Tuesday, March 23, 2010

অধোগতিময় সংস্কৃতি- ম ঈ ন উ দ্দী ন

টিভিতে একটি অনুষ্ঠান দেখছিলাম। এক সুদর্শনা নারী অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছিল। তার পোষাকটা অনেকটা ওয়েস্টার্ন ঢঙের। কথা বলছিল বাংলার সাথে খুব বেশি করে ইংরেজী মিশিয়ে। অনুষ্ঠানটি একটা রক মিউজিকের অনুষ্ঠান। এ ধরনের অনুষ্ঠানে ইদানিং এ ধরনের উপস্থাপনাই হয়ে থাকে। টিভি সেটের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন একটু গভীরে ঢুকে পড়লাম। 'কেবল অপারেটর' (Cable Operator) কতই না যত্ন করে এলাকার অলিগলির খাম্বাগুলোর সাথে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে দারুন এক নেটওয়ার্ক তৈরী করেছে, যার ফলে আমার বাসার নিচের খাম্বা হতে একটা তার এসে আমার টিভি সেটের পিকচার টিউবের ফসফর দানাগুলো এ অনুষ্ঠানটা আমার চোখের সামনে দৃশ্যমান করে তুলেছে। এই কেবল আমাকে শখানেক টিভি চ্যানেল রিমোট দিয়ে পরিবর্তন করে করে বিভিন্ন স্বাদের হাজারো অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এজন্যে কেবল অপারেটরও আমার এবং হাজারো সার্ভিস গ্রহীতার কাছ থেকে কড়কড়ে তিনশ করে টাকা নিয়ে নেয়।

আবার প্রত্যেকটা চ্যানেলের ব্রডকাস্টের জন্য নিয়োজিত আছেন ঝানু সব ইন্জিনিয়ারগন। তারাও মনোযোগ দিয়ে ব্রডকাস্ট করে যাচ্ছে হাজারো অনুষ্ঠান। তাদের কাছে অনুষ্ঠানটা বড় নয়, সফলভাবে ব্রডকাস্টই হল প্রধান লক্ষ্য। টিভি চ্যানেল কর্তপক্ষের কাছ হতে এ ইন্জিনিয়ারগন তাদের দক্ষতার পারিশ্রমিকও আদায় করে নেন।

অনুষ্ঠানের দৃশ্যগ্রাহকদের প্রতি কেমন একটা শ্রদ্ধাবোধ জেগে উঠল মনে। কতই না মনোযোগ দিয়ে তারা প্রত্যেকটা কোণ হতে অনুষ্ঠানটা ফ্রেমে বন্দী করে নিয়েছেন, আর এডিটরগনও বিভিন্ন কোণের বিভিন্ন ফ্রেমের গুচ্ছগুলোকে সাজিয়ে পুরো অনুষ্ঠানটা অর্থবহ করে সম্প্রচারের উপযোগী করে তুলছেন। প্রতিদিনই তাঁরা নতুন নতুন কাজ যত্ন সহকারে করে যাচ্ছেন, নিজেদেরকে করে তুলছেন আরো যোগ্য হতে যোগ্যতর, আর চ্যানেল কর্তপক্ষও যথাসাধ্য তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে যাচ্ছে।

প্রডিউসাররাও প্রতিদিন নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে নতুন নতুন অনুষ্ঠানের জন্য অর্থলগ্নি করে যাচ্ছেন এবং সংস্কৃতির ধারা বজায় রেখে যাচ্ছেন, সে ধারাটা উপর কিংবা নিচের দিকেই হোকনা কেন।

সাধারন ব্যবসায়ীগনের সাধারনত সহজ মুনাফার ব্যবসার প্রতি বেশি ঝোঁক থাকে। কত দ্রুত কত বেশি মুনাফা অর্জন করা যায় তার জন্যেই তাদের জান-প্রাণ উজাড় হয়। সমাজ বা দেশ কিংবা এর সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কিছুই তাদের মাথায় কাজ করে না। তারা বুঝে মুনাফা, আর সুখ। ধরা যাক, আজমল সাহেব একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি যে ব্যবসাতে হাত দেন, তাতেই পুরো সফল। ইনভেস্টররাও তার উপর নির্ভর করে কোটি কোটি টাকা তাঁর হাতে তুলে দেন, আর তিনি ব্যবসা করে তাদেরকে মুনাফার ন্যায্য ভাগ দিয়ে দেন, আর নিজের জন্যেও যথেষ্ট পরিমান বরাদ্দ রাখেন। বিভিন্ন ব্যবসায় সাফল্যের পর, গতানুগতিক ব্যবসার একঘেয়েমী দুর করতে নতুন ব্যবসার প্রতি ঝুঁকে পড়তে চাইছেন। তিনি ভালই জানেন, এ ব্যবসায় দেশী ইনভেস্টরের দেখা মিলবেনা, বিদেশীদের কাছেই যেতে হবে। তিনি চেনেনও এদের কিছু পার্টিকে, যারা এ খাতে বিনিয়োগ করতে সদাপ্রস্তুত।

যথারীতি আজমল নেটওয়ার্ক ধরে এগিয়ে গিয়ে ধরে ফেললেন লন্ডনভিত্তিক এক মাল্টিন্যাশনাল ইনভেস্টিং গ্রুপকে। তবে এই গ্রুপ ক্ষানিক সময়ক্ষেপন করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে একখানি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য বিনিয়োগ করতে রাজী হল। তবে তারা দেশি ও বিদেশী দশজন বিশেষজ্ঞের নামের একটা তালিকা দিয়ে এদেরকে এই প্রজেক্টে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিতে বলে দিল। আজমল সাহেব বেশ বড় অংকের বেতনের ব্যবস্থা করলেন এই আঁতেল টাইপের পাঞ্জাবী পরা পেট মোটা দশটি লোককে। এরা নিয়মিত অফিসে আসছেন, কথা বলছেন নিজেরা নিজেরা। মিটিং এর পর মিটিং হচ্ছে, অনলাইনে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা হচ্ছে। আবার সেই অনলাইন মিটিং এর জন্যও আজমল সাহেব বেশ বড় অংকের সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বিদেশী টেকনিকাল টিম এসে ঘুরে গেল। পুরো এক বছরে এই খাজনা গুনেই যাচ্ছেন আজমল সাহেব। অনেকটা অধৈর্য হয়েই পেটী দশ উপদেষ্টাকে তাগাদা দিলেন। তাঁরাও জানালেন তাঁদের ইন্ট্রোডাকটরি কাজ শেষের দিকে, সফলতা খুব কাছেই।

আজমল সাহেব এবং দশ উপদেষ্টা বিরাট ফাইল নিয়ে হাজির হলেন লন্ডন।

. টিপাইমুখ বাধ টারমিনেশন . ম ঈন উ দ্দী ন .

. প্রধানমন্ত্রী চিন্তিত:

প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড বিমর্ষ দিন কাটাচ্ছেন। সারাদিন একটা বিষয় নিয়েই চিন্তিত তিনি। তিনি কিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করতে আর আগ্রহী নন। "যে করেই হোক এর একটা রফা করা দরকার। এভাবে বারবার আগ্রাসন চুপ করে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এবার এদের ঠেকাতেই হবে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা যদি না থাকে তবে বাংলাদেশেরই অস্তিত্ব থাকবে না। পদ্মাতো গেছেই, যমুনাও মরমর। একমাত্র ভরসা মেঘনার অস্তিত্ব নিয়ে টানা হেচড়া করতে ওদের আর সুযোগ দেয়া যাবে না। আমরন সংগ্রাম করে হলেও এ টিপাইমুখ সমস্যা সমাধান করব, আর এ সংগ্রামে যদি সফলতা না পাই, তবে আমার প্রধানমন্ত্রী থাকার আর কোনই প্রয়োজন নেই।" নিজের অফিসে মনে মনেই ভাবলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

কলিংবেল চাপ দিয়ে তাঁর পার্সোনাল এসিসট্যান্টকে ডাকলেন। সাথে সাথেই হাজির হলেন তিনি। "সব মন্ত্রীদের তলব করুন, বলবেন খুবই জরুরী বৈঠক।" আদেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর পিএ ঠিকমতই তাঁর দায়িত্ব পালন করলেন। মন্ত্রীগন সরকারের বিভিন্ন জরুরী কাজ তাঁদের সচিবদের ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়ে সাথে সাথেই রওনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী ভবনের দিকে। আধঘন্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বৈঠকখানায় সকল মন্ত্রী হাজির। ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁরা একটু দ্বিধাগ্রস্তই বলা চলে। "হঠাৎ আবার কি হলরে! জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে।" একজন মন্ত্রীতো ফিসফিস করে বলেই ফেললেন।

পাঁচ মিনিটের মাথায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর পানিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টাকে সাথে নিয়ে হাজির হলেন। সবাই উঠে দাঁড়াতে গেলে প্রধানমন্ত্রী সকলকে বসে থাকতেই ইশারা করলেন। দেরী না করে দাঁড়িয়েই তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলেন, "আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশের অস্তিত্ব অচিরেই বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে। আপনারা আপনাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে গিয়ে হয়তো এ ব্যপারটা ঠিকভাবে গোচরে আনতে পারেননি। আপনারা জানেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত সুরমা-কুশিয়ারা নদীর জন্মদাত্রী নদী বরাকে অনেকদিন ধরেই একটা বাঁধ নির্মান করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা এটি নির্মানের আনুষ্ঠানিক ঘোসনা পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে। এ ঘোসনা আমাদের জন্য একটা বিপদের ডংকা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। তাদের নির্মিত ফারাক্কা আমাদের স্রোতস্বিনী পদ্মাকে মেরে ফেলেছে। তিস্তা ব্যরেজও আমাদের সমূহ ক্ষতি করেছে। অনেক নদী বিলুপ্ত হয়েছে। কয়েক কোটি মানুষের জীবিকা এ দুটি বাঁধের জন্য ধ্বংশপ্রাপ্ত হয়েছে। আমাদের অনেক প্রতিবাদ স্বত্ত্বেও তাদের এ কার্যক্রম আমরা ঠেকাতে পারিনি। অথচ আন্তর্জাতিক নীতি লংঘন করেই এ সব শোষন আমাদের দিকে চাপিয়ে দিলেও আন্তর্জাতিক মহল আমাদের কোন সাহায্যই করেনি, বা অন্যভাবে বললে আমরা তাদের সাহায্য আদায় করতে পারিনি।" বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী, চেহারায় ক্ষোভের চিহ্ন স্পষ্ট।

একগ্লাস পানি খেয়ে আবার দাঁড়ালেন। "এবার তারা বরাক নদীতে বিদ্যুত উৎপাদনের নামে বিশাল এক বাঁধ নির্মান শুরু করতে যাচ্ছে। এ বাঁধ নির্মিত হলে আমাদের কমপক্ষে তিনকোটি মানুষ তাঁদের জীবিকা হারাবে, তাঁদের বাসস্থান বাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। বৃহত্তর সিলেট অচিরেই মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাই, আমাদের দেশের স্বার্থে, যারা আমাদের ক্ষমতার আসনে বসিয়েছে তাদের স্বার্থে, ভারতকে আমরা কিছুতেই এ বাঁধ নির্মান করতে দেবনা। এ ব্যপারে আপনাদের কি মত?" বললেন মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে।

টেবিলের চারপাশে বসা মন্ত্রীদের মধ্যে তীব্র গুন্জন শুরু হল। নিজেরা নিজেরা কিছুক্ষন আলোচনা করলেন একে অপরের সাথে। ক্ষানিকক্ষন বাদে মন্ত্রীগন একে একে উঠে দাঁড়াতে লাগলেন। একজন দাঁড়িয়ে বললেন, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা গত কিছুদিনের পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে এ ব্যপারে অবগত হয়েছি। কিন্তু এসকল প্রচারনাতো সরকারের বিরোধী পক্ষ করছে বলে আমার মনে হয়।"

আরেক মন্ত্রীও মুখ খুললেন, "বিরোধী দল ও তাদের সহযোগীদেরকেই বেশি বেশি মাতোয়ারা থাকতে দেখা যাচ্ছে। আমার মনে হয় এগুলো সরকারের কাজে ব্যঘাত ঘটানোর জন্যই করা হচ্ছে। আর তাছাড়া ভারতের হাইকমিশনার সাহেবকে বলতে শুনেছি যে, এ বাঁধ নাকি ফারাক্কার মত না।"

আরেকজন মন্ত্রী দাঁড়িয়ে অনেকটা উত্তেজিত অবস্থায়ই বলে ফেললেন, "আমাদের উচিত শক্ত হাতে এসব আন্দোলন দমন করা। নাহলে বন্ধু দেশ ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে।"

প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীগনের কথা শুনে অনেকটা বিস্মিতই হলেন। "আপনারা ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছেন। এ আন্দোলন কিছুতেই বিরোধী দলের আন্দোলন হতে পারেনা। টিপাইমুখ বাঁধ সমস্যা আমাদের সবার। তাই এ আন্দোলনে আমাদের পুরো জাতিকে একসাথে অংশ নিতে হবে। যেমন করে একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে এনেছি, সেভাবেই ভারতকে এ বাঁধ নির্মান ঠেকাব" বিস্ময়ের ধাক্কা কাটিয়ে বললেন প্রধানমন্ত্রী। "দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে টিপাইমুখ সমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হবে, এবং তাতে সফল হতে পারলে আমরা একে একে ফারাক্কা, তিস্তা ব্যারেজ ও অন্যান্য সমস্যাগুলোরও একটা রফা করার সুযোগ পাব। তাই আমরা যে করেই হোক ভারতকে এ বাঁধ নির্মান করতে দেবনা।" শেষের বাক্যটা অনেকটা চিৎকার করেই বললেন জননেত্রী।

সাথে সাথেই মন্ত্রীদের একজন দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে উঠলেন, "অবশ্যই আমরা ভারতকে এ বাঁধ নির্মান করতে দেবনা।" সকল মন্ত্রী একযোগে "ঠিক" বলে সম্মতিসূচক আওয়াজ করলেন। আরেকজন মন্ত্রী দাঁড়ালেন, "তবে আমার মনে হয়, এ কাজটি আমাদের জন্য খুব সহজ সাধ্য হবেনা। তাই এ ব্যপারে আমাদেরকে সকল স্তরের জনগনের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করতে হবে। আর অবশ্যই বিরোধী দলসহ, সকল রাজনৈতিক দলের সহায়তা চাইতে হবে। আর তার পাশাপাশি ব্যপক সচেতনতার ব্যবস্থা করতে হবে।"

"আপনি ঠিক বলেছেন। এজন্যে আমি প্রথমেই সকল সংসদ সদস্যদের নিয়ে বসতে চাই, যাতে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এ জাতীয় সমস্যা সমাধানের সূচনা করতে পারি। আর আজই আমি বিরোধী দলীয় নেত্রীর আলোচনা করব, যাতে এই জাতীয় সমস্যায় জাতি কিছুতেই ষড়যন্ত্রকারীদের ছলনায় ভুলে বিভক্ত হয়ে না যায়। আপাতত, আমাদের বৈঠক এখানেই শেষ করছি। তবে, আপনাদের সকলকে এ বিষয় নিয়ে বেশি বেশি ভাবার অনুরোধ জানাচ্ছি। আর আমাদের সকল শুভাকাঙ্খীর সাথে এ ব্যপারে আলোচনা করার অনুরোধ করছি। আরেকটা ব্যপার লক্ষ্য রাখবেন, আপনাদের কোন কথা বা কাজ আমাদের যেন ব্যর্থ করে না দেয়, পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশ ভারতের সাথে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কেও যেন ব্যঘাত না ঘটে। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি, বাংলাদেশ দীর্ঘজীবি হোক।"

২. বিরোধী দলের নেত্রীর সাথে বৈঠক:

মন্ত্রীরা সব চলে গেছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় হতে। প্রধানমন্ত্রী এখন অনেকটাই স্বস্তি বোধ করছেন এই জন্য যে, তিনি কিছুদিন দেরী হলেও টিপাইমুখ নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তের দিকে এগোতে যাচ্ছেন। এতদিন ব্যপারটা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও তাঁর ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় জটিলতার কারনে অনেকটা পিছিয়ে যেতে হয়েছে। সরকার গঠন করায় তাঁদের এখন অনেক দায়-দায়িত্ব। সবকিছু চাইলেও আর সহজে পাওয়া যায়না। নানা ধরনের ফরমালিটিজ সবকিছুই দেরী করিয়ে দেয়। তারওপর কুটনৈতিক ঝামেলাতো রয়েছে। জাতীয় ব্যপারে বিদেশী রাষ্ট্র আর সংস্থাগুলো যেভাবে নাক গলিয়ে দেয় তাতে কাজের সময় নানা দিক ভেবে চিন্তে করতে হয়। বিরোধী দলের তো এই চিন্তা নেই, দাবী করলেই করতে পারে, চাইলেই রাস্তায় নামতে পারে। তবে, তারা যদি তা না করত তবে আরো সমস্যা হত। অনেক কিছুই চোখ এড়িয়ে যেত। বিরোধী দল সরকারী দলের আয়নার মত, সহজেই ভুল ত্রুটিগুলো ওদের কাছ থেকে সরকার জানতে পারে। তাদের বিভিন্ন গঠনমুলক সমালোচনা সরকারের কাজকে নির্ভুল করতে সাহায্য করে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিএস কে ডাকলেন। বললেন, "বিরোধী দলের নেত্রীর সাথে আজই দেখা করার ব্যবস্থা করুন?"

"জ্বী আচ্ছা, আমি ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।" পিএস এই বলে তাঁর ডেস্কে গেলেন।

পি এস বিরোধী দলের নেত্রীর পি এসের কাছে ফোন দিলেন। তিনি জানালেন নেত্রী কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে টিপাইমুখ বাঁধ সমস্যায় বিরোধীদলের কর্তব্য নিয়ে তাঁর দলের উচ্চপদস্থ নেতাদের সাথে আলোচনা করছেন। পি এস তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রেখে দিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে একথা জানালেন। প্রধানমন্ত্রী পিএসকে বললেন, "এই মুহুর্তেই বিরোধী দলের কার্যালয়ে যাবার ব্যবস্থা করুন। তবে কোন মিডিয়া যেন এই মুহুর্তে কিছুই না জানতে পারে।"

প্রধানমন্ত্রী তাঁর জন্য নির্ধারিত গাড়ির পরিবর্তে একটি সাধারন গাড়িতে চড়ে বিরোধী দলের কার্যালয়ে রওনা দিলেন। পেছনে শুধু একটা পুলিশ ভ্যান তাঁর নিরাপত্তার জন্য পেছন পেছন চলল। ঢাকা শহরের যানজট পেরিয়ে প্রায় দেড়ঘন্টার মধ্যে পৌছে গেলেন সেখানে। অনেকদিন পর তাঁকে ঢাকা শহরের যানজট দেখতে হল। দেখে অনেকটা বিচলিতই হলেন বলা চলে। যানজট নিরসনের ব্যপারটাও তিনি গুরুত্ব দেবেন বলে মনে মনে ভেবে রাখলেন। সাধারনভাবে তিনি তাঁর পিএসকে নিয়ে বিরোধী দলের কার্যালয়ে প্রবেশ করলেন। সেখানকার সিকিউরিটি গার্ড তাঁকে দেখে প্রথমে চিনতে না পেরে ভেতরে যেতে দিচ্ছিলোনা। পরে চিনতে পেরে অবাক হয়ে রাস্তা ছেড়ে দিল। কার্যালয়ে প্রবেশ করতেই সবাইই অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, যেন তারা কোন ভুত দেখছে। তিনি নেত্রীর সাথে দেখা করতে চান জেনে একজন তাঁকে রাস্তা দেখিয়ে কনফারেন্স রুমে নিয়ে এলেন।

এদিকে আড়াই ঘন্টা ধরে বৈঠক চলছে বিরোধী দলের কনফারেন্স রুমে। বিরোধী দলের সবচে ঝানু ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা নেত্রীর সাথে বৈঠকে বসেছেন। সাথে আছে নদী ও পানি সম্পদ বিষয়ে পারদর্শী কয়েকজন বিজ্ঞানী। দেশের মহাসংকটের দৈববানীতে তাঁরা অনেকটা বিচলিত। সরকারের নিশ্চুপ অবস্থানও তাঁদেরকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবিয়ে বিকারগ্রস্ত করে দিচ্ছে। তাঁরা বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর মাধ্যমে টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাব বিশ্লেষন করছিলেন এবং এ বাঁধ নির্মান ঠেকানোর কৌশল নির্ধারনের চেষ্টা করছিলেন। এমন সময় হঠাতই কনফারেন্স রুমের দরজা খুলে প্রধানমন্ত্রী প্রবেশ করলেন। সবাই ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুই প্রথমে ঠাওর করতে পারছিলেন না। পরে একসাথে সবাই দাঁড়ালেন। বিরোধী দলীয় নেত্রী অনেকটা আনন্দের সাথে উঠে গিয়ে তাঁকে ধরে তাঁর আসনে বসিয়ে দিলেন এবং নিজে পাশের চেয়ারে বসলেন।

প্রধানমন্ত্রী সকলকে বিস্ময়ের মধ্যে না রেখে কোন ভনিতা না করেই তাঁর আগমনের হেতু বর্ণনা করলেন এবং এ ব্যপারে তাঁর ভূমিকা নিতে দেরী হওয়ার কারনগুলো একে একে বর্ণনা করলেন এবং এ জন্য তিনি সকলের কাছে ক্ষমা চাইলেন। সকলে তা সাদরে গ্রহন করলেন। সবাই তাঁকে তাঁর আগমনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন। প্রধানমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে তাঁরা আগের আলোচনার পুনরাবৃত্তি করলেন এবং আরো ভালভাবে টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাব সম্বন্ধে ওয়াকিফহাল করলেন। আরো একঘন্টা পর তাঁরা সবাই এ সিদ্ধান্তে এলেন যে, টিপাইমুখ সমস্যা নিয়ে তাঁরা সবাই একসাথে কাজ করবেন। তবে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোসনার আগে মিডিয়াতে তাঁদের এ বৈঠকের কথা প্রকাশ করা যাবে না।

তিন.
সেদিনের পর এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। দেশের আরো দশটা সমস্যার পাশাপাশি টিপাইমুখ নিয়ে সাধারন জনগনের মধ্যে দুএকটা করে তর্ক বিতর্ক চলছে। অনেকে সরকারের চুপচাপ ভূমিকার সমালোচনাও করছে। কিন্তু সরকারের উপরিমহলে কি ঘটছে তাদের এখনো জানানো হয়নি। গত একসপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী আর বিরোধী দলের নেত্রী ভাল করে ঘুমানোর সুযোগ পাননি। গত এক সপ্তাহে বারবার তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীপরিষদের এ ব্যপারে অভিজ্ঞদের নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বৈঠক হয়েছে এর সমাধান খোঁজার জন্য। টিপাইমুখ সমস্যাটা নিয়ে সত্যিই এক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। একে তো ভারতের সরকার টিপাইমুখ নিয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছে এবং পাশাপাশি কুটনৈতিক প্রচেষ্টায়ও যথেষ্ট এগিয়ে গেছে। এ অবস্থায় এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া খুব সহজসাধ্য হবে বলে মনে হয়না। তারপরও দেশের বর্তমান ও সাবেক নের্তৃত্ব দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে একত্র হয়েছে। সফলতো তাদের হতেই হবে যেকরেই হোক।

প্রধানমন্ত্রীর চিন্তিত চেহারা আজ আর অতটা প্রকট নয়। এর কারন তিনি টিপাইমুখ সমস্যার সমাধানের জন্য অনেকটা এগিয়ে গেছেন। সবচেয়ে বড় অগ্রগতি দেশের নের্তৃত্বে একটা ঐক্য তৈরী হয়েছে। এ ঐক্যই হলো দেশের সবচে বড় শক্তি। নের্তৃত্বে ঐক্যই জনগনের ঐক্যের ভিত্তি। আর সবাই একসাথে থাকলে কোন সমস্যাই আর সমস্যা নয়। আগামী কালই দুদলের অভিজ্ঞ নেতাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। এ বৈঠকেই পরবর্তি পদক্ষেপ সম্বন্ধে স্পষ্ট রূপরেখা প্রকাশ করা হবে। আর তার সাথে সাথেই জনগনকে পুরো ব্যপারটায় সংশ্লিষ্ট করা হবে এবং জাতীয় ঐক্যের ব্যবস্থা করা হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরো আয়োজন নিজে তদারক করছেন। বারবার পিএসকে বিভিন্ন ব্যপারে তাগাদা দিচ্ছেন। মেহমানদের নিমন্ত্রনের ব্যপারে খোঁজ নিচ্ছিলেন। সাথে সাথে সাংবাদিকদের দাওয়াত দেয়ার ব্যপারে তাগাদা দিচ্ছিলেন। দুপুর নাগাদ সবকিছুই মোটামুটি প্রস্তুত। এসবের সাথে সাথে অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকায় অন্যান্য সরকারী কাজগুলোও প্রখর ভাবে তদারক করেছেন। কেননা তা না হলে প্রশাসনের খাদেমরা দুর্নীতির সুযোগ পাবে এবং প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়বে। তাহলে দেশও দুর্বল হবে পাশাপাশি টিপাইমুখসহ অন্যান্য সকল ইস্যুতেই সরকারকে ব্যর্থ হতে হবে

সারাদিন স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি দলের মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্যদের খোঁজ খবর নিয়েই কাটল প্রধানমন্ত্রীর। অপরদিকে বিরোধী দলীয় নের্তৃ সারাদিন তাঁর দলের অভিজ্ঞ নের্তৃস্থানীয় সদস্যদের খোঁজখবর নিয়েছেন। নদী ও পানি বিশেষজ্ঞদেরকে আগামীকালের বৈঠকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ও তাঁদের যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য অনুরোধ করে ফোন করেছেন। সবাইকে বৈঠকের গুরুত্ব সম্বন্ধে অবহিত করেছেন। তাঁর উপদেষ্টাদেরকে নিয়ে আলোচনা করেছেন অনেকবার। বিকেল নাগাদ প্রায় সবকিছুই প্রস্তুত। আগামীকালের বৈঠকের জন্য বিরোধী দলের পক্ষ হতে প্রায় সম্পুর্ন প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।


৪.
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। হাতমুখ ধুয়েই তাঁর ব্যাক্তিগত সচিবকে ফোন করলেন। খোঁজখবর নিলেন আয়োজনের ব্যপারে। আয়োজন প্রায় সবই সম্পন্ন হয়েছে। আজ সকাল দশটায় আলোচনা শুরু হবে। আজই একটা ভাল সিদ্ধান্তের আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিরোধী দলের নেত্রীর কাছেও ফোন করলেন। তাঁদের প্রস্তুতি সম্বন্ধে খোঁজ নিলেন।

এদিকে ভারতীয় হাইকমিশনার রাতে ঘুমাতে পারেননি। সবকিছু কেমন যেন উলট পালট লাগছে তাঁর। এবার বুঝি তার চাকরীটা হারাতে হয়, এ চিন্তাটা কেন যেন বারবার চলে আসছে। বেশ কয়েকটা বুদ্ধিজীবিকে ভাড়া করে বিভিন্ন সভায় তাদেরকে দিয়ে টিপাইমুখ বাঁধ সম্বন্ধে পজিটিভ কথা বলিয়েছেন। বেশ কিছু মন্ত্রীকেও প্রথম প্রথম রাজনৈতিক সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে পক্ষে বলানো গেছে। ঐ মন্ত্রীদের দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিরস্ত রাখা গেছে এতদিন। কিন্তু বিরোধীদলের ভূতে পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। হঠাৎ কথা নাই বার্তা নেই টিপাইমুখ নিয়ে আজ বৈঠক বসছে। “একবার আমার সাথে আলোচনাও করলনা।“ অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এল হাইকমিশনারের মুখ দিয়ে।

ভারত থেকে বেশ কয়েকবার ফোন এসেছে হাইকমিশনারের কাছে। হঠাৎ বাঙ্গালী জাতি কেন একত্র হয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছে তাঁকে। কোন জবাব দিতে পারেননি। অজানা আশংকায় বুক কেঁপে কেঁপে উঠছে। বাঙ্গালী জাতি একত্র হলে আর অন্য কোন জাতিই তার সামনে দাঁড়াতে পারেনা। এরা অত্যন্ত সাহসী জাতি। এরা দাবী আদায়ের জন্য জীবন দিতে সদাই প্রস্তুত থাকে। “যারা জীবন দেয়ার জন্যই রাস্তায় নামে, তাদের কি করে ভয় কিংবা লোভ দেখিয়ে পিছিয়ে দেয়া যায়?” কিছুতেই এ সূত্র মিলছেনা। সামনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে একটা নতুন মাত্রা যোগ হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। একবার যদি বাংলাদেশ ভারতকে পরাজিত করে তবে ভবিষ্যতেও বারবার তার বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। “কিছুতেই এ যুদ্ধে হারা যাবেনা। যে করেই হোক এদের থামাতে হবে।“ বিড়বিড় করে বললেন হাইকমিশনার।

ভারতীয় হাইকমিশনে হঠাৎই নতুন এক চান্চল্য সৃষ্টি হল। হাইকমিশনার সাহেব জরুরী বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে সভ্যগনদের তালিকায় রয়েছে হাইকমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রভাবশালী ভারতীয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন এসাইনমেন্টে থাকা র’ এর সদস্যগন এবং এ যূগের মীর জাফর তথা বাংলাদেশি কিছু তাঁবেদার।



৫.

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বৈঠক শুরু হল। বৈঠকের সভ্যগন সবাইই ঠিক সময়ের আগেই উপস্থিত হয়েছেন। তাঁদের সময়ানুবর্তী দেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভবিষ্যত সংগ্রামের অনুপ্রেরণা পেলেন। সভায় যারা উপস্থিত হলেন তাঁরা ছিলেন সরকার ও বিরোধী দলের জ্ঞানী সংসদ সদস্যগন এবং দেশের গন্যমান্য জ্ঞানী ব্যক্তিগন। সভায় একই সাথে বৈজ্ঞানিক ও রাজনীতিবিদ তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের একত্র করা হয়েছে। প্রথমত সমস্যার ধরন ও প্রকটতা বিচার বিশ্লেষন করে তার সমাধানে বৈজ্ঞানিক পন্থাকে উচ্চমানের রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সফলতা অর্জনের চেষ্টা। সভায় সামরিক তিন বাহিনীর প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ন পারসোনেলগনও উপস্থিত হলেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করলেন প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি তাঁর সহকারি হিসেবে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে মনোনয়ন করলেন। এরকম ঘটনা সারাবিশ্বেই অত্যন্ত দুর্লভ। করতালির মাধ্যমে সবাই প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী কে অভিনন্দন জানালেন। বিরল এ ঘটনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হল। সবার মাঝেই একটা বাড়তি উদ্যমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেল পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে। অনুষ্ঠানের শুরুটা পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত দিয়ে শুরু হল। তেলাওয়াত করলেন বিরোধী জোটের ইসলামী দলের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল। তিনি পবিত্র কোরআনএ পানিবন্টন সংক্রান্ত কয়েকটি আয়াত পাঠ করে শোনালেন এবং এর অর্থকে রাসুলুল্লাহর পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন হাদীসের মাধ্যমে বিশ্লেষন করলেন সবার মাঝে। সভাসদদের মাঝে যারা পবিত্র কোরআনকে একটু খাট করে দেখতেন তাঁরা সহ সবাইই অবাক হলেন। তাঁরা অবাক হলেন এই ভেবে যে, দেড় হাজার বছর আগে আরবে তাঁদের আজকের সমস্যা ও তার সমাধান দেয়া হয়েছে। আর এভাবেই প্রায় সব সমস্যার সমাধানও যে কুরআন দেবার ক্ষমতা রাখে তার ব্যপারে তাঁদের অনেকেরই সন্দেহ থাকলনা।

এরপর অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্য রাখলেন বিরোধী দলীয় সভানেত্রী। তিনি সবাইকে তাঁর ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টিপাইমুখ সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা জানালেন। তিনি ভালভাবেই সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন যে, টিপাইমুখ সমস্যার গভীরতা কতটুকু তাঁরা তা পুরোপুরি আন্দাজও করতে পারছেননা। এক অজানা আশংকা রয়ে গেছে পুরো ব্যাপারটায়। প্রধানমন্ত্রী ও তিনি চান এ সমস্যার গভীরতা মাপা হোক। টিপাইমুখ নিয়ে একটা সঠিক সমাধানে যেন সরকার আসতে পারে সে জন্যে উপস্থিত সকলের সহায়তা প্রয়োজন। সবার সাহায্য প্রার্থনা করে তিনি বক্তব্য শেষ করলেন।

তারপর বিভিন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানীগন বক্তব্যে টিপাইমুখ বাঁধের অবস্থান ও তার গুরুত্ব বিশ্লেষন করলেন। এ বাঁধ নির্মানে ভারতের আর্থিক ও কুটনৈতিক লাভ বিশ্লেষন করে শোনানো হল। মাল্টিমিডিয়া প্রেসেন্টেশনের মাধ্যমে এ বাঁধ আমাদের নদীর উপর কেমন প্রভাব ফেলবে তার বর্ননা করা হলো। নদীগুলোর সাথে জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে এমন লোকদের বর্ননা করা হলো এবং বাঁধ নির্মান উত্তর নদীর পরিবর্তনে এঁদের কতটুকু ক্ষতি হতে পারে তা বিশ্লেষিত হলো।

একজন সংসদ সদস্য ভারতের সাথে বাংলাদেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষন করলেন এবং বাঁধ নির্মানের মত স্বেচ্ছেচারীতার বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ করলেন। একে একে সংসদ সদস্য এবং পররাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিশারদগন এ সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন পন্থা ও সুযোগগুলো বিশ্লেষন করলেন। আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকাও আলোচিত হল। সামরিক বাহিনীগুলোর সম্ভাব্য করনীয়গুলো উল্লেখ করলেন সেনাবাহিনী প্রধান।

সমাপনি বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ করলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সবাইকে গুরুত্ব সহকারে সভায় সক্রিয় অংশ নেয়ার জন্য ধন্যবাদ দিলেন। সবাইকে সমস্যা সমাধানকল্পে তাঁদের নিজেদের আয়ত্বে থাকা কাজগুলি গুছিয়ে নিতে অনুরোধ করা হলো। তাঁদের লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে জনগনকে সচেতন করার ব্যপারে জোর দিলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের বিরুদ্ধে শত্রুদের মিত্র এদেশীয় সকলকে শাস্তির হুমকি দিলেন এবং সমস্যা সমাধানে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে অনুষ্ঠান শেষ করলেন।

রাতে সরকার দলের কয়েকজন মন্ত্রী ও বিরোধী দলের কয়েকজন সংসদ সদস্যের একটি দল সংবাদ সম্মেলন করলেন। সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করলেন যে, তাঁরা সবাই দেশের টিপাইমুখ এর বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যে করেই হোক একে রুখে দেয়া হবে।


সারাদিন নানা দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটানোর পর ভারতীয় হাইকমিশনার রাতে টিভিতে সংবাদ সম্মেলনের দৃশ্য দেখে স্ট্রোক করলেন। তাঁকে রাতেই এপোলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হল। ফলে ভারতের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হলোনা। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হলো। আর ভারতের পররাষ্ট্র বিভাগের হোমড়া চোমড়া একজনকে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো।


৬.
পরদিন সংসদে জরুরি বৈঠকের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন আবেদন জানালেন। সারাদিনের বাকিটা সময় অন্যান্য নিয়মিত কাজে ব্যস্ত থাকলেন তিনি। গত তিনদিন তেমন বেশি সময় না দেওয়ায় অনেক কাজ জমে গেছে। তার ওপর তিনি সব কাজেই স্বচ্ছতা পছন্দ করেন। তিনি সবসময়ই একথা মাথায় রাখেন যে, তিনি এদেশের জনগনের জন্য নিয়োজিত কর্মচারীদের প্রধান মাত্র। তাঁকে ঠিকই পাঁচ বছর পর সব কাজের জবাব দিতে হবে। আর তিনি তাঁর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে সব কাজে তাঁর সর্বশক্তি নিয়ে আন্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তাঁর এত বড় দায়িত্ব পালনে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য প্রার্থনা করে প্রতি রাতেই বেশ খানিক সময় তিনি জায়নামাজে সেজদায় পড়ে থাকেন। এর সুফলও তিনি পাচ্ছেন। তাঁর সবচে বড় সাফল্য তিনি জাতিকে আজ একতাবদ্ধ করার একটি সুযোগ পেয়েছেন। তিনি হয়তো একদিন চলে যাবেন কিন্তু তাঁর প্রিয় দেশের সার্বভোমত্ব একতাবদ্ধ জনগনের শক্তিতে অটল থাকবে।

বিকেলে কাজের ফাঁকে জানতে পারলেন যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর আবেদন কবুল করেছেন। তিনি আগামী দিন সংসদে জরুরি বৈঠকের ঘোসনা দিয়েছেন। সকল সংসদ সদস্যের কাছেই এ খবর পৌছে দেয়া হয়েছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে সক্ষম সংসদ সদস্যদের দুরালাপনের মাধ্যমে খোঁজ নিলেন এবং ঠিক সময়ে উপস্থিত থাকার জন্য তাগাদা দিলেন।

এরই মধ্যে তাঁর পার্সোনাল সেক্রেটারী এসে তাঁকে জানালেন যে, ভারতীয় হাইকমিশনার অসুস্থ অবস্থায় এপোলো হাসপাতালে আছেন। তিনি সন্ধ্যার পর তাঁকে দেখতে যাবার জন্য ব্যবস্থা করার আদেশ দিলেন। এমন কঠিন সময়ে ভারতের সাথে কিছুতেই কুটনৈতিক সম্পর্ক দুর্বল করা যাবেনা। এতে সব কিছুই ভেস্তে যাবে।

অবিচার, চলছে, কতদিন চলবে? ম ঈ ন উ দ্দী ন

ঢাকা শহরের দামী ফ্ল্যাটে স্বামী আর সন্তানকে নিয়ে থাকে মৌরী। আর সাথে থাকে তাদের ছোট্ট কাজের মেয়ে আশা। সাত বছর হলো মৌরির বিয়ে হয়েছে। স্বামী ব্যবসায়ী, আর সে গৃহিনী। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই একটা ছেলে সন্তান হলো তাদের। ফুটফুটে শিশু। ছেলেটার নাম দিল তুর্জ। প্রথম সন্তানকে নিয়ে মৌরির তো বেজায় আনন্দ। সারাদিন ওকে নিয়েই ব্যস্ত। একফোঁটাও চোখের আড়াল হতে দেয়না তুর্জকে। তুর্জের দাদীর কাছে দিয়েও সে একটুও আশ্বস্ত হতে পারেনা। প্রয়োজনীয় কাজগুলোও শর্টকাটে কোনরকম সারিয়ে ছুটে আসে ছেলের কাছে। কিন্তু তুর্জ নামটা যেমন একটু অ্যাডভাঞ্চারাস, তেমনি শিশুটার হাবভাবও। জন্মের পর থেকেই তার দুষ্টুমির শুরু। মায়ের কথা শুনতেই চায়না। ঠিকমত খেতে চায়না, ঘুমাতে চায়না। ছোট্ট শিশু কিছু বলতেও পারেনা, সইতেও পারেনা। তবু ছোটবেলায়তো মায়ের কোলেই থাকত, জোর করে এক আধটু খাওয়ানো যেত, ঘুমপাড়ানো যেত। কিন্তু হাটতে শেখার পর থেকে ওর নাগালই পাওয়া যায়না। সারাদিন পুরো ফ্লাট জুড়ে দৌড়া দৌড়ি, এটাওটা ছুড়ে ফেলা, গ্লাস ভেঙে ফেলা চলতেই থাকে।

তুর্জের এখন ছয় বছর। ওকে দেখে রাখা আর বাসার টুকিটাকি কাজ করার জন্য একটা আট বছরের মেয়ে আশাকে রাখা হয়েছে। তুর্জের মা তুর্জকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকায় বাসার সব পরিশ্রম একা আশাকেই করতে হয়। আশা ছোট্ট হলেও কখনো কোন কাজে ফাঁকি দেয়না। এ বয়সে যার একটু খেলার কথা, পড়াশুনার কথা তার প্রতি বিন্দুমাত্র নজর না দিয়ে তাকে শুধু অমানুষিক খাটিয়েই যায় মৌরি। আর তুর্জও আশাকে পেলেই চুল ধরে টানতে থাকে, লাথি দেয়। কিন্তু মৌরির এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা তো নেইই, আশার প্রতি তার নিজের অত্যাচারও মাঝে মাঝে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।

মৌরির ফ্লাটের প্রতিদিনকার ঘটনার একটা উদাহরন দেই। আশা হয়তো ঘর গুছাচ্ছে, আর ওদিকে তুর্জ ঘর আরো অগোছালো করছে। মৌরি হয়তো সন্তানকে থামাবার জন্যে আধোবুলি দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বাধা দিচ্ছে না। এর মধ্যেই হঠাৎ তুর্জ সোফার পাশের টেবিলে রাখা দামী ফুলদানিটা ভেঙে ফেলল। ফুলদানিটা মৌরির প্রচন্ড পছন্দের ছিল। তাই নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলনা। আশাকে ধরেই ধাম-ধাম পেটাতে শুরু করল। ঘটনার আকস্মিকতায় আশা কিছুই না বুঝতে পেরে চিৎকার করে বলতে লাগল, "খালাম্মা, আমি কি করসি, আমি কি করসি?" মৌরি পেটানো না থামিয়েই বলল, "তুই এটা এখানে রেখেছিস কেন?" আশা মারের ব্যাথায় উহ-আহ শব্দ করতে করতেই জবাব দিল, "আম্নেই তো আমারে এইটা শুকেস থেইক্কা এইখানে রাখতে কইছেন। আমারে আর মাইরেননা, আমারে ছাইড়া দেন।" মৌরি আরো রেগে বলল, "আমি বললেই রাখতে হবে, গাধী,..... আজ তোর ভাত বন্ধ, ....তোর কারনেই আজ আমার পছন্দের ফুলদানিটা ভেঙে গেল। আমি তোর আগামী তিন মাসের বেতন থেকে এই টাকা উদ্ধার করবো, শয়তান কোথাকার।" আশা মারের হাত থেকে রক্ষা পেতে মৌরির শর্ত মেনে নিলেও মার থামল আরো দুমিনিট পর। এদিকে মায়ের দেখাদেখি তুর্জও আশাকে দুইটা লাথি দিল।

এভাবে প্রায় প্রতিদিনই আশাকে সারা শরীরে ব্যাথা আর জখমের যন্ত্রনা নিয়ে কাজ করতে হয়। তার উপর প্রায়ই বেতনটাও হাতছাড়া হয়ে যায়।

বনের রাজা হতে গিয়ে... ম ঈ ন উ দ্দী ন

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৩১
বন্ধুরা, আজ তোমাদের একটা বনের গল্প বলব। এ বনে কোন সিংহ ছিলনা। তাই এ বনে কোন রাজাও ছিলনা। কিন্তু ভেবে দেখ, রাজা ছাড়া কি কোন বন হয়? হয়না, তাই ঐ বনেও রাজা চাই। বনের সবাই চেয়ে আছে কবে তাদের একজন রাজা হবে। রাজা নির্বাচনের হাওয়া বইছে বনের প্রতিটি কোনে।

কে হবে রাজা? যে কাউকে রাজা বানিয়ে দিলেই আর হলোনা, রাজা হতে চাই রাজার মতো ব্যক্তিত্ব, রাজার মতো চরিত্র, রাজার মত বুদ্ধি। রাজা হবার এ প্রতিযোগীতায় নেমেছে একই গোত্রের কয়েকটা প্রানী। এরা হলো বনের সবচেয়ে ক্ষীপ্র চিতাবাঘ, রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের মোড়ল এবং তুলতুলে সুন্দরতম বিড়াল।

চিতাবাঘটা খুবই ক্ষিপ্র এবং অপরিনামদর্শী। কোন কিছু মাথায় এলে তা দিগ্বিদিক না ভেবেই ঘটিয়ে ফেলতে ওস্তাদ চিতাবাঘটা। ভাল কিংবা খারাপ তা নিয়ে তার কোন চিন্তা নাই, রাজ্যক্ষমতা তার চাইই চাই।

রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের মোড়লের ব্যক্তিত্বে কেমন যেন একটা গাম্ভীর্য রয়েছে। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে যে কোন সমস্যা সমাধানে তার জুড়ি নেই। শক্তিমত্তা আর বুদ্ধির সংমিশ্রন তাকে রাজ্যের যোগ্য দাবিদারে পরিণত করেছে। তবে তার আবার সম্পদ ও আভিজাত্যের প্রতি লোভেরও কমতি নেই।

বিড়ালটা দেখতে খুবই সুন্দর। দেহটা তুলতুলে নরম। বিড়ালটা দেখতে যেমন সুন্দর, তার আচার-আচরনও সুন্দর। চরিত্র আর রূপের সংমিশ্রন দুর্বল এ প্রানীটাকে বনের অন্য সব প্রানীর কাছেই নয়নমনিতে পরিণত করেছে। বনরাজ্যের রাজা নির্বাচনে সেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি।

নির্বাচনটা হয়ে গেল, রাজা হয়েছে চিতাবাঘ। বনের জনপ্রিয়তা দিয়ে নয়, শক্তির জোরেই সে আজ রাজা। চিতাবাঘের দোসর ছিল আবার বনের শিয়াল আর কুকুরের দল। শিয়াল কিন্তু জানত চিতাবাঘের রাজা নির্বাচিত হওয়াটাই শেষ নয়, ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে সরিয়ে দিতে হবে। ধনী বাঘকে নিয়ে তেমন চিন্তা নেই, ওকে ওর মত থাকতে দিলে, প্রয়োজন গুলো পুরন করলেই চলবে। সমস্যাতো ঐ দরিদ্র বিড়ালটাকে নিয়ে। সম্পদের প্রতি ওর কোন লোভ নাই, রাজা হওয়ার প্রতিও কোন লোভ নাই, লোভ শুধু বনের প্রানিদের সেবা করার আকাংখা। ও নিশ্চয়ই বনে চিতাবাঘের কিংবা তার শিয়াল কুকুর বাহিনীর কোন অত্যাচার সহ্য করবেনা। ওকে যে করেই হোক সরিয়ে দিতে হবে বন থেকে।

কি করা যায়, কি করা যায় ভাবতে ভাবতেই শিয়ালের মাথায় একটা বুদ্ধি এল। এমনি এমনি একে তাড়িয়ে দিলে সবাই ওর প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়বে, সবাই সহমর্মিতা দেখাবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে সবাই বিড়ালকে ঘৃনা করে।

চিতাবাঘ রাজা হবার পরপরই তার কুকুরবাহিনী দিয়ে পুরো বনে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করল। অবাধে চলল দখল আর গুন্ডামী। আর শিয়ালেরা বিভিন্ন বুদ্ধি পাকাতে লাগল। প্রথমেই শিয়ালের দল বনের প্রত্যেক পাড়ায় পাড়ায় সকল নিরীহ প্রানীকে বলতে লাগল যে, "বিড়ালটা হল একটা চোর। ও তোমাদের খাবার চুরি করে খায়।" কেউ কেউ বিশ্বাস করল তাদের কথা, আবার অনেকেই বিশ্বাস করলনা। শিয়ালরা প্রত্যেক প্রানীদের মধ্যেকার একজন করে বিশ্বাসঘাতককে ভাড়া করল যাতে তারা তাদের প্রজাতির মধ্যে বিড়ালের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা রটাতে থাকে। মিথ্যা রটানোর প্রক্রিয়া চলতে লাগল ধুমধাম করে, এখন অনেকে একসাথে বিড়ালকে চোর বলায় আরো অনেকেই বিড়ালকে চোর ভাবতে লাগল। যদিও কেউ কোনদিন তাকে চুরি তো দুরে থাক,ভাল কাজ ছাড়া মন্দ কাজ করতে দেখেনি।

বিড়াল কিন্তু অবাক হলেও এ ধরনের প্রচারনাকে আমল দিলনা। সে কুকুরবাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন করতে লাগল। সবার অধিকারের ব্যপারে সাবধান করে দিতে লাগল। এতে করে সবাই তাকে চোর বলে বিশ্বাস করতে শুরু করলেও তার প্রতি সম্মানবোধ ফিরে আসতে লাগল। এ দেখে শিয়ালদেরতো খুব রাগ হল। শিয়ালেরা চিতাবাঘের কাছে ওর ব্যপারে এটা ওটা নালিশ দিয়ে ক্ষেপিয়ে দিতে লাগল। শেষে চিতাবাঘও তার কুকুর বাহিনীকে বিড়ালের ক্ষতি করতে হুকুম দিল। কোনদিন কুকুরের দল বিড়ালের ঘর ভেঙে দিয়ে আসেতো, কোনদিন তার খাবার কেড়ে নিয়ে আসে। আশপাশের অনেকে বিড়ালের পক্ষ নিয়ে কুকুরের বিরুদ্ধে লাগতে গিয়ে আহত হল। একইসাথে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারনা আর আক্রমনের পরিমান বাড়তে লাগল দিনকে দিন।

একদিন কুকুরের দল কয়েকটা বড় বড় হাড্ডি কেড়ে আনল। সেই হাড় কেড়ে আনার প্রতিবাদ করার জন্য বিড়াল তার সঙ্গী সাথিদের নিয়ে জড়ো হল। কিন্তু আদবহীন কুকুরেরা ঘেউ ঘেউ করে সবাইকে তাড়িয়ে দিল। এর কিছুক্ষন পরই কুকুরদের মধ্যে শুরু হল কোন্দল। কোন্দলের কারন হল চুরি করে আনা হাড়গুলোর ভাগাভাগি। ঘেউঘেউ আর কামড়া কামড়িতে রাত হয়ে গেল। ঝগড়া খানিকটা স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় একে একে এরা স্থান ত্যাগ করতে লাগলেও হঠাতই এক কুকুরকে সামনে পেয়ে বিপরীত পক্ষের কয়েকটা কুকুর একে মেরে ফেলল। এ হত্যার খবর শেয়ালদের কানে চলে গেল। খবর পেয়েই তারা নতুন বুদ্ধি আঁটল। তারা পুরো ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে নতুন নাটক অবতারনা করল। নিহত কুকুরের হত্যার পুরো দোষ তারা বিড়ালের উপর চাপাল, আহত সবাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বিড়ালের বিরুদ্ধে দোষ চাপাতে নির্দেশ দিল। বিশ্বাষঘাতক প্রচারক প্রানীগুলোও তাদের নিজেদের জাতির মধ্যে বিড়ালের বিরুদ্ধে হত্যার দায় চাপাতে লাগল। সেই সাথে আরেকদল কুকুরকে চিতাবাঘ বিড়াল ও তার সঙ্গী সাথিদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিল। সারা বনে যেখানে তাদেরকে খুজে পেল, সেখান থেকেই তাদেরকে ধরে খাঁচায় আটকে রাখা হল। বিড়ালকে মেরে ফেলার জন্য চেষ্টা হল। বিড়ালের অনেক সঙ্গী সাথিকে হত্যা করা হল। আবার সেই হত্যার জন্যেও বিড়ালকেই দায়ি করা হল।


জানিনা, চিতাবাঘ তার রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল কিন আজীবন। তবে, মজলুম যে চিরকাল মজলুমই থাকবে তাতো হতে পারেনা। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই সবকিছু খেয়াল করছেন। তিনি সঠিক বিচারই নিশ্চয় করবেন ঐ শেয়াল- কুকুরসহ চিতাবাঘের প্রতি। আর মজলুম রক্ষা পাবে জুলুম হতে।

সবার প্রতি শুভকামনা।

শেষ মানুষ ----ম ঈ ন উ দ্দী ন---

অবশেষে বিশ্বের শেষ জীবিত মানুষটিকেও হারাতে হল। ও একজন নারী ছিল। আজ সকালেই মারা গেছে সে। দেড় বছর ধরেই একে বাঁচিয়ে রাখার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। পৃথিবীর বংশধারাকে রক্ষার জন্য এ নারীটির জন্য একজন পুরুষ খোঁজা হচ্ছিল, কিন্তু ডাটাবেজে পুরুষের সংখ্যা আরো বিশ বছর আগে থেকেই শুন্য। নারীর সংখ্যাও তের হতে ধীরে ধীরে আজ শুন্যে পরিণত হল। আজ হতে পৃথিবীতে মানুষের রাজত্ব শেষ। শুরু হল অনুভূতিহীন একদল শ্রমিকের রাজত্ব। মানুষের হাতেগড়া রোবটই এখন এ পৃথিবীতে সর্বেসর্বা।

অনেক প্রাচীন আমলের কথা। তখন পৃথিবী ছিল সুজলা সুফলা। মানুষ কতই না সুখে শান্তিতে বসবাস করত সেখানে। হয়ত কোন বিলাসিতার সুযোগ ছিলনা তাদের, ছিলনা উন্নত যোগাযোগ কিংবা উৎপাদন ব্যবস্থা। সুচিকিৎসার অভাব ছিল কিন্তু প্রকৃতি মানুষকে আগলে রাখত নবজাতক শিশুর মত করে। ধীরে ধীরে মানুষ নিজেদের উন্নতি করতে লাগল। জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতি করতে করতে শীর্ষে পৌছে গেল। তারা যতই বিজ্ঞানে উন্নত হতে থাকল, তাদের মনুষ্যত্ব ততই ধীরে ধীরে কমতে লাগল। তারা নির্বিচারে তাদের মায়ের মত প্রকৃতিকে নষ্ট করল। গাছ কেটে সাফ করে ফেলল। পরিবহন আর ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের নামে বায়ুমন্ডলকে ধোঁয়া দিয়ে ছেয়ে দিল। উৎপাদনের নামে পানিতে বিষ মিশিয়ে দিল। সম্পদ-ক্ষমতার লোভ মেটাতে শান্তির নামে হত্যা করতে থাকল স্বজাতি মানুষকে। প্রকৃতিও নিষ্ঠূর হতে বাধ্য হল। হুমকি দিল এ মানুষের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে।

২০০৯ এর শেষের দিকে কোপেনহেগেনে বিরাট এক সম্মেলন হয়েছিল। সবার ধারনা ছিল, এবার বোধহয় পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব বাচানোর ব্যপারে কোন সমাধানে আসা যাবে। কিন্তু না, সে সম্মেলন পৃথিবীর ভবিষ্যত অনেকটাই নিশ্চিত ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তৃতীয় বিশ্বকে ঠকিয়ে উন্নত বিশ্ব নিজেরাই নিজেদের বিপদকে এগিয়ে নিয়ে এল। তৃতীয় বিশ্বকে হয়ত একটু আগেই পৃথিবী হতে নিশ্চিহ্ন হতে হয়েছে, কিন্তু উন্নত বিশ্বও বাঁচতে পারেনি প্রকৃতির প্রতিশোধের হাত থেকে। উন্নত বিশ্বও জানত তারাও প্রকৃতির কোপানলে পড়তে যাচ্ছে, তাই তারা নতুন পরিকল্পনা গ্রহন করে বাঁচার শেষ চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

প্রকৃতির প্রতিশোধ হতে বাঁচতে মানুষ প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বেশি বাড়িয়ে দিল। বাসগৃহের ভেতরের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রনের জন্য আরো আধুনিক বায়ুনিয়ন্ত্রন যন্ত্র নির্মান করা হল। বায়ু পরিশোধনের যন্ত্রও আবিষ্কার করা হল, যা গৃহের বায়ুকে পরিশোধিত করলেও, বাইরের বায়ুকে আরো বেশি মাত্রায় দূষিত করে। নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা আরো উন্নত ও সহজে ব্যবহারযোগ্য করা হল। সারা বিশ্বের সব মানুষের তথ্য একটা ডাটাবেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হল। সারা বিশ্বের মানুষকে নিয়ন্ত্রন করার জন্যে সেই ডাটাবেজের নিয়ন্ত্রন রাখল আমেরিকার সরকার। তারা সারা বিশ্বের সকল মানুষের কাজকর্ম এবং যে কোন সময়ের অবস্থান জানতে পারল মাউসের মাত্র একটা টিপের মাধ্যমে। ভার্চুয়াল অফিস ব্যবস্থা তৈরী করা হল। যার ফলে, মানুষ ঘরের বাইরে না গিয়েও তার অফিসের কাজকর্ম করতে পারে। ধীরে ধীরে অফিস আদালত সব বন্ধ হয়ে গেল, ভার্চুয়াল জগতের ভার্চুয়াল অফিসে নিয়মিত কার্যক্রম চলতে থাকল। পরিবহন ও অন্যান্য শ্রমের জন্য বিপুল পরিমান রোবট তৈরী করা হল। রোবট শ্রমিকরা দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে চালিয়ে নিতে থাকল।

২০৬০ সাল নাগাদ উন্নত বিশ্বের হাতে কয়েক কোটি রোবট আর ভার্চুয়াল অফিসিয়াল সিস্টেমের সুফল আসতে থাকল। ততদিনে পৃথিবীর আবহাওয়া সাধারন মানুষের বসবাসের অযোগ্যতায় পরিপূর্ন হল অনেকখানি। গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া উন্নত বিশ্বের খায়েশ মেটাতে গিয়ে প্রচন্ড বেড়ে গেল। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেল হুড়মুড় করে। দক্ষন আর উত্তর মেরুর বরফ গলে অর্ধেকে নেমে গেল। দক্ষিন এশিয়াসহ নিচু ভূমিগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেল। আন্ত:দেশীয় দন্দ্ব আর হিংসার কোপানলে পড়ে প্লাবিত দেশের মানুষ প্রতিবেশী দেশের কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়ে ডুবে মরল। আর যারা তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থান পেল, তাদেরকেও না খেয়ে মরতে হল। কৃষির উপর জোর কম দেয়ায়, উন্নত বিশ্ব ভূমিহীনদের জন্য তেমন কোন সাহায্যই করতে পারলনা।

উন্নত বিশ্বের নারীগন সন্তানগ্রহনে তেমন আগ্রহী নয়। অপরদিকে ভারত সহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মানুষ তাদের সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদেরকে এ প্রতিকূল পৃথিবীতে আসতে দিলনা। ফলে আর মাত্র একশ বছরের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে এল। এদিকে পরিবেশ বিপর্যয় কিন্তু থেমে থাকলনা। উন্নত বিশ্বের মানুষকে আরামে রাখতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উদ্গীরন বেড়েই চলল। আরো একশ বছরের মধ্যেই বায়ুমন্ডলে ওজোন স্তর বলে আর কিছুই থাকল না। অতিবেগুনী রশ্মী আর সূর্যের প্রলয়ংকরী বিভিন্ন আলো পৃথিবীকে আলোকিত করার পাশাপাশি অন্ধকারের ডোবায় নিক্ষেপ করল। বাইরে বেরুলেই ক্যন্সার এমন একটা অবস্থা তৈরী হল। যাদেরকে বাধ্য হয়ে ঘরের বাইরে যেতে হল, তাদের সবাইকেই ভয়াবহ এই রোগে আক্রান্ত হতে হল। কোটি কোটি মানুষ শুধু চামড়া ক্যন্সারেই মারা গেল। দক্ষিন আর উত্তর মেরুতে বরফ বলে কিছুই থাকলনা, ফলে প্লাবিত হল আরো অনেক ভূমি। এভাবেও ধ্বংশ হল অনেক জাতি। উন্নত বিশ্বের আরামের জন্য নিয়োজিত বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স বিলাস দ্রব্য উৎপাদন কারখানার বর্জ্যগুলো এতই ভয়ংকর ছিল তা মাটি এবং সাগর-নদীল পানির সাথে সাথে ভূগর্ভস্থ পানিকেও নষ্ট করে দিল। ফলে রোবট কৃষকের ফলানো ফসল এবং আধুনিক স্বয়ংক্রিয় জেলে জাহাজের ধরা মাছগুলোও বিষক্রিয়ার ফলে খাওয়ার অযোগ্য হয়ে গেল। আমেরিকার ডাটাবেজে যখন জীবিত মানুষ হিসেবে শুধু উন্নত বিশ্বের মানুষের তালিকা, তখন সে তালিকাও হঠাৎ করে খুব দ্রুত ছোট হতে লাগল। হাতেগোনা যে কয়জন বিজ্ঞানী বেচে ছিলেন তারা বিষক্রিয়া নিয়ন্ত্রনের যন্ত্র বানালেও, কিছুদিনের মধ্যেই ফসলের বিষক্রিয়ার মাত্রা এ যন্ত্রের ক্ষমতার বাইরে চলে গেল।

২২৫০ সাল। আমেরিকার ডাটাবেজে জীবিত মানুষের সংখ্যা মাত্র তের লক্ষ। এদের সবাইই আমেরিকা আর ইউরোপের সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারের লোকজন। আরেকটা ডাটাবেজে সারাবিশ্বে নিয়োজিত রোবটের তালিকা। এদের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিলেন পৃথিবী ভ্রমনে বের হবেন। পৃথিবী আজ ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে, এ অবস্থা হতে বাঁচবার কোন উপায় আছে কিনা তা তিনি সরেজমিনে দেখবেন। গত দুশ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম আমেরিকার কোন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউস হতে বেরুচ্ছেন। একটা সুনিয়ন্ত্রিত উড়োজাহাজে করে তিনি আকাশের অনেক নিচু হয়ে ধীরে ধীরে উড়ে পৃথিবী পর্যবেক্ষন করতে লাগলেন। ইউরোপ, আমেরিকা আর আফ্রিকার কিছু অংশ এখনো তলিয়ে যায়নি। অস্ট্রেলিয়া ছোট্ট একটা প্রবাল দ্বীপে পরিণত হয়ে টিকে থাকলেও সেখানে কোন মানুষ নেই। এন্টার্কটিকার দিকে যাওয়ার চিন্তা মাথায়ও আনলেন না মি: প্রেসিডেন্ট। আফ্রিকায় কেউই রোগবালাই জয় করে টিকে থাকতে পারেনি। সেখানকার সব স্থাপনা স্থবির হয়ে গেছে। প্রত্নতাত্নিক নিদর্শনে পরিণত হয়ে গেছে সবকিছুই। এখানে ওখানে মানুষের হাড় পড়ে আছে।

আমেরিকা আর ইউরোপকে দেখে মি: প্রেসিডেন্ট অনেকটাই স্বস্তিবোধ করলেন। সেখানে এখনো জীবনের ছায়া পাওয়া যায় ভেবে গর্বিত হলেন। তিনি দেখলেন আটলান্টিকে স্বয়ংক্রিয় অসংখ্য মাছধরা জাহাজ মাছ ধরে যাচ্ছে। জাহাজ ভরে গেলে তা ফিরে আসছে বন্দরে। বন্দরের স্বয়ংক্রিয় ক্রেন মেশিনগুলো সে মাছগুলোকে জাহাজ হতে আনলোড করছে অতিদ্রুততার সাথে। সে মাছগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত লরিগুলো বহন করে নিয়ে যাচ্ছে প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে। সেখানকার স্বয়ংক্রিয় রোবটগুলো সে মাছকে প্রক্রিয়াজাত করে পাঠিয়ে দিচ্ছে হিমাগারে। হিমাগারে নিয়োজিত রোবটগুলো অনলাইনে পাওয়া অর্ডারগুলোকে জায়গামত পাঠিয়ে দিচ্ছে ছোট্ট কাভার্ড ভ্যানে করে। অর্ডারের পরিমান উৎপাদনের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায়, উৎপাদিত মাছ সংরক্ষনের জন্যে নতুন নতুন হিমাগার তৈরী করা হচ্ছে। নির্মানকাজে নিয়োজিত অসংখ্য রোবট হিমাগারসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মানের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে নিরবে। অথচ এত উৎপাদনের আর কোন দরকার নাই। বিদ্যুত আর অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি ঠিক করার দায়িত্ব পালন করছে আরেকদল ইলেক্ট্রিশিয়ান রোবট। তারা গোটা জীবিত অঞ্চলসহ মৃত অঞ্চলেও দায়িত্ব পালন করছে নিরবে। তাদের বোঝার কোন ক্ষমতা নেই যে, মৃত অঞ্চলে এর আর কোন দরকার নেই। কৃষি হতে শুরু করে সব স্তরেই কাজ করে যাচ্ছে এমন প্রায় তিনকোটি রোবট। মি: প্রেসিডেন্ট

আদর্শ যুবসমাজ গঠনে মহানবী (স:) এর ভূমিকা

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সটির সীরাতুন্নবী (স:) পালন উপলক্ষ্যে আয়োজিত নির্ধারিত বক্তব্য প্রতিযোগীতায় উপস্থিত সম্মানিত শিক্ষক ও সহপাঠী বন্ধুরা, আসসালামু আলাইকুম। আজকের প্রতিযোগীতার বিষয় নির্ধারন করা হয়েছে “আদর্শ যুবসমাজ গঠনে মহানবী (স:) এর ভূমিকা”।

আজ থেকে প্রায় দেড় সহস্র বছর আগের আরব ছিল পুরোপুরি শাষনের অযোগ্য। তাদের সভ্যতা ছিল তৎকালীন সকল সভ্যতার তুলনায় বর্বর। পুরো আরব অসংখ্য গোত্রে গোত্রে বিভক্ত ছিল। এই গোত্রগুলো একে অপরের সাথে সারাবছরই যুদ্ধে লিপ্ত থাকত। একে অপরের উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে অকাতরে রক্ত ঝরাত। আর এসব যুদ্ধে সবচে বেশি হিংস্রতার এবং জিঘাংসার উদাহরন তৈরী করত ঐ সকল গোত্রের যুবকেরা। নারীরা সেসব যুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিলেও তারা পেছন থেকে অনুপ্রেরনা দিত। সমাজের কবি সাহিত্যিকরাও উত্তাল রক্তের যুবকদেরকে প্রতিশোধ গ্রহনের প্রতি বাসনাকে উস্কে দিত। আর এই যুদ্ধের জের ধরে নিষিদ্ধ কয়েকটি মাস ছাড়া বাকি সব সময়ই হত্যা ও সম্পদ বিনাস চলতে থাকত। শক্তিশালীদের হাতে প্রতিনিয়ত লুন্ঠিত হত দুর্বলের সম্পদ। মদ ও জুয়া ছিল যুবকসহ সকল বয়সের মানুষের নিত্য সঙ্গী। তৎকালীন সুপারপাওয়ার ইরান এবং রোমান সম্রাজ্য কখনোই এই উচ্ছৃংখল আরবদের শাষন করার দু:স্বপ্ন ভুলেও দেখতনা। তাদের মতে, আরবদের কাছ থেকে ভাল কিছুই আশা করা সম্ভব নয়।

সামান্য কারনেও যেই আরব গোত্রীয় কোন্দলে মুখর হয়ে যেত, যুবকের দল রক্তপিপাসু হয়ে যেত সেই আরবে ৫৭০ খ্রীস্টাব্দে জন্ম নিল এক শিশু। তাঁর নাম রাখা হল মুহম্মদ। তিনিই আমাদের প্রিয় রাসূলুল্লাহ হযরত মুহম্মদ (স)।

মুহম্মদ (স) এর জীবনকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে নবুওয়াত লাভের পূর্বের অংশ এবং অপরটি হচ্ছে নবুওয়াত লাভের পরের অংশ। আদর্শ যুবসমাজ গঠনে জন্য তাঁর জীবনের এ দুটি অংশেই তিনি ভূমিকা রেখে গিয়েছেন।

পরিশ্রমী মুহম্মদ (স)
নবুওয়াতের পূর্বের জীবনকে খতিয়ে দেখলে আমরা দেখতে পাই তিনি শৈশব থেকেই অত্যন্ত পরিশ্রমী জীবন যাপন করেছেন। দুধমা হালীমার কাছে থাকতে তিনি মাঠে মেষ চড়াতেন। চাচা আবু তালিবের কাছে অবস্থানকালেও তিনি মেষ চড়াতেন এবং চাচার ব্যবসায়ে সাহায্য করতেন। তিনি চাচার সাথে বানিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়ায়ও গিয়েছিলেন। আর যুবক বয়সে তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

সততা ও নিষ্ঠা
মুহম্মদ (স) এর সততা ও নিষ্ঠা এ দুয়ের সমন্বয় সেই আরব সমাজে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছিল। সেই আরব সমাজের মানুষ বেশিরভাগ সময়ই মিথ্যের মাধ্যমে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করত। ওজনে কম দেয়া, জিনিস পত্রে ভেজাল দেয়া, আমানত এর খেয়ানত করা ইত্যাদি সেখানকার ব্যবসায়ীসহ সকল মানুষের জন্যই নিয়মিত ব্যপারে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। অপরদিকে মুহম্মদ (স) সে সমাজে আমানতদারিতার ও সততার এক আলোকিত উদাহরন তৈরী করেছিলেন। এ জন্যে সকলে তাঁকে আল-আমীন বলে ডাকত এবং সবচে বেশি বিশ্বাস করত।

মানবতাপ্রেমের দৃষ্টান্ত
নবুওয়াত লাভের আগ থেকেই তাঁর মাঝে মানবতার প্রতি প্রেমের দৃষ্টান্ত দেখা যায়। আরবের যুবকেরা যখন প্রতিপক্ষ গোত্রের মানুষের রক্ত ঝরানোর উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করত, তখন মুহম্মদ (স) যুবক হয়েও তা না করে বরং যুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত তৈরীর চেষ্টা করেছেন। এজন্যে তিনি কিশোর বয়সেই সমবয়সীদের নিয়ে হিলফুল ফুযুল নামে একটি সংঘও গড়ে তুলেছিলেন । কাবা ঘরের হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে তৈরি হতে যাওয়া গোত্রীয় সংঘাত তিনি খুব সফলভাবে সমাধান করেছিলেন। তৎকালীন আরবে দাসপ্রথা চালু ছিল। দাসদের সাথে খুব দুর্ব্যবহার করা হত। অথচ মুহম্মদ (স) দাসদের সাথে খুব মধুর আচরন করতেন। তাঁর এক দাস যায়েদ বিন হারেস (রা) কে তিনি নিজের পালক পুত্র বলে গ্রহনও করেছিলেন।

নবুওয়াত পরবর্তী অবদান
মুহম্মদ (স) ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত লাভ করলেন। শান্তির বাহকে পরিণত হলেন আরবের এ যুবক। ধারাবাহিকভাবে শান্তির বানী পৌছে দিলেন সবার দ্বারে দ্বারে। প্রথমে মক্কার অল্প কজন তাঁর দাওয়াত গ্রহন করল। ইসলাম প্রচারের অপরাধেই আরবের সকলের চোখের মণি মুহম্মদ পরিণত হলেন চোখের কাটায়। একের পর এক নতুন নতুন অত্যাচার আসতে থাকল তাঁর এবং তাঁর অনুসারীদের উপর। অসীম ধৈর্য্য নিয়ে সকল অত্যাচার মাথা পেতে নিয়ে গুটিকয়েক মুসলিমকে নিয়ে তিনি তাঁর দাওয়াত চালিয়ে গেলেন। মদ-জুয়া আর রক্তে মাতাল আরবের যুবসমাজ পরিণত হল পৃথিবীর শান্তি প্রতিষ্ঠার সৈনিক হিসেবে। আওস-খাযরাজের চির সংঘর্ষের ভূমি ইয়াসরিবকে পরিণত করলেন শান্তির কেন্দ্রভূমি মদিনাতুল নববীতে। মক্কা বিজয়ের পর অত্যাচারী কাফেরদের তিনি ক্ষমা করে দিয়ে তৈরী করলেন বিজয়ীদের জন্য এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত।


আরবের যুবসমাজকে তিনি পরিবর্তন করে নিতে পেরেছিলেন। তিনি এমন এক যুব সমাজ তৈরী করেছিলেন যা সারা বিশ্বের যুবকদের জন্যই আজ এক আদর্শ। তিনি আবু বকর সিদ্দিক (রা), হযরত আলী (রা), ওমর (রা), ওসমান (রা) সহ অসংখ্য যুবককে শ্রেষ্ঠ্ মানুষে পরিণত করেছিলেন। শাষনের অযোগ্য আরবের যুবকদেরকে পরিণত করেছিলেন সারা বিশ্বের যোগ্য শাষকে।

আজকের যুবসমাজও ঘোর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। বিষাক্ত জিনিসগুলোর চাকচিক্য মরিচীকা হয়ে তাদেরকে ধীরে ধীরে ধ্বংশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের কর্মক্ষমতাকে প্রবাহিত করা হচ্ছে বিপথে। প্রভাবশালী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলো এখন প্রকাশ্যেই যুবকদেরকে আহবান করে এই বলে যে, “বন্ধু – আড্ডা আর গানে হারিয়ে যাও”। সত্যিই হারিয়ে যেতে বসেছে আজকের যুবসমাজ। এই যুবসমাজকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন প্রিয় রাসূল (স) এর শিক্ষার বাস্তব চর্চার। তিনি তাঁর পুরো জীবনে উদাহরনের মাধ্যমে যা যা শিখিয়েছেন সেগুলো হচ্ছে সততা, নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, পরিশ্রম, আমানতদারীতা, মানুষের প্রতি ভালবাসা এবং ধৈর্য ইত্যাদি সকল সৎ গুনাবলি। এ গুনাবলি অর্জনের জন্য তিনি দুটো জিনিস রেখে গেছেন। সেদুটো জিনিস হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহ। আমরা যুবকরা যদি এদুটো উৎস হতে যথাযথ জ্ঞানার্জন করে রাসুলুল্লাহ (স) এর সৎগুনাবলী গুলো অর্জন করতে পারি তবে আমরা আবারও পরিণত হতে পারব সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিতে।


ধন্যবাদ সবাইকে