প্রথমে একটা ছোট্ট বানোয়াট গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। অনেকদিন আগে এক দুশ্চরিত্র জমিদার বাস করত। সে প্রচন্ড গালীবাজ, ধোঁকাবাজ এবং চরিত্রহীন ছিল। তার মুখের প্রত্যেকটি কথার মধ্যে এত পরিমান গালি-গালাজ মিশে থাকত যে, তা পুরোই অশ্রাব্য ছিল। প্রতি রাতেই তার বিছানায় এলাকার কোন নিরীহ লোকের কন্যা সন্তান কিংবা সুন্দরী স্ত্রীকে চাই-ই চাই। সে জনগনকে বিভিন্ন রকমের ধোঁকা দিয়ে বেশি বেশি কর আদায় করে নিত। জমিদারী দেখাশোনার জন্য একদিন সে ঘোড়ার গাড়িতে করে, অসংখ্য পাইক-পেয়াদার পাহারায় বের হল। এক গাঁয়ে গিয়ে দেখে তার পেয়াদারা সেখানে এক লোককে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছে। জমিদার এর অপরাধ জানতে চাইলেন। পেয়াদা তাঁকে জানালেন, “হুজুর, এ বদমায়েশ আমাদের মধ্যেকার এক পেয়াদাকে গালি দিয়েছে।“ শুনে জমিদার মহাশয় প্রচন্ড রাগ করলেন। এই প্রজার সাথে সাথে সকল প্রজার গুষ্ঠি গালাগালী করে উদ্ধার করার পর আদেশ দিলেন, “একশ বেত্রাঘাত কর একে। এটাই হল তার উপযুক্ত শাস্তি।“ তারপর জমিদার মহাশয় আবার যাত্রা শুরু করল। কিছুদুর যেতেই দেখল, আরেকটা গাঁয়ে তার আরেক প্রজাকে পাইক-পেয়াদারা গাছের সাথে বেঁধে রেখেছে। এর অপরাধ এই প্রজা একটা মেয়ের দিকে ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে ছিল, পেয়াদারা ঘটনাস্থল থেকে একে বন্দী করে এনেছে। জমিদার এর জন্যেও শাস্তির ব্যবস্থা করলেন। এবার শাস্তি দুইশ বেত্রাঘাত। সেই সাথে আদেশ দিলেন, “কে সেই সুন্দরী যার দিকে এই প্রজা এমন করে তাকিয়ে ছিল? তাকে আজ রাতে আমার বিছানায় চাই।“ পেয়াদার জমিদারের হুকুম তামিল করতে ছুটে গেল। জমিদার আবার এগোতে লাগল। আরো কিছুদুর যেতেই দেখল আরেক প্রজা কোন এক অজানা অপরাধে গাছের সাথে আটকে আছে। এর অপরাধ ধোঁকাবাজির। এই প্রজা তার স্ত্রীর সম্ভ্রম জমিদারের হাত থেকে বাচানোর জন্য বাড়িতে উঁচু দেয়াল বানিয়েছে যাতে তার স্ত্রী কোন পাইক পেয়াদা কিংবা দুশ্চরিত্র জমিদারের চোখে না পড়ে। জমিদারের সাথে এত বড় ধোঁকাবাজির অপরাধে তাকেও বেধে রাখা হয়েছে গাছের সাথে। জমিদার একেও শাস্তি দিলেন, তিনশ ঘা বেত্রাঘাত।
কোন দিন যদি প্রজারা সব একত্র হয়ে এই জমিদারকে ঠিক জমিদারের প্রজাদেরকে দেয়া শাস্তির মত করে শাস্তি দেয় তবে জমিদার ব্যাটা সারাজীবন ধরে বেত্রাঘাত খেয়েই যেত। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “চোরের মায়ের বড় গলা” এ প্রবাদটা সকল চোরের জন্যই সত্য। তারাই আইনের প্রয়োগটা সবচেয়ে বেশি করে, যারা আইন বেশি করে ভাঙে। অপরাধীদের ক্ষমতায় আরোহন তাদেরকে নিজেদের অপরাধ ঢেকে রাখতে সহায়তা করে এবং আর আরোহনকারীগন সাধারনত আইনের যত্রতত্র ব্যবহার করে নিজেদের আসনকে পাকাপোক্ত রাখতে চেষ্টা করে। (চলবে)
No comments:
Post a Comment