Wednesday, May 18, 2011

রাগী মানুষ রাগী কেন?

“মালীটা ভীষন পাজী। বাগানে ঢুকতে তো দেয়ই না, যখন পাশ দিয়ে হেঁটে যাই তখনো কেমন খাঁকিয়ে ওঠে।“ এমনই ভাবতে ভাবতে ভোলা মিয়ার বাগানটার দিকে তাকাচ্ছিল আর বাগানের আধপাকা আমগুলোর দিকে তাকিয়ে জীভের জলটুকু গিলে নিল আশিক। স্কুল থেকে ফেরার পথে সে প্রতিদিনই রাস্তায় না এসে ক্ষেতের আল দিয়ে বাড়ি ফিরে সময় বাচানোর চেষ্টা করে। এ পথে এসে সময় বাচুক আর না বাচুক, এ পথে এলে বাগানের মালীটাকে চোখে না পড়লেই আশিক আর তার বন্ধুরা টুপ করে ঢুকে পড়তে পারে বাগানে। মাঝে মাঝে মালীটার চোখ এড়িয়ে দুএকটা পড়ে থাকা আম ব্যাগেও ভরে নেয় সে।

রহমত, ভোলা মিয়ার বাগানের মালী, প্রচন্ড রাগী আর সজাগ। বাগানের আশপাশ দিয়ে কাউকে যেতে দেয়না। সারাদিন আর রাত বাগানেই থাকে সে। এমনকি ভোলা মিয়ার ছেলেমেয়ে আর বউও বাগানে ঢুকতে ভয় পায়, চোর বলে তাড়িয়ে না আবার কোন বিতিকিচ্ছিরি কাহিনী ঘটায়, পাছে ইজ্জত ঐ আম গাছের উপর উঠে যায়। তার চেয়ে ভাল আম কিংবা ফল খাওয়ার সময়-অসময়ের ইচ্ছেগুলো দমিয়ে রাখাটা শ্রেয় মনে করে তারা। তবে ভোলা মিয়া তার পরিবারের জন্য ফল-ফলাদি রহমতকে দিয়ে পাড়িয়ে বাড়িতে এনে রাখে। আর মাঝে মধ্যে পাড়ার মুরুব্বী আর বন্ধু-বান্ধবকেও বিশাল বাগানে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে আয়েশ করিয়ে বিভিন্ন ফল খাইয়ে দেয়। আর বিদায়ের সময় আবার আসার এবং ভোলা মিয়ার অবর্তমানে প্রয়োজন হলে যাতে রহমতের কাছ থেকে বাগানের ফল পাড়িয়ে নিয়ে যায় সে কথা মনে করিয়ে দেয়। সত্যিই ভোলা খুবই ভাল মানুষ। কিন্তু ভোলা যতই ভাল হোক রহমত মালীকে বলে ফল পাড়িয়ে নেবে এটা ভোলার বন্ধু-বান্ধব কিংবা পাড়ার মুরুব্বী স্বপ্নের মধ্যে ভেবেও আঁতকে উঠে। এটা প্রচন্ড অসম্ভব কাজ, রহমতের কাছে তারা ফল চাইবে কি, বাগানের আশপাশ দিয়ে কেউ গেলেই তাকে চোরের মত তাঁড়িয়ে দেয় রহমত।

উপরের ছোট্ট গল্পে রহমত নামের একজন মালীকে পাওয়া গেল যিনি প্রচন্ড রাগী। তিনি কেন রাগী? তিনি রাগী কেননা তিনি সময়ে অসময়ে ভোলা মিয়ার বন্ধু-বান্ধব, পাড়ার মুরুব্বী কিংবা বউ-ছেলেমেয়ের জন্য ফাই-ফরমাশ খাটতে আগ্রহী নন। আর এ থেকে বেচে থাকতেই তার রাগী হওয়া, বাগান দেখাশোনার খাতিরেই তার সজাগ থাকতে হয়, আর তার সাথে কিছুদিন রাগ দেখালেই বেশ কিছু দায়িত্ব থেকে বেচে যাওয়া যায় দেখে সে সেই পন্থা অবলম্বন করলেন। এ থেকে বোঝা যায়, আসলে রাগী মানুষ তার দায়িত্ব থেকে বেচে যাওয়ার জন্যে রাগী স্বভাবটা জিইয়ে রাখে। যেমন রাগী পিতা তার সন্তানের অবারিত স্নেহ পাবার অধিকারকে হরণ করার জন্যে তার সামনে রাগী হিসেবে আবির্ভূত হয়, যাতে সন্তানের সব দাবী পূরন করতে না হয়, কিংবা সন্তানকে বেশি সময় দিতে না হয়। যেসব শিক্ষক বা শিক্ষিকা তার ছাত্র-ছাত্রীকে পড়া বুঝিয়ে দিতে পারেনা, কিংবা তাদের প্রশ্নের জবাব সঠিকভাবে দিতে পারেনা, তাদেরকেই আমরা প্রচন্ড রাগী শিক্ষক বলে চিনি। মানুষের সম্পদ কেড়ে নেবার জন্যেই সরকারী আমলা আর ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসীরা প্রচন্ড রাগী হয়। রাগী মনিব তার কর্মচারীকে ঠকানোর জন্যে রাগী স্বভাব ধরে রাখে আর নিজের সকল অপারগতা কে লুকিয়ে রাখার জন্যেই কর্মচারীকে প্রচন্ড রাগ দেখিয়ে সব কাজ আদায় করার চেষ্টা করে।

আরেকটা ছোট্ট উদাহরন দিয়ে শেষ করি। মি. রফিক তার অফিসের কেয়ারটেকারকে সামান্য একটু কাগজের টুকরা মেঝেতে পড়ে থাকার অপরাধেও প্রচন্ড বকাবকি করেন। এর কারন হচ্ছে, তিনি আসলে প্রচন্ড অগোছালো আর ময়লা একজন মানুষ। তিনি তাঁর ঘরের বিছানাও ঝাড়ার মানসিকতা রাখেননা, সামান্য ধুলাও তিনি ঝাড়তে পারেনা, এমনকি অফিসের মেঝেতে তাঁর হাত থেকে পড়া ছোট্ট কাগজের টুকরাও একটু সরিয়ে রাখতে তার পছন্দ নয়। সেই না পারাকে ঢাকতে, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করার ব্যাপারে সামান্য অবদানও যাতে তাঁর রাখতে না হয় সেজন্যে তিনি একজন রাগী মানুষ।


No comments: