ভোর হতেই সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। আজকে লাংকাবীর দ্বীপপুঞ্জে বোটে করে ঘোরাঘুরি করা হবে। প্রস্তুতি নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম, কিছুক্ষনের মধ্যে একটা মাইক্রোবাস এসে আমাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে গেল সাগরপাড়ে। সেখানে অনেকগুলো বোট অপেক্ষা করছে পর্যটকদের জন্যে।
|
পর্যটকদের অপেক্ষায় লাংকাবি আইল্যান্ড হপিং বোট |
আমাদের জন্যে নির্ধারিত বোটটায় উঠে পড়লাম। আইল্যান্ড হপিং লাংকাবির অন্যতম একটি পর্যটন আকর্ষন, মালেশিয়ান ও নন মালেশিয়ান সবাই এখানে এলে সুযোগটা হাতছাড়া করে না। আমাদের বোটে আমরা ছাড়াও ফুটফুটে দুটো শিশু কন্যাকে নিয়ে একটি মালেশিয়ান দম্পতি উঠেছিলো। তাঁরাও প্রথমবার লাংকাবিতে এসেছেন, তাঁদের সাথে একসাথে সময়টা ভালই কেটেছে।
বোট ছাড়ার পর সাগরেই কিছুক্ষনের জন্যে বোটটা থামানো হলো। বোটম্যান আমাদেরকে বাঁপাশে থাকা একটা দ্বীপ দেখালো। দ্বীপটার নাম ভুলে গেছি, তবে দ্বীপটা দেখলে মনে হয় যেন একজন প্রেগন্যান্ট মহিলা শুয়ে আছেন। একারনে এ দ্বীপকে অনেকে প্রেগন্যান্ট ল্যাডি আইল্যান্ড বলে থাকে।
|
প্রেগন্যান্ট লেডি আইল্যান্ড |
বোটে স্টার্ট দিয়ে বোটম্যান কিছুদুর নিয়ে আরেকটি দ্বীপে নিয়ে গিয়ে থামালো। দ্বীপটিতে লাংকাবী দ্বীপপুঞ্জের উদ্ভব ও মৃত্তিকা কাঠামো নিয়ে একটি প্রদর্শনির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে প্রায় ঘন্টা খানেক থাকা হয়েছিলো।
|
দ্বীপের ল্যান্ডিং জেটি থেকে |
এ দ্বীপে ভীড় অনেক। একসাথে কয়েক হাজার পর্যটককে নামতে দেখলাম। বেশিরভাগই বোটে এসেছেন।
|
জিওফরেস্ট পার্ক দ্বীপের ল্যান্ডিং জেটি |
দ্বীপের ভেতরে একটা চমতকার লেক আছে। সেখানে কৃত্রিম ও অকৃত্রিম ভাবে একটা চমতকার পুল বানানো হয়েছে। চারপাশে উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে একটা প্রাকৃতিক সুইমিং পুল, পুরোপুরি ভিন্ন এক জগত।
|
প্রাকৃতিক সুইমিং পুল |
এ দ্বীপ ছেড়ে আবার বোট তার যাত্রা শুরু করলো। এবারের গন্তব্য লাংকাবির অন্যতম প্রধান আকর্ষন "ঈগল'স নেস্ট"। কিন্তু পথিমধ্যে দেখা দিলো বিপাক, আমাদের বোট গেলো নষ্ট হয়ে। নষ্ট বোট নিয়ে প্রায় আধঘন্টা ভেসে বেড়ানোর পর সাহায্য এসে পৌছুলো, আরেকটি বোট এসে আমাদের বাকি গন্তব্যগুলোয় নিয়ে গেলো।
|
মোড়ের ওপাশ থেকে আসা একটি জাহাজ, হঠাত আমাদের বোটটা দেখে সময়মত মোড় নিয়ে ঘুরে যেতে পেরেছিলো |
মূলত লাংকাবি মানেই হলো "ঈগল পাখি"। পুরো দ্বীপপুঞ্জেই ঈগলের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ছিলো, তা থেকেই দ্বীপপুঞ্জের নাম লাংকাবি হয়েছে। তবে এখন ঈগল পাখিগুলোকে বিশেষ উপায়ে দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপে এনে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন বেলা করে ঈগলের জন্যে ঐ দ্বীপটির আশপাশের সাগরে তাজা মাছ খাবার হিসেবে দেয়া হয়, যা ঈগলগুলো শিকার করে খেতে পারে।। ফলে ঈগলগুলোকে শিকারের অভাবে এ দ্বীপ ছেড়ে দুরে কোথাও যেতে হয়না।
|
বোট দেখে খাবারের আশায় খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়া একটি ঈগল |
|
|
|
দ্বীপের গাছগুলোর মগডালে এরকম অসংখ্য ঈগলকে বসে থাকতে দেখা যায় |
ঈগল'স নেস্টের পর আমাদের সর্বশেষ গন্তব্য "বেরাস বাসাহ আইল্যান্ড"। এক কথায় চমতকার একটা আইল্যান্ড এটি, ছবির মত সুন্দর।
|
বেরাস বাসাহ আইল্যান্ডের সৈকত |
স্নোরকেলিং সহ চমতকার চমতকার কিছু অভিজ্ঞতা নিতে পারেন এ দ্বীপে। সৈকতের পাশেই সব ধরনের যন্ত্রপাতি স্তুপ করে রাখা আছে, নির্দিষ্ট রেন্টের বিনিময়ে আপনি সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন, এবং এক্সপার্ট সাহায্যের জন্যে যথেষ্ট লোকবলও সেখানে রয়েছে।
|
স্নোরকেলিং গিয়ার |
বেরাস বাসাহ এ প্রায় দুটা ঘন্টা থাকার পর সেখান থেকে আমরা সোজাসুজি বোটে করে মেইন আইল্যান্ডে ফিরে এলাম। গাড়িতে করে আমাদেরকে হোটেলে পৌছে দেয়া হলো। হোটেলের সুইমিং পুলে আরো ঘন্টাখানেক দাপাদাপি শেষে হোটেলরুমে গেলাম।
আমাদের হোটেলের ঠিক সামনেই একটা মিউজিয়ামের মত রয়েছে। সাগরের বিভিন্ন প্রানীদেরকে এখানে রাখা হয়েছে প্রদর্শনীর জন্যে। লাঞ্চের পর ঢুকে পড়লাম সেখানে। একুরিয়ামে রাখা চমতকার আর আজগুবি হাজারখানেক প্রানী দেখার সুযোগ হলো।
|
সমুদ্র বসবাসকারি আজগুবি একটা প্রানী |
|
জীবন্ত পাখি |
|
বিশালাকার একুরিয়ামের অনেক মাছই মানুষের সাইজের চাইতেও বড় |
|
সিল আর পেঙ্গুইনও রাখা আছে বিশেষভাবে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রিত একুরিয়ামের ভেতরে |
|
|
পুরো বিকেলটা হোটেল রুমেই কাটিয়ে দেয়া হলো। সন্ধ্যায় আবার আরেকটি গাড়ি ভাড়া নেয়া হলো। সেটিতে করে চলে গেলাম "কুয়াহ" এ। লাংকাবির মেইন টাউন ও জেটি সেখানেই, সেখানে ঈগলের একটা বিরাট ভাস্কর্য রয়েছে, সেখানে গিয়ে বেশ খানিকক্ষন কাটিয়ে পরে আবার হোটেলে ফেরত গেলাম।
আরো ছবির জন্যে ক্লিক করুন এই লিংকে:
https://www.flickr.com/photos/uddinm/albums/72157650036378044