS Revenues
INCOME AM0UNT PERCENT AM0UNT PERCENT
1. Sales/Revenues 488,610 100.00% 777,864 100.00%
Outsourcing - Individual 138,000 28.24% 216,000 27.77%
Outsourcing - Small Business 104,000 21.28% 160,700 20.66%
Outsourcing - Customized 130,250 26.66% 199,374 25.63%
Bug Removal - Individual 14,300 2.93% 18,250 2.35%
Bug Removal - Small Business 96,800 19.81% 167,100 21.48%
Miscellaneous Accessories 5,260 1.08% 8,500 1.09%
5% Snow Removal Contracts 0 0.00% 7,940 1.02%
2. Cost of Goods to be Sold 91,030 18.63% 101,030 12.99%
a. Beginning Inventory 0 0.00% 0 0.00%
b. Purchases 91,030 18.63% 106,030 5.79%
(1) Components 13,000 2.66% 19,000 2.44%
(2) Bug Remover 8,000 1.64% 11,000 1.41%
(3) Pcs 22,000 4.50% 23,000 2.96%
(4) OS 3,030 0.62% 8,030 1.03%
(5) Wires 45,000 9.21% 45,000 5.79%
c. C.O.G. Available for Sale 91,030 18.63% 106,030 5.79%
d. Less Ending Inventory 0 0.00% 5,000 0.64%
3. GROSS PROFIT 397,580 81.37% 676,834 87.01%
EXPENSES
1. Variable (Selling) Expenses
a. Design Specialist Salary 10,000 2.05% 20,000 2.57%
b. Machinery, Hand Tools, Equip. 9,000 1.84% 11,000 1.41%
c. Marketing 3,205 0.66% 5,400 0.69%
d. Part-time Worker Salaries 72,250 14.79% 182,000 23.40%
e. Sales Bonuses 2,000 0.41% 2,000 0.26%
f. Sales Commission 6,300 1.29% 10,800 1.39%
g. Supervisor Salaries 30,000 6.14% 60,000 7.71%
h. Travel Expense 6,700 1.37% 10,400 1.34%
i. Miscellaneous Selling Expense 900 0.18% 1,200 0.15%
j. Depreciation (Variable Assets) 7,598 1.56% 15,200 1.95%
Total Variable Expenses 147,953 28.23% 318,000 40.88%
1. Fixed (Administrative) Expenses
a. Admin. Fees- Legal/Acct. 2,048 0.42% 3,050 0.39%
b. Insurance (Liab,Cas,Fire,Theft) 5,802 1.19% 11,600 1.49%
c. Licenses and Permits 4,200 0.86% 4,200 0.54%
d. Machinery, Tools, Equipment 6,700 1.37% 7,700 0.99%
e. Office Salaries 21,000 4.30% 42,000 5.40%
f. Owner's Guaranteed Payment 32,502 6.65% 65,000 8.36%
g. Rent Expense + Security Dep. 22,800 4.67% 39,900 5.13%
h. Utilities 2,160 0.44% 4,320 0.56%
i. Miscellaneous Fixed Expense 400 0.08% 500 0.06%
j. Depreciation (Fixed Assets) 0 0.00% 0 0.00%
Total Fixed Expenses 97,612 19.98% 178,270 22.92%
Total Operating Expense 245,565 48.21% 496,270 63.80%
Net Income From Operations 152,015 33.16% 180,564 23.21%
Other Income (Interest) 625 0.13% 1,250 0.16%
Other Expense (Interest) 2,918 0.60% 5,535 0.71%
Net Profit (Loss) Before Taxes 149,722 32.69% 176,279 22.66%
Provision for Income Taxes
a. Federal 41,642 8.52% 51,999 6.68%
b. State 11,230 2.30% 13,221 1.70%
NET PROFIT (LOSS) AFTER TAXES 96,850 21.87% 111,059 14.28%

Notes:
Adventure Technologiesg, Inc. has taken advantage of a rapidly-increasing marketplace, and has also neatly incorporated snow
removal services to increase revenues significantly during winter months. The company earned an unusually high 2007 net
profit for a start-up service business (TK.111,059). Debt Ratios (Debt:Assets, 30.93% and Debt:Equity, 44.77%) are better
than industry average. A 2008 beginning cash balance of TK.131,178, with no current liabilities other than TK.16,332 of notes
payable on a previous loan, give the company sufficient marketing funds to expand services into the corporate outsourcing
and design areas. The purchase of their present facility, currently under a lease agreement (using TK.100,000 cash + TK.275,000
loan funds) will not raise the Debt to Equity Ratio (projected at 87.55%) beyond a safe limit. Projections indicate high sales
growth with the acquisition of new personnel, vehicles, and equipment to service the increased customer base. The company
is experiencing rapid, but controlled growth. Financial projections indicate that the company will be more than able to fulfill
its obligations to repay the TK.275,000 loan with interest and still maintain good cash flow and increased profitability.

Financial Assumptions
TK.25,000 initial capital contribution by owner in corporation (not a loan).
5% required up front fees for all snow contracts.
5% Sales Commission to be paid to sales representatives..
Bonuses of TK.500 each to be paid for landing new corporate accounts.
Salaries for (4) Supervisors @ TK.15,000, totaling TK.60,000. (+ benefits and payroll taxes)
Salary for the President to be guaranteed @ TK.65,000 for 2001; projected raise to TK.82,000
for 2002.
Salary for the Office Manager @ TK.22,000 (+ benefits and payroll taxes).
Salary for Administration Assistants (1 in 2001, 2 in 2002) @ TK.15000 (+ payroll taxes and
benefits).
Salary for part time people at TK.7.00 per hour. Hired as needed to meet volume
Licensing permit fees with City and State during the year.
Rent deposit at TK.5,700 for first and last month.
Heat and Electricity at TK.60 per sq. ft, totaling TK.360 per month, and TK.4.320 per year.
Fire and Liability Insurance at TK.50 per sq. ft, totaling TK.300 per month, and TK.3,600 per
year.
All insurance at TK.8,000 per year. The total cost of insurance at TK.11,600.
2 Trucks purchased with 2001 loan: TK.60,000 @ 8%; interest 5-year period = TK.12,995.05
(see amortizing schedule A)
4 Large Mowers purchased with 2001 loan: TK.16,000 @ 8%; interest 3-year period =
TK.2049.79 (see amortizing schedule B)
State Income Taxes charges at 7.5% of net profits.
Federal Income Taxes based on Federal Corporation Tax Schedule (15%-25%-34%-39%
of net profits)
Estimated Taxes paid on schedule quarterly, based on actual and projected net profits
for 2007 and 2008.
Ending inventory: 2007 = TK.5,000; 2008 projected at TK.10,000










-----------------------------------------END------------------------------------

Tuesday, June 8, 2010

রাজশাহী আর আগের মত শান্তিপুর্ন নেই- এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন

৮ই জুন এর বাংলাদেশ প্রতিদিন এর বামপাশে সবার উপরে যে লেখাটি ছিল তা ছিল এই পোস্টের হেডলাইনে। সেখানে লিটন সাহেব জানালেন যে, রাজশাহীর অবস্থা আর আগের মত শান্তিপুর্ন নেই। তিনি আগের মত বলতে নিশ্চয়ই আওয়ামী শাষন শুরু হবার আগের কথা বলেছেন। কেননা তখন দেশের সবচেয়ে শান্ত ক্যাম্পাস ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। দেশের সবচে শান্ত শহর ছিল রাজশাহী।

তিনি শান্তি নষ্ট হবার ব্যপারে দোষারোপ করলেন বিএনপি ও জামাত-শিবিরকে। তাঁর বক্তব্যে রাজশাহীর শান্তির প্রতি আকাঙ্খার পাশাপাশি পক্ষপাতিত্বেরও আভাস পাওয়া গেল। কেননা সবাই দেখেছে কখন থেকে রাজশাহীর পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। রাজশাহীর শান্তি নষ্ট হবার জন্য আমি একমাত্র আওয়ামী লীগকেই দায়ী করব। আমরা সবাই দেখেছি এতদিনের শান্ত রাজশাহী ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশকে কারা নষ্ট করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরপরই দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তান্ডব শুরু হয়। তার ধারাবাহিকতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাড়া করা সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যা করানো হয় ছাত্রশিবির সেক্রেটারী নোমানীকে। আমরা সবাই নিজেদের টেলিভিশনের কল্যানে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি দা, বটি, রামদা, বোমা ও পিস্তল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল একদল সন্ত্রাসী। সেদিন শান্তিপ্রিয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন মানুষ ও ছাত্রশিবির মিলে একাকার হয়ে প্রতিহত করেছিল ভাড়া করা সরকার দলের এ সন্ত্রাসীদেরকে। কোণঠাসা ছাত্রশিবির ও ঐ এলাকার সাধারন মানুষকে আক্রমন করতে সন্ত্রাসীরা পরিবহন হিসেবে ব্যবহার করেছে এম্বুলেন্স ও পুলিশ জিপ। পুলিশ সন্ত্রাসীদের বাধা দেয়নি বরং নগ্ন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।

তার কিছুদিন পর এ ঘটনার ব্যর্থতাকে সফলতায় রূপ দিতে ছাত্রলীগ হত্যাকান্ডের নাটক বানিয়ে পুলিশকে সাথে নিয়ে রাতের আঁধারে চড়াও হল ছাত্রশিবিরের উপর। শান্ত রাজশাহীর অশান্তি ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে, নির্বিচারে চলল চিরুনী অভিযানের নামে সরকারী সন্ত্রাস। সর্বোপরি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী এবং সারাদেশের শান্ত গনতান্ত্রিক পরিবেশকে ধ্বংশ করল লিটনের ক্ষমতাসীন দল।

দেশে মহাজোটের ব্যানারে গোপনে সক্রিয় বাকশালের নিপাত যাক, গনতন্ত্র মুক্তি পাক। হিংসা নয় ভালবাসার রাজনীতি এদেশকে নিয়ে যাক সাফল্যের চুড়ায়।

Wednesday, April 28, 2010

সীমা - ম ঈ ন উ দ্দী ন

সীমা
ম ঈ ন উ দ্দী ন

সৌরজগত থেকে প্রায় হাজার আলোকবর্ষ দুরে সূর্যের মতই আরেকটা নক্ষত্রকে ঘিরে রয়েছে একটি সৌরজগত। সেই সৌরজগতের অনেকগুলো গ্রহের মধ্যে চকুলিয়া নামে একটি গ্রহ ছিল। সেই গ্রহে অনেক প্রানী বাস করত। "মানুষ" যেমন পৃথিবীর সকল প্রানীর মধ্যে সেরা এবং কর্তৃত্বশীল, তেমনি "চাতুর" নামে এক ধরনের প্রানী ছিল সেই গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রানী। এ প্রানীর ছিল মাটিতে বিচরন করার উপযোগী পা। আবার এরা স্বাচ্ছন্দে পানির নিচে চলতে পারত। এদের দেহে ফুসফুসের পাশাপাশি ফুলকাও ছিল যা তাদেরকে পানির নিচে শ্বাস নিতে সাহায্য করত। এদের দেহে বিচিত্র ধরনের পাখনাও ছিল যা দিয়ে তারা পানিতে সাতার কাটতে পারত এবং চাইলেই যে কোন জায়গায় এর উপর ভর করে উড়ে চলে যেতে পারত। সর্বোপরি এরা ছিল “অলরাউন্ডার ইন লোকোমোশন” টাইপের প্রানী।

মহাকাশবিজ্ঞানী চাতুরদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যাডভাঞ্চার পছন্দ করত কিফর নামের এক চাতুর মহাকাশচারী। তাদের মহাকাশ স্টেসন টুকার হঠাতই আবিস্কার করে ফেলল যে, তাদের সৌরজগতে আরেকটি গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। উত্তাল সমুদ্র আর সবুজ গাছের দেখা মিলেছে সেখানে। অতি শিঘ্রই সেখানে অভিযানে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অভিযান অত্যন্ত বিপদজনক বলে কিফরকেই বাছাই করা হলো। কিফরও এ অভিযানে বাছাই হওয়ায় নিজেকে গর্বিত অনুভব করল, সেই সাথে অর্থনৈতিক লাভের আশায় আনন্দিত হলো। মাত্র একমাসের প্রস্তুতির পর পুরোনো কিন্তু বেশ শক্তিশালি একটা যানে করে সে রওনা দিল।

কিফর তার মহাকাশযানের ব্যাপারে খুবই আশ্বস্ত। যানটা পুরোন হলেও এমনভাবে তৈরী হয়েছে যেটি বিজ্ঞানীদের মতে মহাকাশে কিছুতেই ধ্বংশ হতে পারেনা। এ যানের শক্তিশালি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক তাকে সূর্য নামক নক্ষত্রের কাছ থেকেও চকুলিয়া পর্যন্ত যোগাযোগে সহায়তা করতে পারবে। কোন গ্রহের অভিকর্ষ বলই এ যানকে নিজের দিকে টেনে নিতে পারবেনা, ফলে বিপদের সম্ভাবনাই নেই। মহাকাশে পৌছে কিফর প্রায় দুমাসের পথ অতিক্রম করার সময়টুকু হাইবারনেশনে কাটানোর জন্য নির্ধারিত বক্সে গিয়ে শুয়ে পড়ল। টাইমার সেট করে নিয়েছে সে, যাতে ঠিক দুমাস পর যখন তার যানটি তার লক্ষ্যে গিয়ে পৌছাবে তখন তাকে হাইবারনেশন থেকে উঠিয়ে দেয়।



প্রায় দেড়মাস পর...

কিফর এর হাইবারনেশন টুটে গেছে। কিন্তু এবারের হাইবারনেশনটা ধীরে ধীরে আরামে কেটে যায়নি। বরং প্রচন্ড ব্যাথায় তার শরীর কচকচিয়ে উঠছে। মুখ দিয়ে প্রায় চিৎকার বেরিয়ে আসছে ব্যাথার অসহ্য যন্ত্রনায়। খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছে অনেকক্ষন ধরে প্রচন্ড জলীয় বাষ্পের মধ্যে অক্সিজেন খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেছে কিফর এর ফুলকাটা। সেই সাথে অভিকর্ষজ ত্বরনে প্রচন্ড গতিতে নিচে নামতে গিয়েই এটি ঘটেছে। ফুসফুস এত উপরে অক্সিজেন খুঁজে না পাওয়ায় ফুলকা-ই তাকে এতক্ষন বাচিয়ে রেখেছে। কিন্তু প্রচন্ড পরিশ্রমে ফুলকাটা বোধহয় এতক্ষনে পুরোই অকেজো হয়ে গেছে। তবে ফুসফুস এখন বেশ আরামেই কাজ করছে। কিফর এই মুহুর্তে যেখানে অবস্থান করছে তার চারপাশে বায়ুমন্ডল রয়েছে, আর সেখানে অক্সিজেনের পরিমানও যথেষ্ট। শরীরের বিভিন্ন জায়গায়ও প্রচন্ড ব্যাথা করছে। সবচে বেশি যন্ত্রনা দিচ্ছে পাখনাতে। উল্টে ঝুলে থাকা কিফর বেশ কষ্ট করে মাথা ঘুরিয়ে পাখনার দিকে তাকিয়ে রীতিমত ভয়ই পেয়ে গেল। যে পাখনার মাধ্যমে সে এরকম বায়ুমন্ডলে বেশ আরামে উড়তে পারত সেই পাখনার জায়গায় এখন আর কিছু দেখা যাচ্ছেনা। বরং সেখান থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসছে। পানিতে ভেসে বেড়ানোও এখন তার পক্ষে অসম্ভব।

চারপাশে তাকিয়ে দেখল কিফর। এখনতো তার মহাকাশযানে থাকার কথা, কিন্তু সেই শক্তিশালি মহাকাশযানটি কোথায়? কোত্থাও দেখা মিললনা। বরং নিজেকে আবিষ্কার করল একটা আজব প্রকৃতির বিশাল, চওড়া গাছের ডালপালার প্রান্তে পা আটকে ঝুলে থাকতে। ছোট্ট একটা টুলবক্স তার শরীরের সাথে পেচিয়ে আছে, আর জামাটাও শতছিন্ন হয়ে আছে। টুলবক্সের ভেতর থেকে কিছু ফার্স্ট এইড নিয়ে রক্ত বন্ধ করার ব্যবস্থা হলো। কিন্তু পাটা এমনভাবে পেচানো ডালের সাথে লেগে আছে কিছুতেই সোজা হওয়া যাচ্ছেনা। তবে উল্টে থাকলেও অবস্থানটা বেশ নিরাপদ। পড়ে যাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। যে গাছটাতে সে ঝুলে আছে সেই গাছটা একটু কেমন যেন ভুতুড়ে। এমন আকারের গাছ সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। গাছটি অনেক উঁচু আর এর দেহও এমন মোটা যে, তা প্রায় বিশাল কোন সুপার মার্কেটের চেয়েও মোটা। আর তার ডালপালা প্রায় একটা বিশাল শহরকে ছায়া দেবার উপযোগী। উচ্চতা কতটুকু তা আন্দাজ করা যাচ্ছেনা, কেননা নিচের দিকে প্রায় দশতলার সমান নিচ থেকে গাছটা তরল ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। তরলগুলো ঠিক পানির মত নয়, দেখে খুব দাহ্য কোন জ্বালানী তেলের মত লাগছে। আর পুরো গ্রহটাই বোধহয় এই তরলে ডুবে আছে, কেননা এ গাছটা ছাড়া আর কোন গাছ তার নজরে পড়ছেনা, চোখ যতদুর যায় চোখে পড়ে শুধু সেই বিচিত্র তরল আর তরল। তবে এই তেলতেলে তরলের নিচে যে কোন একটা স্তরে অবশ্যই পানি আছে, নইলে গাছটা বেচে থাকতে পারতনা।

বিরাট গাছটা ছাদের মত কাজ করছে, প্রচন্ড রোদ কাছেই আসতে পারছে না, আবার কিছুক্ষন পরপর তরলের মত কি যেন আকাশ থেকে পড়ছে, তবে তাও গায়ে লাগছেনা। একটু বেকায়দায় থাকলেও নিরাপদ জায়গায়ই রয়েছে কিফর। আস্তে আস্তে খিদে বাড়ছে। হাইবারনেশন ছুটে গেলে সাধারনত সাথে সাথেই প্রচন্ড খিদে লাগার কথা। কিন্তু আকস্মিকতা সবকিছু ভুলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন আর এ খিদে সহ্য করার মত অবস্থা নেই। এমনিতেই যদি গাছ থেকে কোনভাবে পড়ে যায় তবে কিফরের মৃত্যু নিশ্চিত। আবার গাছ থেকে পড়ে না গেলেও ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরেও মরতে হবে। এভাবে কয়েক মিনিট যেতে না যেতেই দমকা বাতাসে গাছটা ক্ষানিক নড়ে উঠল। আর সাথে সাথে উপর থেকে ফলের মত কি যেন ঝরে পড়তে লাগল। হাত বাড়াতেই কিফরের হাতে ধরা পড়ল বেশ কয়েকটা। মুখে দিয়ে ভালই লাগল। খেতে মিষ্টি আর ক্ষানিকটা নোনতা, আর পানির পরিমান এত বেশি যে ক্ষুধার পাশাপাশি তৃষ্ণাও আর রইল না।

চাতুর প্রানীরা সাধারনত উল্টো ঝুলে ঘুমায়, তাই কিফরের কাছে এই উল্টে ঝুলে থাকাটা কষ্টের নয় বরং বেশ আরামের। কতদিন কিফর যে স্বপ্ন দেখেছে শুধুমাত্র ঝুলে খেয়ে বেচে থাকবে আর তাইতো কতনা পরিশ্রমের কাজ করেছে এতদিন। তার ইচ্ছে ছিল বেশ টাকাকড়ি জমিয়ে শেষ জীবনে আরামসে ঝুলে যাবে, সেই সুযোগটা এতদিনে এসেছে। দিনের পর দিন ঝুলে আছে, খাবারেরও কোন কষ্ট নাই, অক্সিজেনও আছে। আর তার নিজের গ্রহেতো অর্ধেক দিন অক্সিজেন পাওয়া যায়, বাকিটা সময় হয় কিনে নিতে হয়, নইলে পানিতে ডুবে ফুলকার সাহায্যে দম নিতে হয়। আর খাবারের দাম পরিশোধ করাটা তার গ্রহের মূল সমস্যা। খাবার এত দামী যে, একদিন কাজ না করলেও না খেয়ে থাকতে হয়। কিফর এই নতুন স্থানেই বেশ আরামে আছে, অক্সিজেন আনলিমিটেড, খাবারও পায় কিছুক্ষন পর পর। চাতুররা তেমন সামাজিক প্রাণীও নয়, ফলে তার একলা থাকতে কোন কষ্টই হচ্ছেনা।

সুখে থাকলে নাকি সেই সুখ কারো কারো সহ্য হয়না, কিফরেরও সহ্য হলো না। মাসাধিককাল আরামে থাকার পর কেন যেন একটা কথা বারবার কিফরের মনে আসতে লাগল, “যদি কোনদিন ফল পড়া বন্ধ হয়ে যায়, তখন কি হবে? এভাবে বন্দী হয়ে থাকার কোন মানে হয়! খাবারের আশায় বসে না থেকে তারচে বরং মুক্ত হয়ে গিয়ে নিজেই খাবার খুঁজে নেব।” ভুত মাথায় চাপল, এখান থেকে মুক্ত হয়ে গিয়ে ঠিক ওপরের কোন একটা ডালে গিয়ে ঝুলে পড়বে। যখন থেকে চিন্তাটা মাথায় এল, ঠিক তখন থেকেই সে দাপাদাপির শুরু করে দিল। যে করেই হোক পা-টা ছাড়াতে হবে। আশপাশে কেমন যেন চিকন চিকন কিছু ডাল আছে সেগুলোকে হাত দিয়ে টেনে এনে তার উপর ভর করে পা-টাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল। অনেকক্ষন ঝাড়াঝাড়ি করার পর পা আস্তে আস্তে ঢিলে হলো। কিন্তু প্রচন্ড ক্লান্তি তাকে দুর্বল করে দিল। ঘুমে তার চোখ বন্ধ হয়ে গেল। তারপর কতক্ষন ঘুমিয়েছে সে জানেনা, ঘুম ভাঙল অক্সিজেনের প্রচন্ড অভাব অনুভবের মাধ্যমে। কিফর নিজেকে কম ঘনত্বের তেলের ঠিক নিচে, যেখানটায় পানির স্তরের শুরু হয়েছে ঠিক সেখানে আবিষ্কার করল। অক্সিজেনের জন্য হাঁসফাস যখন তাকে পুরোই দখল করে নিয়েছে তখনো সে বুঝতে পারল যে, সে গাছ থেকে পড়ে গেছে। এখন তার আর কিছুই করার নেই, এখানে সাতার কাটা সম্ভব নয়, আর ফুলকা তো আগেই গেছে। ধ্বংশ অবধারিত।

মাসখানেক আগে এ গ্রহে কিফরের আগমনের মাধ্যমে একমাত্র প্রানীর উদ্ভব ঘটেছিল। এ গ্রহের একটি মাত্র গাছই এই কিফরকে তার জীবনকাল অব্দি বাচিয়ে রাখতে পারত, কিন্তু কিফর ছিল বড়ই অস্থির। তার অস্থিরতা, অবিশ্বাস আর সীমা অতিক্রমের জন্য উদগ্রীবতা এ গ্রহকে আবারও “জীবিত প্রানি”হীন গ্রহে পরিণত করে দিয়েছে।

Tuesday, March 23, 2010

অধোগতিময় সংস্কৃতি- ম ঈ ন উ দ্দী ন

টিভিতে একটি অনুষ্ঠান দেখছিলাম। এক সুদর্শনা নারী অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছিল। তার পোষাকটা অনেকটা ওয়েস্টার্ন ঢঙের। কথা বলছিল বাংলার সাথে খুব বেশি করে ইংরেজী মিশিয়ে। অনুষ্ঠানটি একটা রক মিউজিকের অনুষ্ঠান। এ ধরনের অনুষ্ঠানে ইদানিং এ ধরনের উপস্থাপনাই হয়ে থাকে। টিভি সেটের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন একটু গভীরে ঢুকে পড়লাম। 'কেবল অপারেটর' (Cable Operator) কতই না যত্ন করে এলাকার অলিগলির খাম্বাগুলোর সাথে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে দারুন এক নেটওয়ার্ক তৈরী করেছে, যার ফলে আমার বাসার নিচের খাম্বা হতে একটা তার এসে আমার টিভি সেটের পিকচার টিউবের ফসফর দানাগুলো এ অনুষ্ঠানটা আমার চোখের সামনে দৃশ্যমান করে তুলেছে। এই কেবল আমাকে শখানেক টিভি চ্যানেল রিমোট দিয়ে পরিবর্তন করে করে বিভিন্ন স্বাদের হাজারো অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এজন্যে কেবল অপারেটরও আমার এবং হাজারো সার্ভিস গ্রহীতার কাছ থেকে কড়কড়ে তিনশ করে টাকা নিয়ে নেয়।

আবার প্রত্যেকটা চ্যানেলের ব্রডকাস্টের জন্য নিয়োজিত আছেন ঝানু সব ইন্জিনিয়ারগন। তারাও মনোযোগ দিয়ে ব্রডকাস্ট করে যাচ্ছে হাজারো অনুষ্ঠান। তাদের কাছে অনুষ্ঠানটা বড় নয়, সফলভাবে ব্রডকাস্টই হল প্রধান লক্ষ্য। টিভি চ্যানেল কর্তপক্ষের কাছ হতে এ ইন্জিনিয়ারগন তাদের দক্ষতার পারিশ্রমিকও আদায় করে নেন।

অনুষ্ঠানের দৃশ্যগ্রাহকদের প্রতি কেমন একটা শ্রদ্ধাবোধ জেগে উঠল মনে। কতই না মনোযোগ দিয়ে তারা প্রত্যেকটা কোণ হতে অনুষ্ঠানটা ফ্রেমে বন্দী করে নিয়েছেন, আর এডিটরগনও বিভিন্ন কোণের বিভিন্ন ফ্রেমের গুচ্ছগুলোকে সাজিয়ে পুরো অনুষ্ঠানটা অর্থবহ করে সম্প্রচারের উপযোগী করে তুলছেন। প্রতিদিনই তাঁরা নতুন নতুন কাজ যত্ন সহকারে করে যাচ্ছেন, নিজেদেরকে করে তুলছেন আরো যোগ্য হতে যোগ্যতর, আর চ্যানেল কর্তপক্ষও যথাসাধ্য তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে যাচ্ছে।

প্রডিউসাররাও প্রতিদিন নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে নতুন নতুন অনুষ্ঠানের জন্য অর্থলগ্নি করে যাচ্ছেন এবং সংস্কৃতির ধারা বজায় রেখে যাচ্ছেন, সে ধারাটা উপর কিংবা নিচের দিকেই হোকনা কেন।

সাধারন ব্যবসায়ীগনের সাধারনত সহজ মুনাফার ব্যবসার প্রতি বেশি ঝোঁক থাকে। কত দ্রুত কত বেশি মুনাফা অর্জন করা যায় তার জন্যেই তাদের জান-প্রাণ উজাড় হয়। সমাজ বা দেশ কিংবা এর সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কিছুই তাদের মাথায় কাজ করে না। তারা বুঝে মুনাফা, আর সুখ। ধরা যাক, আজমল সাহেব একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি যে ব্যবসাতে হাত দেন, তাতেই পুরো সফল। ইনভেস্টররাও তার উপর নির্ভর করে কোটি কোটি টাকা তাঁর হাতে তুলে দেন, আর তিনি ব্যবসা করে তাদেরকে মুনাফার ন্যায্য ভাগ দিয়ে দেন, আর নিজের জন্যেও যথেষ্ট পরিমান বরাদ্দ রাখেন। বিভিন্ন ব্যবসায় সাফল্যের পর, গতানুগতিক ব্যবসার একঘেয়েমী দুর করতে নতুন ব্যবসার প্রতি ঝুঁকে পড়তে চাইছেন। তিনি ভালই জানেন, এ ব্যবসায় দেশী ইনভেস্টরের দেখা মিলবেনা, বিদেশীদের কাছেই যেতে হবে। তিনি চেনেনও এদের কিছু পার্টিকে, যারা এ খাতে বিনিয়োগ করতে সদাপ্রস্তুত।

যথারীতি আজমল নেটওয়ার্ক ধরে এগিয়ে গিয়ে ধরে ফেললেন লন্ডনভিত্তিক এক মাল্টিন্যাশনাল ইনভেস্টিং গ্রুপকে। তবে এই গ্রুপ ক্ষানিক সময়ক্ষেপন করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে একখানি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য বিনিয়োগ করতে রাজী হল। তবে তারা দেশি ও বিদেশী দশজন বিশেষজ্ঞের নামের একটা তালিকা দিয়ে এদেরকে এই প্রজেক্টে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিতে বলে দিল। আজমল সাহেব বেশ বড় অংকের বেতনের ব্যবস্থা করলেন এই আঁতেল টাইপের পাঞ্জাবী পরা পেট মোটা দশটি লোককে। এরা নিয়মিত অফিসে আসছেন, কথা বলছেন নিজেরা নিজেরা। মিটিং এর পর মিটিং হচ্ছে, অনলাইনে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা হচ্ছে। আবার সেই অনলাইন মিটিং এর জন্যও আজমল সাহেব বেশ বড় অংকের সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বিদেশী টেকনিকাল টিম এসে ঘুরে গেল। পুরো এক বছরে এই খাজনা গুনেই যাচ্ছেন আজমল সাহেব। অনেকটা অধৈর্য হয়েই পেটী দশ উপদেষ্টাকে তাগাদা দিলেন। তাঁরাও জানালেন তাঁদের ইন্ট্রোডাকটরি কাজ শেষের দিকে, সফলতা খুব কাছেই।

আজমল সাহেব এবং দশ উপদেষ্টা বিরাট ফাইল নিয়ে হাজির হলেন লন্ডন।

. টিপাইমুখ বাধ টারমিনেশন . ম ঈন উ দ্দী ন .

. প্রধানমন্ত্রী চিন্তিত:

প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড বিমর্ষ দিন কাটাচ্ছেন। সারাদিন একটা বিষয় নিয়েই চিন্তিত তিনি। তিনি কিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করতে আর আগ্রহী নন। "যে করেই হোক এর একটা রফা করা দরকার। এভাবে বারবার আগ্রাসন চুপ করে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এবার এদের ঠেকাতেই হবে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা যদি না থাকে তবে বাংলাদেশেরই অস্তিত্ব থাকবে না। পদ্মাতো গেছেই, যমুনাও মরমর। একমাত্র ভরসা মেঘনার অস্তিত্ব নিয়ে টানা হেচড়া করতে ওদের আর সুযোগ দেয়া যাবে না। আমরন সংগ্রাম করে হলেও এ টিপাইমুখ সমস্যা সমাধান করব, আর এ সংগ্রামে যদি সফলতা না পাই, তবে আমার প্রধানমন্ত্রী থাকার আর কোনই প্রয়োজন নেই।" নিজের অফিসে মনে মনেই ভাবলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

কলিংবেল চাপ দিয়ে তাঁর পার্সোনাল এসিসট্যান্টকে ডাকলেন। সাথে সাথেই হাজির হলেন তিনি। "সব মন্ত্রীদের তলব করুন, বলবেন খুবই জরুরী বৈঠক।" আদেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর পিএ ঠিকমতই তাঁর দায়িত্ব পালন করলেন। মন্ত্রীগন সরকারের বিভিন্ন জরুরী কাজ তাঁদের সচিবদের ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়ে সাথে সাথেই রওনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী ভবনের দিকে। আধঘন্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বৈঠকখানায় সকল মন্ত্রী হাজির। ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁরা একটু দ্বিধাগ্রস্তই বলা চলে। "হঠাৎ আবার কি হলরে! জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে।" একজন মন্ত্রীতো ফিসফিস করে বলেই ফেললেন।

পাঁচ মিনিটের মাথায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর পানিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টাকে সাথে নিয়ে হাজির হলেন। সবাই উঠে দাঁড়াতে গেলে প্রধানমন্ত্রী সকলকে বসে থাকতেই ইশারা করলেন। দেরী না করে দাঁড়িয়েই তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলেন, "আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশের অস্তিত্ব অচিরেই বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে। আপনারা আপনাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে গিয়ে হয়তো এ ব্যপারটা ঠিকভাবে গোচরে আনতে পারেননি। আপনারা জানেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত সুরমা-কুশিয়ারা নদীর জন্মদাত্রী নদী বরাকে অনেকদিন ধরেই একটা বাঁধ নির্মান করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা এটি নির্মানের আনুষ্ঠানিক ঘোসনা পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে। এ ঘোসনা আমাদের জন্য একটা বিপদের ডংকা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। তাদের নির্মিত ফারাক্কা আমাদের স্রোতস্বিনী পদ্মাকে মেরে ফেলেছে। তিস্তা ব্যরেজও আমাদের সমূহ ক্ষতি করেছে। অনেক নদী বিলুপ্ত হয়েছে। কয়েক কোটি মানুষের জীবিকা এ দুটি বাঁধের জন্য ধ্বংশপ্রাপ্ত হয়েছে। আমাদের অনেক প্রতিবাদ স্বত্ত্বেও তাদের এ কার্যক্রম আমরা ঠেকাতে পারিনি। অথচ আন্তর্জাতিক নীতি লংঘন করেই এ সব শোষন আমাদের দিকে চাপিয়ে দিলেও আন্তর্জাতিক মহল আমাদের কোন সাহায্যই করেনি, বা অন্যভাবে বললে আমরা তাদের সাহায্য আদায় করতে পারিনি।" বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী, চেহারায় ক্ষোভের চিহ্ন স্পষ্ট।

একগ্লাস পানি খেয়ে আবার দাঁড়ালেন। "এবার তারা বরাক নদীতে বিদ্যুত উৎপাদনের নামে বিশাল এক বাঁধ নির্মান শুরু করতে যাচ্ছে। এ বাঁধ নির্মিত হলে আমাদের কমপক্ষে তিনকোটি মানুষ তাঁদের জীবিকা হারাবে, তাঁদের বাসস্থান বাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। বৃহত্তর সিলেট অচিরেই মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাই, আমাদের দেশের স্বার্থে, যারা আমাদের ক্ষমতার আসনে বসিয়েছে তাদের স্বার্থে, ভারতকে আমরা কিছুতেই এ বাঁধ নির্মান করতে দেবনা। এ ব্যপারে আপনাদের কি মত?" বললেন মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে।

টেবিলের চারপাশে বসা মন্ত্রীদের মধ্যে তীব্র গুন্জন শুরু হল। নিজেরা নিজেরা কিছুক্ষন আলোচনা করলেন একে অপরের সাথে। ক্ষানিকক্ষন বাদে মন্ত্রীগন একে একে উঠে দাঁড়াতে লাগলেন। একজন দাঁড়িয়ে বললেন, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা গত কিছুদিনের পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে এ ব্যপারে অবগত হয়েছি। কিন্তু এসকল প্রচারনাতো সরকারের বিরোধী পক্ষ করছে বলে আমার মনে হয়।"

আরেক মন্ত্রীও মুখ খুললেন, "বিরোধী দল ও তাদের সহযোগীদেরকেই বেশি বেশি মাতোয়ারা থাকতে দেখা যাচ্ছে। আমার মনে হয় এগুলো সরকারের কাজে ব্যঘাত ঘটানোর জন্যই করা হচ্ছে। আর তাছাড়া ভারতের হাইকমিশনার সাহেবকে বলতে শুনেছি যে, এ বাঁধ নাকি ফারাক্কার মত না।"

আরেকজন মন্ত্রী দাঁড়িয়ে অনেকটা উত্তেজিত অবস্থায়ই বলে ফেললেন, "আমাদের উচিত শক্ত হাতে এসব আন্দোলন দমন করা। নাহলে বন্ধু দেশ ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে।"

প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীগনের কথা শুনে অনেকটা বিস্মিতই হলেন। "আপনারা ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছেন। এ আন্দোলন কিছুতেই বিরোধী দলের আন্দোলন হতে পারেনা। টিপাইমুখ বাঁধ সমস্যা আমাদের সবার। তাই এ আন্দোলনে আমাদের পুরো জাতিকে একসাথে অংশ নিতে হবে। যেমন করে একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে এনেছি, সেভাবেই ভারতকে এ বাঁধ নির্মান ঠেকাব" বিস্ময়ের ধাক্কা কাটিয়ে বললেন প্রধানমন্ত্রী। "দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে টিপাইমুখ সমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হবে, এবং তাতে সফল হতে পারলে আমরা একে একে ফারাক্কা, তিস্তা ব্যারেজ ও অন্যান্য সমস্যাগুলোরও একটা রফা করার সুযোগ পাব। তাই আমরা যে করেই হোক ভারতকে এ বাঁধ নির্মান করতে দেবনা।" শেষের বাক্যটা অনেকটা চিৎকার করেই বললেন জননেত্রী।

সাথে সাথেই মন্ত্রীদের একজন দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে উঠলেন, "অবশ্যই আমরা ভারতকে এ বাঁধ নির্মান করতে দেবনা।" সকল মন্ত্রী একযোগে "ঠিক" বলে সম্মতিসূচক আওয়াজ করলেন। আরেকজন মন্ত্রী দাঁড়ালেন, "তবে আমার মনে হয়, এ কাজটি আমাদের জন্য খুব সহজ সাধ্য হবেনা। তাই এ ব্যপারে আমাদেরকে সকল স্তরের জনগনের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করতে হবে। আর অবশ্যই বিরোধী দলসহ, সকল রাজনৈতিক দলের সহায়তা চাইতে হবে। আর তার পাশাপাশি ব্যপক সচেতনতার ব্যবস্থা করতে হবে।"

"আপনি ঠিক বলেছেন। এজন্যে আমি প্রথমেই সকল সংসদ সদস্যদের নিয়ে বসতে চাই, যাতে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এ জাতীয় সমস্যা সমাধানের সূচনা করতে পারি। আর আজই আমি বিরোধী দলীয় নেত্রীর আলোচনা করব, যাতে এই জাতীয় সমস্যায় জাতি কিছুতেই ষড়যন্ত্রকারীদের ছলনায় ভুলে বিভক্ত হয়ে না যায়। আপাতত, আমাদের বৈঠক এখানেই শেষ করছি। তবে, আপনাদের সকলকে এ বিষয় নিয়ে বেশি বেশি ভাবার অনুরোধ জানাচ্ছি। আর আমাদের সকল শুভাকাঙ্খীর সাথে এ ব্যপারে আলোচনা করার অনুরোধ করছি। আরেকটা ব্যপার লক্ষ্য রাখবেন, আপনাদের কোন কথা বা কাজ আমাদের যেন ব্যর্থ করে না দেয়, পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশ ভারতের সাথে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কেও যেন ব্যঘাত না ঘটে। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি, বাংলাদেশ দীর্ঘজীবি হোক।"

২. বিরোধী দলের নেত্রীর সাথে বৈঠক:

মন্ত্রীরা সব চলে গেছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় হতে। প্রধানমন্ত্রী এখন অনেকটাই স্বস্তি বোধ করছেন এই জন্য যে, তিনি কিছুদিন দেরী হলেও টিপাইমুখ নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তের দিকে এগোতে যাচ্ছেন। এতদিন ব্যপারটা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও তাঁর ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় জটিলতার কারনে অনেকটা পিছিয়ে যেতে হয়েছে। সরকার গঠন করায় তাঁদের এখন অনেক দায়-দায়িত্ব। সবকিছু চাইলেও আর সহজে পাওয়া যায়না। নানা ধরনের ফরমালিটিজ সবকিছুই দেরী করিয়ে দেয়। তারওপর কুটনৈতিক ঝামেলাতো রয়েছে। জাতীয় ব্যপারে বিদেশী রাষ্ট্র আর সংস্থাগুলো যেভাবে নাক গলিয়ে দেয় তাতে কাজের সময় নানা দিক ভেবে চিন্তে করতে হয়। বিরোধী দলের তো এই চিন্তা নেই, দাবী করলেই করতে পারে, চাইলেই রাস্তায় নামতে পারে। তবে, তারা যদি তা না করত তবে আরো সমস্যা হত। অনেক কিছুই চোখ এড়িয়ে যেত। বিরোধী দল সরকারী দলের আয়নার মত, সহজেই ভুল ত্রুটিগুলো ওদের কাছ থেকে সরকার জানতে পারে। তাদের বিভিন্ন গঠনমুলক সমালোচনা সরকারের কাজকে নির্ভুল করতে সাহায্য করে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিএস কে ডাকলেন। বললেন, "বিরোধী দলের নেত্রীর সাথে আজই দেখা করার ব্যবস্থা করুন?"

"জ্বী আচ্ছা, আমি ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।" পিএস এই বলে তাঁর ডেস্কে গেলেন।

পি এস বিরোধী দলের নেত্রীর পি এসের কাছে ফোন দিলেন। তিনি জানালেন নেত্রী কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে টিপাইমুখ বাঁধ সমস্যায় বিরোধীদলের কর্তব্য নিয়ে তাঁর দলের উচ্চপদস্থ নেতাদের সাথে আলোচনা করছেন। পি এস তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রেখে দিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে একথা জানালেন। প্রধানমন্ত্রী পিএসকে বললেন, "এই মুহুর্তেই বিরোধী দলের কার্যালয়ে যাবার ব্যবস্থা করুন। তবে কোন মিডিয়া যেন এই মুহুর্তে কিছুই না জানতে পারে।"

প্রধানমন্ত্রী তাঁর জন্য নির্ধারিত গাড়ির পরিবর্তে একটি সাধারন গাড়িতে চড়ে বিরোধী দলের কার্যালয়ে রওনা দিলেন। পেছনে শুধু একটা পুলিশ ভ্যান তাঁর নিরাপত্তার জন্য পেছন পেছন চলল। ঢাকা শহরের যানজট পেরিয়ে প্রায় দেড়ঘন্টার মধ্যে পৌছে গেলেন সেখানে। অনেকদিন পর তাঁকে ঢাকা শহরের যানজট দেখতে হল। দেখে অনেকটা বিচলিতই হলেন বলা চলে। যানজট নিরসনের ব্যপারটাও তিনি গুরুত্ব দেবেন বলে মনে মনে ভেবে রাখলেন। সাধারনভাবে তিনি তাঁর পিএসকে নিয়ে বিরোধী দলের কার্যালয়ে প্রবেশ করলেন। সেখানকার সিকিউরিটি গার্ড তাঁকে দেখে প্রথমে চিনতে না পেরে ভেতরে যেতে দিচ্ছিলোনা। পরে চিনতে পেরে অবাক হয়ে রাস্তা ছেড়ে দিল। কার্যালয়ে প্রবেশ করতেই সবাইই অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, যেন তারা কোন ভুত দেখছে। তিনি নেত্রীর সাথে দেখা করতে চান জেনে একজন তাঁকে রাস্তা দেখিয়ে কনফারেন্স রুমে নিয়ে এলেন।

এদিকে আড়াই ঘন্টা ধরে বৈঠক চলছে বিরোধী দলের কনফারেন্স রুমে। বিরোধী দলের সবচে ঝানু ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা নেত্রীর সাথে বৈঠকে বসেছেন। সাথে আছে নদী ও পানি সম্পদ বিষয়ে পারদর্শী কয়েকজন বিজ্ঞানী। দেশের মহাসংকটের দৈববানীতে তাঁরা অনেকটা বিচলিত। সরকারের নিশ্চুপ অবস্থানও তাঁদেরকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবিয়ে বিকারগ্রস্ত করে দিচ্ছে। তাঁরা বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর মাধ্যমে টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাব বিশ্লেষন করছিলেন এবং এ বাঁধ নির্মান ঠেকানোর কৌশল নির্ধারনের চেষ্টা করছিলেন। এমন সময় হঠাতই কনফারেন্স রুমের দরজা খুলে প্রধানমন্ত্রী প্রবেশ করলেন। সবাই ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুই প্রথমে ঠাওর করতে পারছিলেন না। পরে একসাথে সবাই দাঁড়ালেন। বিরোধী দলীয় নেত্রী অনেকটা আনন্দের সাথে উঠে গিয়ে তাঁকে ধরে তাঁর আসনে বসিয়ে দিলেন এবং নিজে পাশের চেয়ারে বসলেন।

প্রধানমন্ত্রী সকলকে বিস্ময়ের মধ্যে না রেখে কোন ভনিতা না করেই তাঁর আগমনের হেতু বর্ণনা করলেন এবং এ ব্যপারে তাঁর ভূমিকা নিতে দেরী হওয়ার কারনগুলো একে একে বর্ণনা করলেন এবং এ জন্য তিনি সকলের কাছে ক্ষমা চাইলেন। সকলে তা সাদরে গ্রহন করলেন। সবাই তাঁকে তাঁর আগমনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন। প্রধানমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে তাঁরা আগের আলোচনার পুনরাবৃত্তি করলেন এবং আরো ভালভাবে টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাব সম্বন্ধে ওয়াকিফহাল করলেন। আরো একঘন্টা পর তাঁরা সবাই এ সিদ্ধান্তে এলেন যে, টিপাইমুখ সমস্যা নিয়ে তাঁরা সবাই একসাথে কাজ করবেন। তবে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোসনার আগে মিডিয়াতে তাঁদের এ বৈঠকের কথা প্রকাশ করা যাবে না।

তিন.
সেদিনের পর এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। দেশের আরো দশটা সমস্যার পাশাপাশি টিপাইমুখ নিয়ে সাধারন জনগনের মধ্যে দুএকটা করে তর্ক বিতর্ক চলছে। অনেকে সরকারের চুপচাপ ভূমিকার সমালোচনাও করছে। কিন্তু সরকারের উপরিমহলে কি ঘটছে তাদের এখনো জানানো হয়নি। গত একসপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী আর বিরোধী দলের নেত্রী ভাল করে ঘুমানোর সুযোগ পাননি। গত এক সপ্তাহে বারবার তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীপরিষদের এ ব্যপারে অভিজ্ঞদের নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বৈঠক হয়েছে এর সমাধান খোঁজার জন্য। টিপাইমুখ সমস্যাটা নিয়ে সত্যিই এক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। একে তো ভারতের সরকার টিপাইমুখ নিয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছে এবং পাশাপাশি কুটনৈতিক প্রচেষ্টায়ও যথেষ্ট এগিয়ে গেছে। এ অবস্থায় এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া খুব সহজসাধ্য হবে বলে মনে হয়না। তারপরও দেশের বর্তমান ও সাবেক নের্তৃত্ব দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে একত্র হয়েছে। সফলতো তাদের হতেই হবে যেকরেই হোক।

প্রধানমন্ত্রীর চিন্তিত চেহারা আজ আর অতটা প্রকট নয়। এর কারন তিনি টিপাইমুখ সমস্যার সমাধানের জন্য অনেকটা এগিয়ে গেছেন। সবচেয়ে বড় অগ্রগতি দেশের নের্তৃত্বে একটা ঐক্য তৈরী হয়েছে। এ ঐক্যই হলো দেশের সবচে বড় শক্তি। নের্তৃত্বে ঐক্যই জনগনের ঐক্যের ভিত্তি। আর সবাই একসাথে থাকলে কোন সমস্যাই আর সমস্যা নয়। আগামী কালই দুদলের অভিজ্ঞ নেতাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। এ বৈঠকেই পরবর্তি পদক্ষেপ সম্বন্ধে স্পষ্ট রূপরেখা প্রকাশ করা হবে। আর তার সাথে সাথেই জনগনকে পুরো ব্যপারটায় সংশ্লিষ্ট করা হবে এবং জাতীয় ঐক্যের ব্যবস্থা করা হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরো আয়োজন নিজে তদারক করছেন। বারবার পিএসকে বিভিন্ন ব্যপারে তাগাদা দিচ্ছেন। মেহমানদের নিমন্ত্রনের ব্যপারে খোঁজ নিচ্ছিলেন। সাথে সাথে সাংবাদিকদের দাওয়াত দেয়ার ব্যপারে তাগাদা দিচ্ছিলেন। দুপুর নাগাদ সবকিছুই মোটামুটি প্রস্তুত। এসবের সাথে সাথে অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকায় অন্যান্য সরকারী কাজগুলোও প্রখর ভাবে তদারক করেছেন। কেননা তা না হলে প্রশাসনের খাদেমরা দুর্নীতির সুযোগ পাবে এবং প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়বে। তাহলে দেশও দুর্বল হবে পাশাপাশি টিপাইমুখসহ অন্যান্য সকল ইস্যুতেই সরকারকে ব্যর্থ হতে হবে

সারাদিন স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি দলের মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্যদের খোঁজ খবর নিয়েই কাটল প্রধানমন্ত্রীর। অপরদিকে বিরোধী দলীয় নের্তৃ সারাদিন তাঁর দলের অভিজ্ঞ নের্তৃস্থানীয় সদস্যদের খোঁজখবর নিয়েছেন। নদী ও পানি বিশেষজ্ঞদেরকে আগামীকালের বৈঠকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ও তাঁদের যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য অনুরোধ করে ফোন করেছেন। সবাইকে বৈঠকের গুরুত্ব সম্বন্ধে অবহিত করেছেন। তাঁর উপদেষ্টাদেরকে নিয়ে আলোচনা করেছেন অনেকবার। বিকেল নাগাদ প্রায় সবকিছুই প্রস্তুত। আগামীকালের বৈঠকের জন্য বিরোধী দলের পক্ষ হতে প্রায় সম্পুর্ন প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।


৪.
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। হাতমুখ ধুয়েই তাঁর ব্যাক্তিগত সচিবকে ফোন করলেন। খোঁজখবর নিলেন আয়োজনের ব্যপারে। আয়োজন প্রায় সবই সম্পন্ন হয়েছে। আজ সকাল দশটায় আলোচনা শুরু হবে। আজই একটা ভাল সিদ্ধান্তের আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিরোধী দলের নেত্রীর কাছেও ফোন করলেন। তাঁদের প্রস্তুতি সম্বন্ধে খোঁজ নিলেন।

এদিকে ভারতীয় হাইকমিশনার রাতে ঘুমাতে পারেননি। সবকিছু কেমন যেন উলট পালট লাগছে তাঁর। এবার বুঝি তার চাকরীটা হারাতে হয়, এ চিন্তাটা কেন যেন বারবার চলে আসছে। বেশ কয়েকটা বুদ্ধিজীবিকে ভাড়া করে বিভিন্ন সভায় তাদেরকে দিয়ে টিপাইমুখ বাঁধ সম্বন্ধে পজিটিভ কথা বলিয়েছেন। বেশ কিছু মন্ত্রীকেও প্রথম প্রথম রাজনৈতিক সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে পক্ষে বলানো গেছে। ঐ মন্ত্রীদের দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিরস্ত রাখা গেছে এতদিন। কিন্তু বিরোধীদলের ভূতে পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। হঠাৎ কথা নাই বার্তা নেই টিপাইমুখ নিয়ে আজ বৈঠক বসছে। “একবার আমার সাথে আলোচনাও করলনা।“ অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এল হাইকমিশনারের মুখ দিয়ে।

ভারত থেকে বেশ কয়েকবার ফোন এসেছে হাইকমিশনারের কাছে। হঠাৎ বাঙ্গালী জাতি কেন একত্র হয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছে তাঁকে। কোন জবাব দিতে পারেননি। অজানা আশংকায় বুক কেঁপে কেঁপে উঠছে। বাঙ্গালী জাতি একত্র হলে আর অন্য কোন জাতিই তার সামনে দাঁড়াতে পারেনা। এরা অত্যন্ত সাহসী জাতি। এরা দাবী আদায়ের জন্য জীবন দিতে সদাই প্রস্তুত থাকে। “যারা জীবন দেয়ার জন্যই রাস্তায় নামে, তাদের কি করে ভয় কিংবা লোভ দেখিয়ে পিছিয়ে দেয়া যায়?” কিছুতেই এ সূত্র মিলছেনা। সামনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে একটা নতুন মাত্রা যোগ হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। একবার যদি বাংলাদেশ ভারতকে পরাজিত করে তবে ভবিষ্যতেও বারবার তার বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। “কিছুতেই এ যুদ্ধে হারা যাবেনা। যে করেই হোক এদের থামাতে হবে।“ বিড়বিড় করে বললেন হাইকমিশনার।

ভারতীয় হাইকমিশনে হঠাৎই নতুন এক চান্চল্য সৃষ্টি হল। হাইকমিশনার সাহেব জরুরী বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে সভ্যগনদের তালিকায় রয়েছে হাইকমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রভাবশালী ভারতীয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন এসাইনমেন্টে থাকা র’ এর সদস্যগন এবং এ যূগের মীর জাফর তথা বাংলাদেশি কিছু তাঁবেদার।



৫.

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বৈঠক শুরু হল। বৈঠকের সভ্যগন সবাইই ঠিক সময়ের আগেই উপস্থিত হয়েছেন। তাঁদের সময়ানুবর্তী দেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভবিষ্যত সংগ্রামের অনুপ্রেরণা পেলেন। সভায় যারা উপস্থিত হলেন তাঁরা ছিলেন সরকার ও বিরোধী দলের জ্ঞানী সংসদ সদস্যগন এবং দেশের গন্যমান্য জ্ঞানী ব্যক্তিগন। সভায় একই সাথে বৈজ্ঞানিক ও রাজনীতিবিদ তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের একত্র করা হয়েছে। প্রথমত সমস্যার ধরন ও প্রকটতা বিচার বিশ্লেষন করে তার সমাধানে বৈজ্ঞানিক পন্থাকে উচ্চমানের রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সফলতা অর্জনের চেষ্টা। সভায় সামরিক তিন বাহিনীর প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ন পারসোনেলগনও উপস্থিত হলেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করলেন প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি তাঁর সহকারি হিসেবে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে মনোনয়ন করলেন। এরকম ঘটনা সারাবিশ্বেই অত্যন্ত দুর্লভ। করতালির মাধ্যমে সবাই প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী কে অভিনন্দন জানালেন। বিরল এ ঘটনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হল। সবার মাঝেই একটা বাড়তি উদ্যমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেল পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে। অনুষ্ঠানের শুরুটা পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত দিয়ে শুরু হল। তেলাওয়াত করলেন বিরোধী জোটের ইসলামী দলের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল। তিনি পবিত্র কোরআনএ পানিবন্টন সংক্রান্ত কয়েকটি আয়াত পাঠ করে শোনালেন এবং এর অর্থকে রাসুলুল্লাহর পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন হাদীসের মাধ্যমে বিশ্লেষন করলেন সবার মাঝে। সভাসদদের মাঝে যারা পবিত্র কোরআনকে একটু খাট করে দেখতেন তাঁরা সহ সবাইই অবাক হলেন। তাঁরা অবাক হলেন এই ভেবে যে, দেড় হাজার বছর আগে আরবে তাঁদের আজকের সমস্যা ও তার সমাধান দেয়া হয়েছে। আর এভাবেই প্রায় সব সমস্যার সমাধানও যে কুরআন দেবার ক্ষমতা রাখে তার ব্যপারে তাঁদের অনেকেরই সন্দেহ থাকলনা।

এরপর অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্য রাখলেন বিরোধী দলীয় সভানেত্রী। তিনি সবাইকে তাঁর ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টিপাইমুখ সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা জানালেন। তিনি ভালভাবেই সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন যে, টিপাইমুখ সমস্যার গভীরতা কতটুকু তাঁরা তা পুরোপুরি আন্দাজও করতে পারছেননা। এক অজানা আশংকা রয়ে গেছে পুরো ব্যাপারটায়। প্রধানমন্ত্রী ও তিনি চান এ সমস্যার গভীরতা মাপা হোক। টিপাইমুখ নিয়ে একটা সঠিক সমাধানে যেন সরকার আসতে পারে সে জন্যে উপস্থিত সকলের সহায়তা প্রয়োজন। সবার সাহায্য প্রার্থনা করে তিনি বক্তব্য শেষ করলেন।

তারপর বিভিন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানীগন বক্তব্যে টিপাইমুখ বাঁধের অবস্থান ও তার গুরুত্ব বিশ্লেষন করলেন। এ বাঁধ নির্মানে ভারতের আর্থিক ও কুটনৈতিক লাভ বিশ্লেষন করে শোনানো হল। মাল্টিমিডিয়া প্রেসেন্টেশনের মাধ্যমে এ বাঁধ আমাদের নদীর উপর কেমন প্রভাব ফেলবে তার বর্ননা করা হলো। নদীগুলোর সাথে জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে এমন লোকদের বর্ননা করা হলো এবং বাঁধ নির্মান উত্তর নদীর পরিবর্তনে এঁদের কতটুকু ক্ষতি হতে পারে তা বিশ্লেষিত হলো।

একজন সংসদ সদস্য ভারতের সাথে বাংলাদেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষন করলেন এবং বাঁধ নির্মানের মত স্বেচ্ছেচারীতার বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ করলেন। একে একে সংসদ সদস্য এবং পররাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিশারদগন এ সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন পন্থা ও সুযোগগুলো বিশ্লেষন করলেন। আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকাও আলোচিত হল। সামরিক বাহিনীগুলোর সম্ভাব্য করনীয়গুলো উল্লেখ করলেন সেনাবাহিনী প্রধান।

সমাপনি বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ করলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সবাইকে গুরুত্ব সহকারে সভায় সক্রিয় অংশ নেয়ার জন্য ধন্যবাদ দিলেন। সবাইকে সমস্যা সমাধানকল্পে তাঁদের নিজেদের আয়ত্বে থাকা কাজগুলি গুছিয়ে নিতে অনুরোধ করা হলো। তাঁদের লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে জনগনকে সচেতন করার ব্যপারে জোর দিলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের বিরুদ্ধে শত্রুদের মিত্র এদেশীয় সকলকে শাস্তির হুমকি দিলেন এবং সমস্যা সমাধানে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে অনুষ্ঠান শেষ করলেন।

রাতে সরকার দলের কয়েকজন মন্ত্রী ও বিরোধী দলের কয়েকজন সংসদ সদস্যের একটি দল সংবাদ সম্মেলন করলেন। সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করলেন যে, তাঁরা সবাই দেশের টিপাইমুখ এর বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যে করেই হোক একে রুখে দেয়া হবে।


সারাদিন নানা দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটানোর পর ভারতীয় হাইকমিশনার রাতে টিভিতে সংবাদ সম্মেলনের দৃশ্য দেখে স্ট্রোক করলেন। তাঁকে রাতেই এপোলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হল। ফলে ভারতের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হলোনা। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হলো। আর ভারতের পররাষ্ট্র বিভাগের হোমড়া চোমড়া একজনকে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো।


৬.
পরদিন সংসদে জরুরি বৈঠকের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন আবেদন জানালেন। সারাদিনের বাকিটা সময় অন্যান্য নিয়মিত কাজে ব্যস্ত থাকলেন তিনি। গত তিনদিন তেমন বেশি সময় না দেওয়ায় অনেক কাজ জমে গেছে। তার ওপর তিনি সব কাজেই স্বচ্ছতা পছন্দ করেন। তিনি সবসময়ই একথা মাথায় রাখেন যে, তিনি এদেশের জনগনের জন্য নিয়োজিত কর্মচারীদের প্রধান মাত্র। তাঁকে ঠিকই পাঁচ বছর পর সব কাজের জবাব দিতে হবে। আর তিনি তাঁর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে সব কাজে তাঁর সর্বশক্তি নিয়ে আন্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তাঁর এত বড় দায়িত্ব পালনে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য প্রার্থনা করে প্রতি রাতেই বেশ খানিক সময় তিনি জায়নামাজে সেজদায় পড়ে থাকেন। এর সুফলও তিনি পাচ্ছেন। তাঁর সবচে বড় সাফল্য তিনি জাতিকে আজ একতাবদ্ধ করার একটি সুযোগ পেয়েছেন। তিনি হয়তো একদিন চলে যাবেন কিন্তু তাঁর প্রিয় দেশের সার্বভোমত্ব একতাবদ্ধ জনগনের শক্তিতে অটল থাকবে।

বিকেলে কাজের ফাঁকে জানতে পারলেন যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর আবেদন কবুল করেছেন। তিনি আগামী দিন সংসদে জরুরি বৈঠকের ঘোসনা দিয়েছেন। সকল সংসদ সদস্যের কাছেই এ খবর পৌছে দেয়া হয়েছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে সক্ষম সংসদ সদস্যদের দুরালাপনের মাধ্যমে খোঁজ নিলেন এবং ঠিক সময়ে উপস্থিত থাকার জন্য তাগাদা দিলেন।

এরই মধ্যে তাঁর পার্সোনাল সেক্রেটারী এসে তাঁকে জানালেন যে, ভারতীয় হাইকমিশনার অসুস্থ অবস্থায় এপোলো হাসপাতালে আছেন। তিনি সন্ধ্যার পর তাঁকে দেখতে যাবার জন্য ব্যবস্থা করার আদেশ দিলেন। এমন কঠিন সময়ে ভারতের সাথে কিছুতেই কুটনৈতিক সম্পর্ক দুর্বল করা যাবেনা। এতে সব কিছুই ভেস্তে যাবে।

অবিচার, চলছে, কতদিন চলবে? ম ঈ ন উ দ্দী ন

ঢাকা শহরের দামী ফ্ল্যাটে স্বামী আর সন্তানকে নিয়ে থাকে মৌরী। আর সাথে থাকে তাদের ছোট্ট কাজের মেয়ে আশা। সাত বছর হলো মৌরির বিয়ে হয়েছে। স্বামী ব্যবসায়ী, আর সে গৃহিনী। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই একটা ছেলে সন্তান হলো তাদের। ফুটফুটে শিশু। ছেলেটার নাম দিল তুর্জ। প্রথম সন্তানকে নিয়ে মৌরির তো বেজায় আনন্দ। সারাদিন ওকে নিয়েই ব্যস্ত। একফোঁটাও চোখের আড়াল হতে দেয়না তুর্জকে। তুর্জের দাদীর কাছে দিয়েও সে একটুও আশ্বস্ত হতে পারেনা। প্রয়োজনীয় কাজগুলোও শর্টকাটে কোনরকম সারিয়ে ছুটে আসে ছেলের কাছে। কিন্তু তুর্জ নামটা যেমন একটু অ্যাডভাঞ্চারাস, তেমনি শিশুটার হাবভাবও। জন্মের পর থেকেই তার দুষ্টুমির শুরু। মায়ের কথা শুনতেই চায়না। ঠিকমত খেতে চায়না, ঘুমাতে চায়না। ছোট্ট শিশু কিছু বলতেও পারেনা, সইতেও পারেনা। তবু ছোটবেলায়তো মায়ের কোলেই থাকত, জোর করে এক আধটু খাওয়ানো যেত, ঘুমপাড়ানো যেত। কিন্তু হাটতে শেখার পর থেকে ওর নাগালই পাওয়া যায়না। সারাদিন পুরো ফ্লাট জুড়ে দৌড়া দৌড়ি, এটাওটা ছুড়ে ফেলা, গ্লাস ভেঙে ফেলা চলতেই থাকে।

তুর্জের এখন ছয় বছর। ওকে দেখে রাখা আর বাসার টুকিটাকি কাজ করার জন্য একটা আট বছরের মেয়ে আশাকে রাখা হয়েছে। তুর্জের মা তুর্জকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকায় বাসার সব পরিশ্রম একা আশাকেই করতে হয়। আশা ছোট্ট হলেও কখনো কোন কাজে ফাঁকি দেয়না। এ বয়সে যার একটু খেলার কথা, পড়াশুনার কথা তার প্রতি বিন্দুমাত্র নজর না দিয়ে তাকে শুধু অমানুষিক খাটিয়েই যায় মৌরি। আর তুর্জও আশাকে পেলেই চুল ধরে টানতে থাকে, লাথি দেয়। কিন্তু মৌরির এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা তো নেইই, আশার প্রতি তার নিজের অত্যাচারও মাঝে মাঝে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।

মৌরির ফ্লাটের প্রতিদিনকার ঘটনার একটা উদাহরন দেই। আশা হয়তো ঘর গুছাচ্ছে, আর ওদিকে তুর্জ ঘর আরো অগোছালো করছে। মৌরি হয়তো সন্তানকে থামাবার জন্যে আধোবুলি দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বাধা দিচ্ছে না। এর মধ্যেই হঠাৎ তুর্জ সোফার পাশের টেবিলে রাখা দামী ফুলদানিটা ভেঙে ফেলল। ফুলদানিটা মৌরির প্রচন্ড পছন্দের ছিল। তাই নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলনা। আশাকে ধরেই ধাম-ধাম পেটাতে শুরু করল। ঘটনার আকস্মিকতায় আশা কিছুই না বুঝতে পেরে চিৎকার করে বলতে লাগল, "খালাম্মা, আমি কি করসি, আমি কি করসি?" মৌরি পেটানো না থামিয়েই বলল, "তুই এটা এখানে রেখেছিস কেন?" আশা মারের ব্যাথায় উহ-আহ শব্দ করতে করতেই জবাব দিল, "আম্নেই তো আমারে এইটা শুকেস থেইক্কা এইখানে রাখতে কইছেন। আমারে আর মাইরেননা, আমারে ছাইড়া দেন।" মৌরি আরো রেগে বলল, "আমি বললেই রাখতে হবে, গাধী,..... আজ তোর ভাত বন্ধ, ....তোর কারনেই আজ আমার পছন্দের ফুলদানিটা ভেঙে গেল। আমি তোর আগামী তিন মাসের বেতন থেকে এই টাকা উদ্ধার করবো, শয়তান কোথাকার।" আশা মারের হাত থেকে রক্ষা পেতে মৌরির শর্ত মেনে নিলেও মার থামল আরো দুমিনিট পর। এদিকে মায়ের দেখাদেখি তুর্জও আশাকে দুইটা লাথি দিল।

এভাবে প্রায় প্রতিদিনই আশাকে সারা শরীরে ব্যাথা আর জখমের যন্ত্রনা নিয়ে কাজ করতে হয়। তার উপর প্রায়ই বেতনটাও হাতছাড়া হয়ে যায়।

বনের রাজা হতে গিয়ে... ম ঈ ন উ দ্দী ন

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৩১
বন্ধুরা, আজ তোমাদের একটা বনের গল্প বলব। এ বনে কোন সিংহ ছিলনা। তাই এ বনে কোন রাজাও ছিলনা। কিন্তু ভেবে দেখ, রাজা ছাড়া কি কোন বন হয়? হয়না, তাই ঐ বনেও রাজা চাই। বনের সবাই চেয়ে আছে কবে তাদের একজন রাজা হবে। রাজা নির্বাচনের হাওয়া বইছে বনের প্রতিটি কোনে।

কে হবে রাজা? যে কাউকে রাজা বানিয়ে দিলেই আর হলোনা, রাজা হতে চাই রাজার মতো ব্যক্তিত্ব, রাজার মতো চরিত্র, রাজার মত বুদ্ধি। রাজা হবার এ প্রতিযোগীতায় নেমেছে একই গোত্রের কয়েকটা প্রানী। এরা হলো বনের সবচেয়ে ক্ষীপ্র চিতাবাঘ, রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের মোড়ল এবং তুলতুলে সুন্দরতম বিড়াল।

চিতাবাঘটা খুবই ক্ষিপ্র এবং অপরিনামদর্শী। কোন কিছু মাথায় এলে তা দিগ্বিদিক না ভেবেই ঘটিয়ে ফেলতে ওস্তাদ চিতাবাঘটা। ভাল কিংবা খারাপ তা নিয়ে তার কোন চিন্তা নাই, রাজ্যক্ষমতা তার চাইই চাই।

রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের মোড়লের ব্যক্তিত্বে কেমন যেন একটা গাম্ভীর্য রয়েছে। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে যে কোন সমস্যা সমাধানে তার জুড়ি নেই। শক্তিমত্তা আর বুদ্ধির সংমিশ্রন তাকে রাজ্যের যোগ্য দাবিদারে পরিণত করেছে। তবে তার আবার সম্পদ ও আভিজাত্যের প্রতি লোভেরও কমতি নেই।

বিড়ালটা দেখতে খুবই সুন্দর। দেহটা তুলতুলে নরম। বিড়ালটা দেখতে যেমন সুন্দর, তার আচার-আচরনও সুন্দর। চরিত্র আর রূপের সংমিশ্রন দুর্বল এ প্রানীটাকে বনের অন্য সব প্রানীর কাছেই নয়নমনিতে পরিণত করেছে। বনরাজ্যের রাজা নির্বাচনে সেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি।

নির্বাচনটা হয়ে গেল, রাজা হয়েছে চিতাবাঘ। বনের জনপ্রিয়তা দিয়ে নয়, শক্তির জোরেই সে আজ রাজা। চিতাবাঘের দোসর ছিল আবার বনের শিয়াল আর কুকুরের দল। শিয়াল কিন্তু জানত চিতাবাঘের রাজা নির্বাচিত হওয়াটাই শেষ নয়, ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে সরিয়ে দিতে হবে। ধনী বাঘকে নিয়ে তেমন চিন্তা নেই, ওকে ওর মত থাকতে দিলে, প্রয়োজন গুলো পুরন করলেই চলবে। সমস্যাতো ঐ দরিদ্র বিড়ালটাকে নিয়ে। সম্পদের প্রতি ওর কোন লোভ নাই, রাজা হওয়ার প্রতিও কোন লোভ নাই, লোভ শুধু বনের প্রানিদের সেবা করার আকাংখা। ও নিশ্চয়ই বনে চিতাবাঘের কিংবা তার শিয়াল কুকুর বাহিনীর কোন অত্যাচার সহ্য করবেনা। ওকে যে করেই হোক সরিয়ে দিতে হবে বন থেকে।

কি করা যায়, কি করা যায় ভাবতে ভাবতেই শিয়ালের মাথায় একটা বুদ্ধি এল। এমনি এমনি একে তাড়িয়ে দিলে সবাই ওর প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়বে, সবাই সহমর্মিতা দেখাবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে সবাই বিড়ালকে ঘৃনা করে।

চিতাবাঘ রাজা হবার পরপরই তার কুকুরবাহিনী দিয়ে পুরো বনে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করল। অবাধে চলল দখল আর গুন্ডামী। আর শিয়ালেরা বিভিন্ন বুদ্ধি পাকাতে লাগল। প্রথমেই শিয়ালের দল বনের প্রত্যেক পাড়ায় পাড়ায় সকল নিরীহ প্রানীকে বলতে লাগল যে, "বিড়ালটা হল একটা চোর। ও তোমাদের খাবার চুরি করে খায়।" কেউ কেউ বিশ্বাস করল তাদের কথা, আবার অনেকেই বিশ্বাস করলনা। শিয়ালরা প্রত্যেক প্রানীদের মধ্যেকার একজন করে বিশ্বাসঘাতককে ভাড়া করল যাতে তারা তাদের প্রজাতির মধ্যে বিড়ালের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা রটাতে থাকে। মিথ্যা রটানোর প্রক্রিয়া চলতে লাগল ধুমধাম করে, এখন অনেকে একসাথে বিড়ালকে চোর বলায় আরো অনেকেই বিড়ালকে চোর ভাবতে লাগল। যদিও কেউ কোনদিন তাকে চুরি তো দুরে থাক,ভাল কাজ ছাড়া মন্দ কাজ করতে দেখেনি।

বিড়াল কিন্তু অবাক হলেও এ ধরনের প্রচারনাকে আমল দিলনা। সে কুকুরবাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন করতে লাগল। সবার অধিকারের ব্যপারে সাবধান করে দিতে লাগল। এতে করে সবাই তাকে চোর বলে বিশ্বাস করতে শুরু করলেও তার প্রতি সম্মানবোধ ফিরে আসতে লাগল। এ দেখে শিয়ালদেরতো খুব রাগ হল। শিয়ালেরা চিতাবাঘের কাছে ওর ব্যপারে এটা ওটা নালিশ দিয়ে ক্ষেপিয়ে দিতে লাগল। শেষে চিতাবাঘও তার কুকুর বাহিনীকে বিড়ালের ক্ষতি করতে হুকুম দিল। কোনদিন কুকুরের দল বিড়ালের ঘর ভেঙে দিয়ে আসেতো, কোনদিন তার খাবার কেড়ে নিয়ে আসে। আশপাশের অনেকে বিড়ালের পক্ষ নিয়ে কুকুরের বিরুদ্ধে লাগতে গিয়ে আহত হল। একইসাথে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারনা আর আক্রমনের পরিমান বাড়তে লাগল দিনকে দিন।

একদিন কুকুরের দল কয়েকটা বড় বড় হাড্ডি কেড়ে আনল। সেই হাড় কেড়ে আনার প্রতিবাদ করার জন্য বিড়াল তার সঙ্গী সাথিদের নিয়ে জড়ো হল। কিন্তু আদবহীন কুকুরেরা ঘেউ ঘেউ করে সবাইকে তাড়িয়ে দিল। এর কিছুক্ষন পরই কুকুরদের মধ্যে শুরু হল কোন্দল। কোন্দলের কারন হল চুরি করে আনা হাড়গুলোর ভাগাভাগি। ঘেউঘেউ আর কামড়া কামড়িতে রাত হয়ে গেল। ঝগড়া খানিকটা স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় একে একে এরা স্থান ত্যাগ করতে লাগলেও হঠাতই এক কুকুরকে সামনে পেয়ে বিপরীত পক্ষের কয়েকটা কুকুর একে মেরে ফেলল। এ হত্যার খবর শেয়ালদের কানে চলে গেল। খবর পেয়েই তারা নতুন বুদ্ধি আঁটল। তারা পুরো ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে নতুন নাটক অবতারনা করল। নিহত কুকুরের হত্যার পুরো দোষ তারা বিড়ালের উপর চাপাল, আহত সবাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বিড়ালের বিরুদ্ধে দোষ চাপাতে নির্দেশ দিল। বিশ্বাষঘাতক প্রচারক প্রানীগুলোও তাদের নিজেদের জাতির মধ্যে বিড়ালের বিরুদ্ধে হত্যার দায় চাপাতে লাগল। সেই সাথে আরেকদল কুকুরকে চিতাবাঘ বিড়াল ও তার সঙ্গী সাথিদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিল। সারা বনে যেখানে তাদেরকে খুজে পেল, সেখান থেকেই তাদেরকে ধরে খাঁচায় আটকে রাখা হল। বিড়ালকে মেরে ফেলার জন্য চেষ্টা হল। বিড়ালের অনেক সঙ্গী সাথিকে হত্যা করা হল। আবার সেই হত্যার জন্যেও বিড়ালকেই দায়ি করা হল।


জানিনা, চিতাবাঘ তার রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল কিন আজীবন। তবে, মজলুম যে চিরকাল মজলুমই থাকবে তাতো হতে পারেনা। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই সবকিছু খেয়াল করছেন। তিনি সঠিক বিচারই নিশ্চয় করবেন ঐ শেয়াল- কুকুরসহ চিতাবাঘের প্রতি। আর মজলুম রক্ষা পাবে জুলুম হতে।

সবার প্রতি শুভকামনা।

শেষ মানুষ ----ম ঈ ন উ দ্দী ন---

অবশেষে বিশ্বের শেষ জীবিত মানুষটিকেও হারাতে হল। ও একজন নারী ছিল। আজ সকালেই মারা গেছে সে। দেড় বছর ধরেই একে বাঁচিয়ে রাখার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। পৃথিবীর বংশধারাকে রক্ষার জন্য এ নারীটির জন্য একজন পুরুষ খোঁজা হচ্ছিল, কিন্তু ডাটাবেজে পুরুষের সংখ্যা আরো বিশ বছর আগে থেকেই শুন্য। নারীর সংখ্যাও তের হতে ধীরে ধীরে আজ শুন্যে পরিণত হল। আজ হতে পৃথিবীতে মানুষের রাজত্ব শেষ। শুরু হল অনুভূতিহীন একদল শ্রমিকের রাজত্ব। মানুষের হাতেগড়া রোবটই এখন এ পৃথিবীতে সর্বেসর্বা।

অনেক প্রাচীন আমলের কথা। তখন পৃথিবী ছিল সুজলা সুফলা। মানুষ কতই না সুখে শান্তিতে বসবাস করত সেখানে। হয়ত কোন বিলাসিতার সুযোগ ছিলনা তাদের, ছিলনা উন্নত যোগাযোগ কিংবা উৎপাদন ব্যবস্থা। সুচিকিৎসার অভাব ছিল কিন্তু প্রকৃতি মানুষকে আগলে রাখত নবজাতক শিশুর মত করে। ধীরে ধীরে মানুষ নিজেদের উন্নতি করতে লাগল। জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতি করতে করতে শীর্ষে পৌছে গেল। তারা যতই বিজ্ঞানে উন্নত হতে থাকল, তাদের মনুষ্যত্ব ততই ধীরে ধীরে কমতে লাগল। তারা নির্বিচারে তাদের মায়ের মত প্রকৃতিকে নষ্ট করল। গাছ কেটে সাফ করে ফেলল। পরিবহন আর ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের নামে বায়ুমন্ডলকে ধোঁয়া দিয়ে ছেয়ে দিল। উৎপাদনের নামে পানিতে বিষ মিশিয়ে দিল। সম্পদ-ক্ষমতার লোভ মেটাতে শান্তির নামে হত্যা করতে থাকল স্বজাতি মানুষকে। প্রকৃতিও নিষ্ঠূর হতে বাধ্য হল। হুমকি দিল এ মানুষের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে।

২০০৯ এর শেষের দিকে কোপেনহেগেনে বিরাট এক সম্মেলন হয়েছিল। সবার ধারনা ছিল, এবার বোধহয় পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব বাচানোর ব্যপারে কোন সমাধানে আসা যাবে। কিন্তু না, সে সম্মেলন পৃথিবীর ভবিষ্যত অনেকটাই নিশ্চিত ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তৃতীয় বিশ্বকে ঠকিয়ে উন্নত বিশ্ব নিজেরাই নিজেদের বিপদকে এগিয়ে নিয়ে এল। তৃতীয় বিশ্বকে হয়ত একটু আগেই পৃথিবী হতে নিশ্চিহ্ন হতে হয়েছে, কিন্তু উন্নত বিশ্বও বাঁচতে পারেনি প্রকৃতির প্রতিশোধের হাত থেকে। উন্নত বিশ্বও জানত তারাও প্রকৃতির কোপানলে পড়তে যাচ্ছে, তাই তারা নতুন পরিকল্পনা গ্রহন করে বাঁচার শেষ চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

প্রকৃতির প্রতিশোধ হতে বাঁচতে মানুষ প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বেশি বাড়িয়ে দিল। বাসগৃহের ভেতরের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রনের জন্য আরো আধুনিক বায়ুনিয়ন্ত্রন যন্ত্র নির্মান করা হল। বায়ু পরিশোধনের যন্ত্রও আবিষ্কার করা হল, যা গৃহের বায়ুকে পরিশোধিত করলেও, বাইরের বায়ুকে আরো বেশি মাত্রায় দূষিত করে। নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা আরো উন্নত ও সহজে ব্যবহারযোগ্য করা হল। সারা বিশ্বের সব মানুষের তথ্য একটা ডাটাবেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হল। সারা বিশ্বের মানুষকে নিয়ন্ত্রন করার জন্যে সেই ডাটাবেজের নিয়ন্ত্রন রাখল আমেরিকার সরকার। তারা সারা বিশ্বের সকল মানুষের কাজকর্ম এবং যে কোন সময়ের অবস্থান জানতে পারল মাউসের মাত্র একটা টিপের মাধ্যমে। ভার্চুয়াল অফিস ব্যবস্থা তৈরী করা হল। যার ফলে, মানুষ ঘরের বাইরে না গিয়েও তার অফিসের কাজকর্ম করতে পারে। ধীরে ধীরে অফিস আদালত সব বন্ধ হয়ে গেল, ভার্চুয়াল জগতের ভার্চুয়াল অফিসে নিয়মিত কার্যক্রম চলতে থাকল। পরিবহন ও অন্যান্য শ্রমের জন্য বিপুল পরিমান রোবট তৈরী করা হল। রোবট শ্রমিকরা দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে চালিয়ে নিতে থাকল।

২০৬০ সাল নাগাদ উন্নত বিশ্বের হাতে কয়েক কোটি রোবট আর ভার্চুয়াল অফিসিয়াল সিস্টেমের সুফল আসতে থাকল। ততদিনে পৃথিবীর আবহাওয়া সাধারন মানুষের বসবাসের অযোগ্যতায় পরিপূর্ন হল অনেকখানি। গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া উন্নত বিশ্বের খায়েশ মেটাতে গিয়ে প্রচন্ড বেড়ে গেল। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেল হুড়মুড় করে। দক্ষন আর উত্তর মেরুর বরফ গলে অর্ধেকে নেমে গেল। দক্ষিন এশিয়াসহ নিচু ভূমিগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেল। আন্ত:দেশীয় দন্দ্ব আর হিংসার কোপানলে পড়ে প্লাবিত দেশের মানুষ প্রতিবেশী দেশের কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়ে ডুবে মরল। আর যারা তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থান পেল, তাদেরকেও না খেয়ে মরতে হল। কৃষির উপর জোর কম দেয়ায়, উন্নত বিশ্ব ভূমিহীনদের জন্য তেমন কোন সাহায্যই করতে পারলনা।

উন্নত বিশ্বের নারীগন সন্তানগ্রহনে তেমন আগ্রহী নয়। অপরদিকে ভারত সহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মানুষ তাদের সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদেরকে এ প্রতিকূল পৃথিবীতে আসতে দিলনা। ফলে আর মাত্র একশ বছরের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে এল। এদিকে পরিবেশ বিপর্যয় কিন্তু থেমে থাকলনা। উন্নত বিশ্বের মানুষকে আরামে রাখতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উদ্গীরন বেড়েই চলল। আরো একশ বছরের মধ্যেই বায়ুমন্ডলে ওজোন স্তর বলে আর কিছুই থাকল না। অতিবেগুনী রশ্মী আর সূর্যের প্রলয়ংকরী বিভিন্ন আলো পৃথিবীকে আলোকিত করার পাশাপাশি অন্ধকারের ডোবায় নিক্ষেপ করল। বাইরে বেরুলেই ক্যন্সার এমন একটা অবস্থা তৈরী হল। যাদেরকে বাধ্য হয়ে ঘরের বাইরে যেতে হল, তাদের সবাইকেই ভয়াবহ এই রোগে আক্রান্ত হতে হল। কোটি কোটি মানুষ শুধু চামড়া ক্যন্সারেই মারা গেল। দক্ষিন আর উত্তর মেরুতে বরফ বলে কিছুই থাকলনা, ফলে প্লাবিত হল আরো অনেক ভূমি। এভাবেও ধ্বংশ হল অনেক জাতি। উন্নত বিশ্বের আরামের জন্য নিয়োজিত বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স বিলাস দ্রব্য উৎপাদন কারখানার বর্জ্যগুলো এতই ভয়ংকর ছিল তা মাটি এবং সাগর-নদীল পানির সাথে সাথে ভূগর্ভস্থ পানিকেও নষ্ট করে দিল। ফলে রোবট কৃষকের ফলানো ফসল এবং আধুনিক স্বয়ংক্রিয় জেলে জাহাজের ধরা মাছগুলোও বিষক্রিয়ার ফলে খাওয়ার অযোগ্য হয়ে গেল। আমেরিকার ডাটাবেজে যখন জীবিত মানুষ হিসেবে শুধু উন্নত বিশ্বের মানুষের তালিকা, তখন সে তালিকাও হঠাৎ করে খুব দ্রুত ছোট হতে লাগল। হাতেগোনা যে কয়জন বিজ্ঞানী বেচে ছিলেন তারা বিষক্রিয়া নিয়ন্ত্রনের যন্ত্র বানালেও, কিছুদিনের মধ্যেই ফসলের বিষক্রিয়ার মাত্রা এ যন্ত্রের ক্ষমতার বাইরে চলে গেল।

২২৫০ সাল। আমেরিকার ডাটাবেজে জীবিত মানুষের সংখ্যা মাত্র তের লক্ষ। এদের সবাইই আমেরিকা আর ইউরোপের সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারের লোকজন। আরেকটা ডাটাবেজে সারাবিশ্বে নিয়োজিত রোবটের তালিকা। এদের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিলেন পৃথিবী ভ্রমনে বের হবেন। পৃথিবী আজ ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে, এ অবস্থা হতে বাঁচবার কোন উপায় আছে কিনা তা তিনি সরেজমিনে দেখবেন। গত দুশ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম আমেরিকার কোন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউস হতে বেরুচ্ছেন। একটা সুনিয়ন্ত্রিত উড়োজাহাজে করে তিনি আকাশের অনেক নিচু হয়ে ধীরে ধীরে উড়ে পৃথিবী পর্যবেক্ষন করতে লাগলেন। ইউরোপ, আমেরিকা আর আফ্রিকার কিছু অংশ এখনো তলিয়ে যায়নি। অস্ট্রেলিয়া ছোট্ট একটা প্রবাল দ্বীপে পরিণত হয়ে টিকে থাকলেও সেখানে কোন মানুষ নেই। এন্টার্কটিকার দিকে যাওয়ার চিন্তা মাথায়ও আনলেন না মি: প্রেসিডেন্ট। আফ্রিকায় কেউই রোগবালাই জয় করে টিকে থাকতে পারেনি। সেখানকার সব স্থাপনা স্থবির হয়ে গেছে। প্রত্নতাত্নিক নিদর্শনে পরিণত হয়ে গেছে সবকিছুই। এখানে ওখানে মানুষের হাড় পড়ে আছে।

আমেরিকা আর ইউরোপকে দেখে মি: প্রেসিডেন্ট অনেকটাই স্বস্তিবোধ করলেন। সেখানে এখনো জীবনের ছায়া পাওয়া যায় ভেবে গর্বিত হলেন। তিনি দেখলেন আটলান্টিকে স্বয়ংক্রিয় অসংখ্য মাছধরা জাহাজ মাছ ধরে যাচ্ছে। জাহাজ ভরে গেলে তা ফিরে আসছে বন্দরে। বন্দরের স্বয়ংক্রিয় ক্রেন মেশিনগুলো সে মাছগুলোকে জাহাজ হতে আনলোড করছে অতিদ্রুততার সাথে। সে মাছগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত লরিগুলো বহন করে নিয়ে যাচ্ছে প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে। সেখানকার স্বয়ংক্রিয় রোবটগুলো সে মাছকে প্রক্রিয়াজাত করে পাঠিয়ে দিচ্ছে হিমাগারে। হিমাগারে নিয়োজিত রোবটগুলো অনলাইনে পাওয়া অর্ডারগুলোকে জায়গামত পাঠিয়ে দিচ্ছে ছোট্ট কাভার্ড ভ্যানে করে। অর্ডারের পরিমান উৎপাদনের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায়, উৎপাদিত মাছ সংরক্ষনের জন্যে নতুন নতুন হিমাগার তৈরী করা হচ্ছে। নির্মানকাজে নিয়োজিত অসংখ্য রোবট হিমাগারসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মানের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে নিরবে। অথচ এত উৎপাদনের আর কোন দরকার নাই। বিদ্যুত আর অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি ঠিক করার দায়িত্ব পালন করছে আরেকদল ইলেক্ট্রিশিয়ান রোবট। তারা গোটা জীবিত অঞ্চলসহ মৃত অঞ্চলেও দায়িত্ব পালন করছে নিরবে। তাদের বোঝার কোন ক্ষমতা নেই যে, মৃত অঞ্চলে এর আর কোন দরকার নেই। কৃষি হতে শুরু করে সব স্তরেই কাজ করে যাচ্ছে এমন প্রায় তিনকোটি রোবট। মি: প্রেসিডেন্ট

আদর্শ যুবসমাজ গঠনে মহানবী (স:) এর ভূমিকা

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সটির সীরাতুন্নবী (স:) পালন উপলক্ষ্যে আয়োজিত নির্ধারিত বক্তব্য প্রতিযোগীতায় উপস্থিত সম্মানিত শিক্ষক ও সহপাঠী বন্ধুরা, আসসালামু আলাইকুম। আজকের প্রতিযোগীতার বিষয় নির্ধারন করা হয়েছে “আদর্শ যুবসমাজ গঠনে মহানবী (স:) এর ভূমিকা”।

আজ থেকে প্রায় দেড় সহস্র বছর আগের আরব ছিল পুরোপুরি শাষনের অযোগ্য। তাদের সভ্যতা ছিল তৎকালীন সকল সভ্যতার তুলনায় বর্বর। পুরো আরব অসংখ্য গোত্রে গোত্রে বিভক্ত ছিল। এই গোত্রগুলো একে অপরের সাথে সারাবছরই যুদ্ধে লিপ্ত থাকত। একে অপরের উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে অকাতরে রক্ত ঝরাত। আর এসব যুদ্ধে সবচে বেশি হিংস্রতার এবং জিঘাংসার উদাহরন তৈরী করত ঐ সকল গোত্রের যুবকেরা। নারীরা সেসব যুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিলেও তারা পেছন থেকে অনুপ্রেরনা দিত। সমাজের কবি সাহিত্যিকরাও উত্তাল রক্তের যুবকদেরকে প্রতিশোধ গ্রহনের প্রতি বাসনাকে উস্কে দিত। আর এই যুদ্ধের জের ধরে নিষিদ্ধ কয়েকটি মাস ছাড়া বাকি সব সময়ই হত্যা ও সম্পদ বিনাস চলতে থাকত। শক্তিশালীদের হাতে প্রতিনিয়ত লুন্ঠিত হত দুর্বলের সম্পদ। মদ ও জুয়া ছিল যুবকসহ সকল বয়সের মানুষের নিত্য সঙ্গী। তৎকালীন সুপারপাওয়ার ইরান এবং রোমান সম্রাজ্য কখনোই এই উচ্ছৃংখল আরবদের শাষন করার দু:স্বপ্ন ভুলেও দেখতনা। তাদের মতে, আরবদের কাছ থেকে ভাল কিছুই আশা করা সম্ভব নয়।

সামান্য কারনেও যেই আরব গোত্রীয় কোন্দলে মুখর হয়ে যেত, যুবকের দল রক্তপিপাসু হয়ে যেত সেই আরবে ৫৭০ খ্রীস্টাব্দে জন্ম নিল এক শিশু। তাঁর নাম রাখা হল মুহম্মদ। তিনিই আমাদের প্রিয় রাসূলুল্লাহ হযরত মুহম্মদ (স)।

মুহম্মদ (স) এর জীবনকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে নবুওয়াত লাভের পূর্বের অংশ এবং অপরটি হচ্ছে নবুওয়াত লাভের পরের অংশ। আদর্শ যুবসমাজ গঠনে জন্য তাঁর জীবনের এ দুটি অংশেই তিনি ভূমিকা রেখে গিয়েছেন।

পরিশ্রমী মুহম্মদ (স)
নবুওয়াতের পূর্বের জীবনকে খতিয়ে দেখলে আমরা দেখতে পাই তিনি শৈশব থেকেই অত্যন্ত পরিশ্রমী জীবন যাপন করেছেন। দুধমা হালীমার কাছে থাকতে তিনি মাঠে মেষ চড়াতেন। চাচা আবু তালিবের কাছে অবস্থানকালেও তিনি মেষ চড়াতেন এবং চাচার ব্যবসায়ে সাহায্য করতেন। তিনি চাচার সাথে বানিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়ায়ও গিয়েছিলেন। আর যুবক বয়সে তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

সততা ও নিষ্ঠা
মুহম্মদ (স) এর সততা ও নিষ্ঠা এ দুয়ের সমন্বয় সেই আরব সমাজে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছিল। সেই আরব সমাজের মানুষ বেশিরভাগ সময়ই মিথ্যের মাধ্যমে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করত। ওজনে কম দেয়া, জিনিস পত্রে ভেজাল দেয়া, আমানত এর খেয়ানত করা ইত্যাদি সেখানকার ব্যবসায়ীসহ সকল মানুষের জন্যই নিয়মিত ব্যপারে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। অপরদিকে মুহম্মদ (স) সে সমাজে আমানতদারিতার ও সততার এক আলোকিত উদাহরন তৈরী করেছিলেন। এ জন্যে সকলে তাঁকে আল-আমীন বলে ডাকত এবং সবচে বেশি বিশ্বাস করত।

মানবতাপ্রেমের দৃষ্টান্ত
নবুওয়াত লাভের আগ থেকেই তাঁর মাঝে মানবতার প্রতি প্রেমের দৃষ্টান্ত দেখা যায়। আরবের যুবকেরা যখন প্রতিপক্ষ গোত্রের মানুষের রক্ত ঝরানোর উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করত, তখন মুহম্মদ (স) যুবক হয়েও তা না করে বরং যুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত তৈরীর চেষ্টা করেছেন। এজন্যে তিনি কিশোর বয়সেই সমবয়সীদের নিয়ে হিলফুল ফুযুল নামে একটি সংঘও গড়ে তুলেছিলেন । কাবা ঘরের হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে তৈরি হতে যাওয়া গোত্রীয় সংঘাত তিনি খুব সফলভাবে সমাধান করেছিলেন। তৎকালীন আরবে দাসপ্রথা চালু ছিল। দাসদের সাথে খুব দুর্ব্যবহার করা হত। অথচ মুহম্মদ (স) দাসদের সাথে খুব মধুর আচরন করতেন। তাঁর এক দাস যায়েদ বিন হারেস (রা) কে তিনি নিজের পালক পুত্র বলে গ্রহনও করেছিলেন।

নবুওয়াত পরবর্তী অবদান
মুহম্মদ (স) ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত লাভ করলেন। শান্তির বাহকে পরিণত হলেন আরবের এ যুবক। ধারাবাহিকভাবে শান্তির বানী পৌছে দিলেন সবার দ্বারে দ্বারে। প্রথমে মক্কার অল্প কজন তাঁর দাওয়াত গ্রহন করল। ইসলাম প্রচারের অপরাধেই আরবের সকলের চোখের মণি মুহম্মদ পরিণত হলেন চোখের কাটায়। একের পর এক নতুন নতুন অত্যাচার আসতে থাকল তাঁর এবং তাঁর অনুসারীদের উপর। অসীম ধৈর্য্য নিয়ে সকল অত্যাচার মাথা পেতে নিয়ে গুটিকয়েক মুসলিমকে নিয়ে তিনি তাঁর দাওয়াত চালিয়ে গেলেন। মদ-জুয়া আর রক্তে মাতাল আরবের যুবসমাজ পরিণত হল পৃথিবীর শান্তি প্রতিষ্ঠার সৈনিক হিসেবে। আওস-খাযরাজের চির সংঘর্ষের ভূমি ইয়াসরিবকে পরিণত করলেন শান্তির কেন্দ্রভূমি মদিনাতুল নববীতে। মক্কা বিজয়ের পর অত্যাচারী কাফেরদের তিনি ক্ষমা করে দিয়ে তৈরী করলেন বিজয়ীদের জন্য এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত।


আরবের যুবসমাজকে তিনি পরিবর্তন করে নিতে পেরেছিলেন। তিনি এমন এক যুব সমাজ তৈরী করেছিলেন যা সারা বিশ্বের যুবকদের জন্যই আজ এক আদর্শ। তিনি আবু বকর সিদ্দিক (রা), হযরত আলী (রা), ওমর (রা), ওসমান (রা) সহ অসংখ্য যুবককে শ্রেষ্ঠ্ মানুষে পরিণত করেছিলেন। শাষনের অযোগ্য আরবের যুবকদেরকে পরিণত করেছিলেন সারা বিশ্বের যোগ্য শাষকে।

আজকের যুবসমাজও ঘোর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। বিষাক্ত জিনিসগুলোর চাকচিক্য মরিচীকা হয়ে তাদেরকে ধীরে ধীরে ধ্বংশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের কর্মক্ষমতাকে প্রবাহিত করা হচ্ছে বিপথে। প্রভাবশালী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলো এখন প্রকাশ্যেই যুবকদেরকে আহবান করে এই বলে যে, “বন্ধু – আড্ডা আর গানে হারিয়ে যাও”। সত্যিই হারিয়ে যেতে বসেছে আজকের যুবসমাজ। এই যুবসমাজকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন প্রিয় রাসূল (স) এর শিক্ষার বাস্তব চর্চার। তিনি তাঁর পুরো জীবনে উদাহরনের মাধ্যমে যা যা শিখিয়েছেন সেগুলো হচ্ছে সততা, নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, পরিশ্রম, আমানতদারীতা, মানুষের প্রতি ভালবাসা এবং ধৈর্য ইত্যাদি সকল সৎ গুনাবলি। এ গুনাবলি অর্জনের জন্য তিনি দুটো জিনিস রেখে গেছেন। সেদুটো জিনিস হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহ। আমরা যুবকরা যদি এদুটো উৎস হতে যথাযথ জ্ঞানার্জন করে রাসুলুল্লাহ (স) এর সৎগুনাবলী গুলো অর্জন করতে পারি তবে আমরা আবারও পরিণত হতে পারব সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিতে।


ধন্যবাদ সবাইকে