একজন মুমিন আরেকজন মুমিনের আয়নাস্বরুপ। আমাদের উচিত একজন অপরজনের ব্যাক্তিগত ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেয়া। তবে এই ভুল ধরিয়ে দিতে গেলে দুটি ভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
প্রথমত, ভুল ধরিয়ে দেয়ার পর আপনি যার ভুল ধরিয়ে দিলেন তিনি খুশি হতে পারেন, এবং নিজেকে সংশোধন করে নিতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, ভুল ধরিয়ে দেয়ায় তিনি রাগ করতে পারেন। রাগটুকু সাময়িকও হতে পারে আবার দীর্ঘ সম্পর্কের ইতি টানার পরিস্থিতিতেও পৌছে দিতে পারে।
দ্বিতীয় ঘটনা ঘটার ভয়ে আপনি যদি আপনার পরিচিত মানুষটির ভুল ধরিয়ে না দেন তবে আপনি তার উপর জুলুম করলেন। কারন মুমিন হিসেবে এটি আপনার দায়িত্ব। আপনি যদি তা না করেন তবে আপনার পরিচিত মানুষটির ভুলটুকু সংশোধনের সম্ভাবনাটি নষ্ট হল কিংবা দীর্ঘায়িত হল। এটা আপনার জন্য অনুচিত। আবার তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখাটাও আপনার জন্য জরুরী। সেক্ষেত্রে কিছু সাবধানত অবলম্বন করলেই আপনি আপনার পরিচিত মানুষটার একটা ব্যাক্তিগত ত্রুটি তার সাথে সম্পর্কের তরংগের কোন ছন্দপতন না ঘটিয়েই দুর করে দিতে পারেন। নিচে এব্যাপারে কয়েকটা সাবধানতা উল্লেখ করলাম, হয়তা কাজে আসতে পারে।
১. সবার সামনে অথবা তৃতীয় কোন ব্যক্তির সামনে তার ত্রুটিটুকু উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা এতে তিনি অপমান বোধ করতে পারেন। সবার কিংবা অন্য কোন ব্যক্তির সামনে সামান্য কোন ত্রুটিও যদি প্রকাশ করা হয়, তা মূলত তাকে অপমান করার সামিল বা এটাই কোন মানুষকে অপমান করার সবচে পুরোনো পদ্ধতি। তাই, কারো ত্রুটিটুকু সম্বন্ধে অবগত করতে গেলে সেটি যত ছোটই হোক না কেন নিভৃতে জানানোর চেষ্টা করুন।
২. ত্রুটিটুকু যদি তার কথার মাঝখানে ধরা পড়ে তবে সেই কথার মাঝখানেই দ্রুত ত্রুটিটুকু ধরিয়ে দেয়াটা ভুল পদ্ধতি। বরং তার কথা শেষ হওয়ার পর তাকে বুঝিয়ে বলুন।
৩. আর সরাসরি ত্রুটির ব্যাপারে আলাপ শুরু না করে, বরং প্রসংগ টেনে আস্তে আস্তে বুঝিয়ে বলুন।
৪. কাউকে তার ত্রুটি সম্বন্ধে জানানোর সময যতটা সম্ভব উক্ত ত্রুটি নিয়ে তার সামনে সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকুন। শুধু ছোট্ট কোন উদাহরন বা ত্রুটিটুকুর ফলাফলটুকু অবশ্যই যথেষ্ট বিনয় বজায় রেখে জানানোর চেষ্টা করুন। বিনয় মুসলিমের একটি বৈশিষ্ট্য আর তার বিপরীতটুকু কাফের কিংবা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই সম্মানিত, সে আপনার শিক্ষক হোক বা আপনার বাসার কাজের ছেলেই হোক না কেন। আর সবাইই একে অপরের উপর কোন না কোনভাবে নির্ভরশীল। মনে রাখবেন আপনি ততই বড় সম্মানিত ব্যাক্তি যতখানি আপনি অন্যকে সম্মান করেন। অনেকটা বলা চলে মানুষ বিনয়ী হয় তার আত্নসম্মানবোধ থেকে। দায়িত্ববোধ আর আত্নসম্মানবোধের মিলিত বৈশিষ্ট্যপূর্ন মানুষই কেবল পারে আমাদের সমাজকে আরো সুন্দর করে গড়ে তুলতে। আসুন একে অপরের ভুল-ত্রুটিগুলো দুর করে ত্রুটিমুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি।