Thursday, June 18, 2009

সাহেব আলীর ঘর... (১পর্ব)

সাহেব আলী ঘর বানাবেন। নিজের ঘর। তাই মনটা তার খুবই ভাল। ভাল মানে বেশ ভাল। আসলে অনেক ভাল। বুঝানো যাবে না তার মন সত্যিকার অর্থে কতখানি ভাল। ঘর, সাহেব আলির একটা স্বপ্নের বস্তু। নতুন, ঝকঝকে-তকতকে শক্ত-পোক্ত একটা ঘরের কথা সে অনেকদিন ধরে কল্পনা করেছে। অনেকদিন মানে সেও প্রায় ৩০-৩৫ বছরের লম্বা সময়। ভাবতে গেলে মনের চোখটা কেমন যেন ঝাপসা হয়ে যায়। আর চোখও কেমন ঝাপসা হয়ে যায়। পানিভরা চোখটা মুছে নিতে হয়। সাহেব আলী গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছে সে বহুদিন আগের কথা। তাদের গ্রামে তখন দূর্ভিক্ষ চলছিল। একইসাথে চলছিল নদীতে ভাঙনও। দূর্ভিক্ষে ওর মা মরে গিয়েছিল, বাপও প্রায় যায় আর একদিন হঠাৎই সর্বনাশা নদী ওদের বাড়িটা গিলে ফেলল। ছোট্ট ভিটে ছাড়া যদিও ওদের তেমন কিছু ছিল না, তারপরও সারাদিন এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে, কাজকর্ম শেষ করে ঐ নিজেদের ছোট্ট ঘরখানিতেই ছিল ওদের পরিবারের আনন্দের প্রবাহ। গন্ডগোলের দিন শেষ হয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হল, আর স্বাধীনচেতা নদী তাদের এই আনন্দ কেড়ে নিল। ঘর হারানোর সপ্তাহখানেক বাদেই সাহবে আলী হারালো তার প্রিয় বাপজান, স্নেহময়ী বড়বুবু আর স্নেহের ছোটভাইটাকে। মাতো আগেই গেছে। তারপর ১০ বছরের সাহেব আলী শহরের দিকে পা বাড়াল। লাল-নীল বাতির শক্তমনের মানুষদের শহরে এসেই আক্রান্ত হতে হল টাইফয়েডে। আল্লার সাহায্যেই কোন হৃদয়বান মানুষ সাহেব আলীকে হাসপাতালে দিয়ে এসেছিল ফুটপাত থেকে তুলে। টাইফয়েডে তার একটা হাত আর একটা পা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেলেও সে যাত্রায় প্রাণটা তার শরীরের সাথে রয়েই গেল।

পুরোনো কথা ভাবতে সাহেব আলীর ভাল লাগে না। অনেক কষ্টের স্মৃতিগুলো হাতড়াতে গেলে হয়রান লাগে তার। আর সে ঐ পুরোনো স্মৃতি আগলে রাখতে চায়না। কি হবে কষ্টের কথা ভেবে। আজ তার অনেক আনন্দের দিন। আজ তার নিজের একটা ঘর হবে। আজ তার অনেক আনন্দ। তবে আজ সারাদিন তাকে অনেক কিছু করতে হবে। ঘরের কাজ বেশ খানিকটা বাকি আছে। বাকি রসদ কিনে এনে সম্পুর্ন কাজ শেষ করতে হবে। পকেটে টাকাপয়সা যথেষ্ট পরিমান নিয়ে ছোট ছেলেকে সাথে নিয়ে রাস্তায় নামল সাহেব আলী। প্রথমে যেতে হবে বড় ছেলে আজম আলীর কাছে। বড় ছেলে রেলে চাকরী করে। তার কাছ থেকে কিছু টাকা পেলে হয়তো ঘরটা আরো মজবুত করে বানানো যাবে। তবে সাহেব আলীর এ ছেলেটার কাছ থেকে টাকা পাবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন। ছেলেটা বড় হয়ে কেমন জানি হয়ে গেছে। ছোট থাকতেই বাপমার কথা শুনতে পছন্দ করত না, আর রেলে চাকরী হবার পর বিয়ে করে বউ নিয়ে আলাদা থাকে। থাকেও অন্য শহরে। তবে ওর রেল প্রতিদিন দুবার ঢাকা আসে। সকাল আটটায় কমলাপুর রেল-স্টেশনে গেলে আজম আলীকে পাওয়া যায়। হেঁটে হেঁটেই যাবার সিদ্ধান্ত নিল সাহেব আলী। তার পিছন পিছন হাটছে তার ছোট ছেলে। ওর এ ছেলেটা খুব ভাল। বাপমার সাথে থাকে, বাপমার সেবাযত্ন করে। এই বয়সেই দেশের মানুষের উপকারে মন দিয়েছে সে। দেশের শিক্ষা উন্নয়নে ওর ভূমিকা কিন্তু খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ওর মত আরো অনেকের সাহায্যেই কাগজ কারখানা গুলো কম দামে কাঁচামাল পেয়ে থাকে। তৈরী করে কম খরচে কেনার মত কাগজ আর খাতা। সেই কাগজ আর খাতা দিয়ে কত শিশু পড়াশুনা করছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু দু:খের ব্যপার এই যে, ছোট ছেলে করম আলিকে সাহেব আলী পড়াশুনা করাতে পারেনি।

Thursday, June 4, 2009

মন্তব্য

বিরাট পোস্ট। পোস্টখানা হান্টার সাহেব যে উদ্দেশ্যে দি ইন্ডিয়ান মুসলিমস লিখেছিলেন সে উদ্দেশ্যে সেই দৃষ্টিকোন হতেই লেখা তাতে কোন সন্দেহ নাই।

আপনি বহুবিবাহকে ধর্মীয় আদলে বিকৃত যৌনাচার বলে উল্লেখ করেছেন। তবে আপনার দেয়া তথ্যে সুলেমানের যে হাজার খানেক বউ এবং দাসের কথা উল্লেখ করেছেন তা যদি নিছক শোনা কথা হয়ে থাকে তাহলে তো এ নিয়ে বিতর্কের কোন দরকার নাই। আর যদি সত্য হয়ে থাকে তবে এটাই সঠিক পদ্ধতি হওয়া উচিত। কেননা আরবের রীতিই ছিল বহু বিবাহ। সত্তর আশি বছরের আয়ু নিয়ে আসা ননমুসলিম আরবগন প্রায় হাজার খানেক স্ত্রী রাখতেন। আর হাজার বছর আয়ু নিয়ে সুলেমান শখানেক বিয়ে করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। পশ্চিমাগন যাদের মত করে আপনার পোস্ট তারা তো বিয়ে ছাড়াই প্রতি রাতে একজনকে নিয়ে বিছানায় যেতে পছন্দ করে। সেখানে রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর চারজন স্ত্রী কে হালাল করে আল্লাহ এত বেশি মাত্রায় বিয়ে করাকে হারাম করেছেন। এবং দেনমোহর (যা কিনা স্ত্রী নিজেই যত ইচ্ছা তত দাবী করতে এবং বিয়ের আগেই তা পরিশোধিত হিসেবে পেতে হয়) পদ্ধতি আগের ইচ্ছামত বিবাহের ধারাকে রোধ করেছে।

স্ত্রী ও দাসীর মধ্যে একটা সামান্য পার্থক্য রয়েছে। তা হল স্ত্রীকে দেনমোহর দেয়া হয় আর দাসীর মালিকানা এর পূর্ব মালিককে দাম পরিশোধের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে, এবং এর বিলুপ্তি ঘটিয়েছি আমরা মুসলমানরাই, দাসমুক্তির অনুশীলনের মাধ্যমে যা কিনা আমাদের ধর্মীয় আদেশ ছিল। তার বহু বছর পরও আমেরিকা, ইংল্যেন্ড এবং ফ্রান্স দাসপ্রথাকে জিইয়ে রেখেছিল। এবং তাদের সে সকল অমানুষিক কাহিনী আমরা সবাই জানি।

সূফীবাদ নামে আজকাল উল্টোপাল্টা সংজ্ঞায়ন হয়ে থাকে। সূফিবাদ এসেছে মুসলমানদের মদীনায় হিজরতের সময় হতে। যে সকল মুহাজির মসজিদে নববীর পাশে সূফফায় (খেজুরের পাতা দিয়ে কোন মতে বানানো ঘর) থাকতেন তাঁদের বলা হত "আসহাবে সূফফা" বা সূফী। বাংলাদেশে যারা ইসলাম প্রচারের জন্য এসে এরকম দরিদ্র অবস্থায় থেকে দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়েছেন, তাঁদের বলা হত সূফী। আধ্যাত্নিকতার সাথে ইসলামের সম্পর্ক যতটুকু ততটুকুই সম্পর্ক তাঁদের ছিল।

হাজী শরিয়তউল্লাহ, সৈয়দ আহমেদ বেরেলভীর সংগ্রামকে আপনি সময়োযগী ছিলনা বলে মন্তব্য করলেন। অথচ ব্রিটিষ বিরোধী আন্দোলনে তাঁদের অবদান এত বেশি ছিল যে, তাঁদের হঠাতে ব্রিটিষরা প্রায় কাবু হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা সীমান্তে ও সারাদেশে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। আর হিন্দুগন বিশেষ করে শিখগন স্বাধীনতা বিরোধী কাজে ব্রিটিষদের সহায়তা করেছিল। বিশেষ করে সৈয়দ বেরেলভীর নের্তৃত্ব এতটাই প্রভাব সৃষ্টি করেছে এ উপমহাদেশে, এরকম প্রতিরোধের সামনে আর যেন পড়তে না হয় তাই হান্টার সাহেবগন গবেষনা করে "দি ইন্ডিয়ান মুসলিমস" নামক গ্রন্থটি দুই খন্ডে প্রকাশ করেছিলেন।

বাংলাদেশে আগ্রাসনকারী পাকিস্তানী, ইরাকে আমেরিকানগন, কাশ্মীরে হিন্দুরা যুদ্ধে হাতের কাছে পাওয়া নারীদের ধর্ষন করেছে।

মুসলিমগন তাঁদের বিজিতদের কন্যাদের বিবাহের মাধ্যমে নিরাপত্তা ও সম্মান দান করেছে।

আমেরিকার মত দেশে তাঁদের নারীগন একা অন্ধকারে হাটতে সক্ষম নয়। তাঁদের সভ্য পুরুষরা কিছুতেই একা পাওয়া নারীর স্বাদ ভোগ করা ত্যাগ করতে আগ্রহী হয়না। এমনকি সেখানে বাপের হাতে কন্যার এবং ভাইয়ের হাতে বোনের ধর্ষিত হবারও নজির রয়েছে।

অপরদিকে রাসূল (সা) এমন একটি সমাজ উপহার দিয়েছিলেন, যেমনটি তিনি ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন যে, একজন নারী তার বাহন নিয়ে নিশ্চিন্তে সান'আ হতে হাদরামাউত পর্যন্ত ভ্রমন করতে পারবে।